নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কবিতার প্রতি ভালবাসায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ- কবিতার বিষ কামড়ে তাড়িত একজন শ্রাবণ মুদ্রিত ভেজা কাক- যে ঘুমিয়ে পড়া চেতনার দরজায় কাঠঠোকরার মত ঠকঠক কড়া নাড়ে ।

অনিন্দ্য অন্তর অপু (অঅঅ)

মাঝে মাঝে আমার মধ্যে একটা ভূত চেপে বসে। সেই ভূতটা আমায় দিয়ে কিছু বলিয়ে নিতে চায়। আমার ভিতরে আলোড়ন তুলে আমায় তোলপাড় করে ফেলে। ভূতটা কিছুতেই বুঝতে চায়না আমার ক্ষমতা নেই যে আমি আমার ভিতরের “আমি”টাকে শব্দ দিয়ে বাইরে বের করে আনব। তবু চেষ্টা করি। ইদানিং আবিষ্কার করলাম সেই ভূতটা আর কেউ নয়। আমার বিবেক, আমার মনুষ্যত্ববোধ।আমি এখানে অন্য কিছু বলতে এসেছি। ঠিক অন্যরকম কিছু যা আমাদের বিবেককে, আমাদের মনুষ্যত্ববোধকে একটু হলেও নাড়া দেবে। আমার লেখাগুলো আমার ভিতরের সেই ভূতের গল্প।আমার মধ্যে দুইটা “আমি”র বাস। একটা এই আমি, সুজন সরকার। যে আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মত ভাবে, স্বপ্ন দেখে। আর একটা আমার অন্তর। অনিন্দ্য অন্তর অপু। যে আত্মকেন্দ্রিকতার দেয়াল ভেঙ্গে পৃথিবীটাকে অন্য চোখে দেখে, বদলে দেয়ার স্বপ্ন দেখে প্রচলিত সমাজ, প্রচলিত সব বস্তাগলা পচা নিয়ম নীতির। অপেক্ষা করছি এমন একদিনের যেদিন আমার অন্তর যে স্বপ্ন দেখে, এরকম স্বপ্ন সেদিন দেখবে অনেকেই। সেদিন সত্যি পৃথিবী বদলে যাবে।▓▒░▒▓【অনিন্দ্য】▓▒░░▒▓【 অন্তর 】▓▒░░▒▓【 অপু 】▓▒░▓

অনিন্দ্য অন্তর অপু (অঅঅ) › বিস্তারিত পোস্টঃ

এক নুড়ি পাথরকে "সরি"

৩০ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ৮:৪২




দিগন্ত রেখা ছাড়িয়ে শৈশব পেরুনো সূর্য্যটা কৈশোরে পদার্পণ করেছে মাত্র । সূর্য্যদেবের শৈশবের কোমলতা হ্রাস পেয়ে ক্রমশ কঠোর হয়ে উঠছিল । গায়ের উপর মিষ্টি রোদ যেন জেঁকে বসেছে ।

সমুদ্রপাড়ের খুপচির মত দোকানগুলো মিনি বাসরঘর সাজিয়ে অপেক্ষা করছে । সামনে নিম্ন মানের ফুচকা, চটপটি দিয়ে সাজানো- ভেতরে চারপাশ চাদর দিয়ে ঘেরা কেবিন । এইসব খুপচি ঘরের ছেলে গুলো মাঝে মাঝে এসেই আমাদের পথ রোধ করছিল । লোভনীয় বিজ্ঞাপনে ওদের তুলনা নেই । “মামা আসেন- ভেতরে কেবিন আছে; সিট ঠিক করে দিমুনে- যেভাবে চান......।।”

অনিন্দিতাকে কখনও কেবিনে নেয়া যায় নি । ওর ঝাঁঝালো কণ্ঠ রুদ্ধ করে রাখে আমার যৌবনের সব বাউন্ডুলেপনা । “মশারির মত ছোট্ট কেবিনে দম বন্ধ হয়ে আসে মুহুর্তগুলো...... ওসব পরে হবে । তার চেয়ে চল ঐ পাথরে বসে সমুদ্র দেখি- জীবনের তৃষ্ণা মেটাই রুপালি জলে; সমুদ্রে গর্জনের সাথে পাল্লা দিয়ে বলি- তোকে বড্ড ভালবাসি ।”

আমি আর অনিন্দিতা বসে আছি পাশাপাশি । ওর পদ্ম পা পাথরে এলানো...। মাঝে মাঝে সমুদের ঢেউ এসে চুমু খেয়ে যায় ওর পায়ে । অনিন্দিতার স্বপ্নীল নীল চোখে আমি আর একটি সমুদ্র দেখি । আমার সামনেই যেন দু’টো সমুদ্র- একটি বিধাতার সৃষ্টি নারী আর একটু ঝিনুক রহস্যময় জলধি; শুষ্ক পৃথিবীর জলজ আঁধার । পৃথিবীর অদ্ভুত দু’টি অপার রহস্যের মুখোমুখি দাড়িয়ে আমি যেন নিজেকে হারিয়ে ফেলি ।

“দাদা, একটা চিপস নাও না ।” একটা টোকাইয়ের ডাকে আমার তন্ময় ভাঙে । আট বছরের ছেলে, মলিন ছেড়া একটা জামা গায়ে । এক ঝুলিতে কিছু পটেটো চিপস, অন্য ঝোলায় ছেঁড়া পুরানো কাগজ, কুড়ানো প্লাস্টিক বোতল ।

“এক প্যাকেট চিপস নাও ।” চিপস খেতে ইচ্ছে করছিল না । ওকে জানানোর পরও বলল- “ভালো চিপস, খেলেই বুঝবে; একটা নাও না দাদা ।”

ছেলেটিকে দেখে মায়া হল । ভেতরের কোমল স্বত্বা যেকোন ভাবে ছেলেটিকে সাহায্য করার তাগিদ দিল । আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম, “এক প্যাকেট চিপস বিক্রি করলে তোমার কত লাভ হয়?”

ছেলেটি বলল, “তিন টাকা ।”

আমি মানিব্যাগ থেকে পাঁচ টাকার একটা নোট বের করে বললাম, “চিপস তো খেতে ইচ্ছে করছে না; তুমি বরং এটা রাখ ।”

ছেলেটি আমায় আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে উল্টো পথে হাঁটা শুরু করল । আমি আর অনিন্দিতা অবাক হয়ে ওর চলে যাওয়া দেখছিলাম । অনিন্দিতা তাড়া করে ডেকে উঠল “এই ছেলে...... চিপস দিয়ে যাও, আমি চিপস কিনব ।” ছেলেটি ফিরল না ।

অনিন্দিতা আবার হাই ডেকে বলল, “এই ছেলে, দুই প্যাকেট কিনব ।” ছেলেটি ফিরল না ।

আমার দেয়া ভিক্ষা সগর্বে প্রত্যাখ্যান করে মলিন ছেঁড়া কাপড়ে জীবনের রাজপুত্র পথ আগাতে থাকে । ওর অহংকারের চরণে যেন প্রণাম জানাল আমার যাবতীয় করুণা ।

অথচ একটু অণুগ্রহের জন্য দিনের পর দিন হাত পেতে বসে থাকে টাই- স্যুট পড়া ভিক্ষুকের দল । ঘুষ লাগবে, যৌতুক লাগবে, একটু মামাগিরি লাগবে, একটা ভোট লাগবে আর একবার চুরি করার অনুমতির জন্য । কি নির্লজ বিষমাখা তৈলাক্ত হাসি আমায় প্রতিমূহুর্তে কলুষিত করে ফেলে । আর একটা প্রত্যাখ্যান- এক অহংকারী বালকের সতেজ প্রতিবাদ যেন আমায় জীবনের আর এক রূপ চিনিয়ে দিয়ে গেল- যেখানে বেঁচে থাকাটা সম্মানের, বেঁচে থাকাটা গৌরবের । অর্থই জীবনের একমাত্র সুখ নয় ।

ফেরার পথেই দেখা হয়ে গেল ছেলেটির সাথে । ওর কাঁধে হাত রেখে বললাম, “সরি ।” ছেলেটি হাসল । ওর এক চিলতে হাসি যেন আমার বুকে চেপে বসা পাথরটা এক ফুঁৎকারে বিলীন করে দিল ।

দুনিয়াতে কোন কোন ক্ষুদ্র নুড়ি পাথরও পাহাড় সমান উচ্চতার অধিকার রাখে ।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ৮:৫৮

শায়মা বলেছেন: সেই পিচ্চিটার জন্য ভালোবাসা!!!!! :)

৩০ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ৯:০৩

অনিন্দ্য অন্তর অপু (অঅঅ) বলেছেন: হুম । ওর কাছ থেকে ভালো একটা শিক্ষা পেয়েছিলাম ।

২| ৩০ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ৯:১২

নোমান প্রধান বলেছেন: আত্মমর্যাদার এই জ্ঞানটা কেনো জানি বই পুস্তকে পাওয়া যায় না। পথে ঘাটে কুড়িয়ে নিতে হয়। লেখনি সুন্দর

৩০ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ৯:২১

অনিন্দ্য অন্তর অপু (অঅঅ) বলেছেন: কখনও কখনও অনেক ক্ষুদ্র বৃহৎ জ্ঞানের অধিকারী । ওদেরকে সম্মান জানাতে পারাও গর্বের । ধন্যবাদ

৩| ০১ লা আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৩:৩৭

আপনার আপন বলেছেন: SMART BOY

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.