![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মাঝে মাঝে আমার খুব ইচ্ছে হয় চারোদিকে শুধু হাসিমুখ দেখতে... ঘুম থেকে উঠে পূর্নিমা হোটেলে নাস্তা খেতে গিয়ে দেখবো 'গ্লাস বয়-ম্যাসিয়ার, ক্যাশিয়ার, খদ্দের' সবাই হাসছে... হাসছে রাস্তার অচেনা পথচারীরা... চা খেতে মোশারফ মামার টং দোকানে গিয়ে দেখবো সবাই হাসছে... হাসছে রিকশাওয়ালারা, বাস কিংবা প্রাইভেটকার চালকরা... হাসছে হকাররা... হাসছে গার্মেন্টস্ শ্রমিকরা... হাসছে স্কুলের ক্ষুদে শিক্ষার্থী থেকে ভার্সিটির বুদ্ধিজীবি টাইপের গম্ভীর ছেলেটাও! হাসছে পিঠা বিক্রেতা ময়না বানু... হাসছে নির্মান শ্রমিক জালাল মিয়া... হাসছে টোকাই শফিক... হাসছে ফুলওয়ালী কুসুম! আহারে! চারোদিকে কি দারুন প্রানবন্ত সব হাসিমুখ আর হাসিমুখ... ইট,কাঠ,কংক্রিটের এই শহরের রাস্তা-ঘাটে মলিন মুখ দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে গেছি! যদি কোনদিন সত্যি সত্যি এই রকম হাসিমুখ দেখতে পেতাম তবে কেমন হতো কে জানে... নিশ্চয় ভয়ংঙ্কর আনন্দময় কিছু একটা হয়ে যেতো! একদম চোখ ভিজে যাবার মত আনন্দময়...
হেদায়েত আলীর জন্ম হয়েছে বাঁশ দিয়ে ঢেস দেওয়া ভাঙ্গা কুঁড়ে ঘরে। অভাব-অনটনের সংসারে বই-খাতা বিলাসিতা তবু আধ পেটে আর ছেঁড়া শার্টে হেদায়েত আলী মেট্রিক পাশ করেছিলেন। জীবিকার প্রয়োজনে তিনি ঢাকায় এসেছিলেন সেই আশির দশকে। সেই থেকে আজ অবদি এই বিলাসী নগরের পিচঢালা রাস্তার সাথে তাঁর গভীর সখ্যতা। কেননা হেঁটে হেঁটে অফিসে আসা কিংবা ফেরার দরুন কিছু টাকা সুখ হয়ে বেঁচে যায়!
গত ২৫ বছরে তিনি রাজনীতির বহুরূপী হিংস্রতা দেখেছেন। বড় আশা নিয়ে চার চারবার ভোট দিয়েছেন। এই চারবারই তিনি একটাই স্বপ্ন দেখেছিলেন। না হেদায়েত আলী কোটি কোটি টাকা কিংবা প্রাডো ল্যান্ড ক্রুজার অথবা বারিধারা-গুলশানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ফ্ল্যাটের স্বপ্ন দেখেননি। হেদায়েত আলীর স্বপ্নটা ছিলো ক্ষমতায় আসবে যারা তারা এই দেশটাকে ভালোবাসবে ঠিক মায়ের মত। রাষ্ট্র বদলাবে, বদলাবে খেটে-খাওয়া মানুষের ঘামে ভেজা জীবন। কিন্তু হেদায়েত আলির স্বপ্ন পুড়েছে চারবারই... অবশেষে হেদায়েত আলী জেনেছেন রাজনীতিবিদরা কথা রাখতে জানে না!
গত কয়েকদিন এরশাদের আচরনে হেদায়েত আলী আবার স্বপ্ন দেখছিলেন। এবার এরশাদ কঠোর হবেন। সব দল ভোটে আসবে। তিনি ভোটটা দেবেন ''বদলে'' যাওয়া এরশাদকে। মনে মনে হেয়ায়েত আলী বড় লজ্জ্বা পান। কতবার তিনি এরশাদকে বেহায়া বলে গালি দিয়েছেন। ছিঃ!
কিন্তু আজ? হেদায়েত আলী সেই পুরনো নির্লজ্জ্ব, ঘৃনিত এরশাদকেই দেখতে পান। হেদায়েত আলী ভেবে অবাক হোন- স্বপ্ন দেখতে তো পয়সা লাগে না কিন্তু স্বপ্ন পোড়ার দহন এতো তীব্র! এতো ভয়াবহ!
বাংলা মোটরের অফিস থেকে হাঁটতে হাঁটতেই শেষ বিকেলে হেদায়েত আলী সোরওয়ার্দী উদ্যানে এসে একটা বেঞ্চে বসে পড়েন। প্রায় পঞ্চাশ বছর বয়সী এই মানুষটাকে আজ বড় অসহায় লাগে। একদিকে চেতনা ব্যবসায়ী অন্যদিকে ৭১ এর ঘাতকদের আশ্রয় দাতা, আরেক পাশে এরশাদের মত মিথ্যুক অন্য পাশে বামপন্হী ভন্ডের দল... হেদায়েত আলী আবার স্বপ্ন দেখতে চান কিন্তু তিনি কোন আশা দেখতে পান না। মাঝ বয়সী হেদায়েত আলীর মাথাটা ঘুরে ওঠে। নিজেকে হেদায়েত আলীর একজন হেরে যাওয়া মানুষ বলে মনে হয়। বুকের ভেতরটা কেমন জানি শূন্য শূন্য লাগে।
সন্ধ্যার আকাশে বিশাল চাঁদ। সেই চাঁদের আলোয় হেদায়েত আলী পার্কের বেঞ্চটায় অসহায় ভাবে বসে থাকেন। চাঁদের আলো তাঁর শরীরে উপচে পড়ছে। অথচ হেদায়েত আলী টের পান না তাঁর চশমার কাঁচগুলো যে ঘোলা হয়ে গেছে! হেদায়েত আলী কাঁদছেন। কাঁদছেন একজন স্বপ্নপোড়া হেরে যাওয়া মানুষ। কে জানে হয়তো এই কান্নার সাক্ষী হতেই দ্বিগুন হয়ে যায় চাঁদের আলো!
[email protected]
২১ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৩:২৪
আরাফাত হিমু বলেছেন: আমরা এখন আমাদের দীর্ঘশ্বাসগুলোর মুক্তির আপেক্ষায় অপেক্ষমান... একদিন ভোর হবে। কবে কে জানে! বিনীত ধন্যবাদ দাদা।
২| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৩:২২
পরিবেশ বন্ধু বলেছেন: অনন্য সুন্দর
৩| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৩:২৫
আরাফাত হিমু বলেছেন: কৃতজ্ঞতা দাদা ভাই...
৪| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৩:২৭
পথহারা নাবিক বলেছেন: একটু প্রেম ভালোবাসা দিতে পারতেন তা না দিয়া চাচারেই দিলেন। যাই হোক সুন্দর হইছে!
৫| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৩:৩০
আরাফাত হিমু বলেছেন: আজ থেকে শুরু হলো সামুতে আমার পথচলা। কথা হবে প্রেম ভালোবাসা আর বিদ্রোহে। ভালো থাকুন প্রিয় নাবিক।
৬| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ৭:৫২
মাসুম আহমদ ১৪ বলেছেন: হেদায়েত আলীর মত আরো অনেকে স্বপ্ন দেখতে চান কিন্তু কোন আশা দেখতে পান না !
২১ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৪৬
আরাফাত হিমু বলেছেন: এরপর একদিন পঞ্চমীর চাঁদ ডুবে যাবে মরে যাবে আমাদের স্বপ্নগুলো। আহা জীবন তুমি দুঃখ করোনা। ভালো থাকবেন মাসুম দাদা।
৭| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:১০
মশিকুর বলেছেন:
আবার এমনও হতে পারে "এবার তার স্বপ্নপুড়বে দ্বিগুণ হারে, তাই দ্বিগুন হয়ে যায় চাঁদের আলো!" এখন পর্যন্ত অন্তত তাই মনে হচ্ছে।
ভালো থাকবেন।।
২১ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৪৪
আরাফাত হিমু বলেছেন: হুম এমনো হতে পারে... জীবন আজ হেদায়েত আলীদের বড় বেশী কঠিন হয়ে গেছে। বিনীত ধন্যবাদ দাদা।
৮| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:০০
স্বপনচারিণী বলেছেন: স্বপ্ন,স্বপ্নই থেকে যায়। থেকে যাবে। সামনে শুধুই হতাশা।
২১ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৪৯
আরাফাত হিমু বলেছেন: তবু জেনে রাখবেন একদিন ঠিকই ভোর হবে। বদলে যাবে সব কিছু। আমরা আবার স্বপ্ন দেখবো। অসীম ধন্যবাদ স্বপ্নচারিনী।
©somewhere in net ltd.
১|
২১ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৩:১৫
খেয়া ঘাট বলেছেন: ভালো লাগলো গল্পটা। দীর্ঘশ্বাসের গল্প।