নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ইদানীং আমীর আলীর একটা বদভ্যাস হয়েছে। মাঝে মাঝে রাতবিরাতে শহরময় ঘুরে বেরান তিনি। আর এই বদভ্যাসটা হয়েছে গাড়ি কেনার পর থেকে। সম্প্রতি একটি সেকেন্ড হ্যান্ড মতান্তরে থার্ড বা ফোর্থ হ্যান্ড টয়োটা করোলা হান্ড্রেড-টেন গাড়ি কিনেছেন। নিম্ন মধ্যবিত্ত আয়ের একজন মানুষের পক্ষে গাড়ি কেনাটা খুব একটা সহজ না। দীর্ঘ প্রায় ছাব্বিশ বছর ধরে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে হিসাব রক্ষকের চাকরি করছেন। কোনো প্রমোশনও নেই, কোনো ডিমোশনও নেই। বছর বছর ইনক্রিমেন্টের নামে সামান্য কিছু বেতন বাড়ে তাতে ক্রমবর্ধমান খরচের বাজারে খুব একটা লাভ হয় না। ফলে জমানো টাকার পরিমাণও তেমন একটা বাড়ে না। বরং ছেলেমেয়ের পড়াশোনা বাবদ খরচ বাড়ে। এরকম একটা সময়ে তাঁর সহকর্মী মোবারক সাহেব গাড়ি কেনার পরামর্শ দেন। মোবারক সাহেব দুটি গাড়ি রেন্ট-এ-কার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ভাড়া দিয়েছেন। প্রতিদিন হয়তো ভাড়া হয় না, তবুও খরচাপাতি বাদে গাড়ি-প্রতি মাসে প্রায় হাজার পঁচিশেক টাকা থাকে। মোবারক সাহেব প্রথম বছর একটি গাড়ি কিনে ব্যবসা শুরু করেন এবং পরের বছর দ্বিতীয় গাড়িটি কিনেন। ব্যবসাটা হয়তো ভালোই রপ্ত করেছেন তবে তৃতীয় গাড়িটি তিনি নিজে কিনছেন না কেন- এ প্রশ্নটা আমীর আলীর মাথায় আসেনি। তিনি প্রায়ই আমীর আলীকে গাড়ি কেনা ও ভাড়া দেয়ার বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করেন। আমীর আলী দীর্ঘদিন সময় নেন ভাবার জন্য যদিও তাঁর জমানো টাকার পরিমাণ খুব বেশি নয় যা দিয়ে গাড়ি কেনা সম্ভব। এই সমস্যারও সমাধান দেন মোবারক সাহেব। অফিসের প্রভিডেন্ড ফান্ড থেকে দুই বছরের কিস্তিতে ঋণ নেবার কথা বলেন তিনি। তারপর প্রতিমাসে গাড়ির আয় থেকে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করার পরামর্শ দেন। সমাধানটা আমীর আলীর ভালো লাগে। হয়তো গাড়ি কেনার সুপ্ত একটা বাসনা তাঁর মধ্যে ছিল। ছেলেবেলার কথা মনে পড়ে। গ্রামের কাঁচা রাস্তায় ধুলা উড়িয়ে একটা লাল গাড়ি ছুটে যেত সরকার বাড়িতে। দূর থেকে সে গাড়িকে দেখতে গ্রামের বাচ্চা কাচ্চারা পেছন পেছন ছুটতো। খুব কাছ থেকে গাড়ি দেখার সুযোগ হলেও কখনো ছুঁয়ে দেখতে পারতো না তারা। সরকার বাড়ির টেকো বুড়োটা সবাইকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিত। আমীর আলীও সে দলেরি একজন ছিলেন। তাই হয়তো ছোটবেলা থেকেই নিজের গাড়ি হবে- এমন একটা অবাস্তব ভাবনা তাঁর ছিল। তবে যতবারই তিনি সিদ্ধান্ত নেন গাড়ি কিনবেন ততবারই একটা না একটা সমস্যা চলে আসে। বিশেষ করে মোবারক সাহেবের গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত ঘটনাবলী সিদ্ধান্তের ওপর প্রভাব ফেলে। যেমন, একবার তিনি যখন সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেললেন গাড়ি কিনবেন, ঠিক তখনই আবিষ্কার করলেন মোবারক সাহেবের প্রায় বিশ্বস্ত ড্রাইভার গাড়ির নতুন চারটা চাকা বেচে দিয়ে পুরানো চাকা লাগিয়ে ঘরে ফিরেছে কিংবা লোকাল বাস পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে ব্যাকডালার বিশেষ ক্ষতি করেছে যা মেরামত করতে বড় অংকের টাকা গচ্চা দিতে হচ্ছে। এরকম কিছু ঘটনা-দুর্ঘটনা থেকে ভালো বিশ্বস্ত একটা ড্রাইভারের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন তিনি যদিও শেষ পর্যন্ত মোবারক সাহেব এ সমস্যারও সমাধান দেন। ড্রাইভারের খোঁজ দিলেন। মামুন নামের ছোকড়াটি কম বয়সী হলেও হাত ভালো, মাথা ঠাণ্ডা। মামুনকে দেখে আমীর আলীর মনে হলো বয়স কোনোভাবে হয়তো আঠারো পেরিয়েছে! পরে অবশ্য লাইসেন্স দেখে চব্বিশ বছর নিশ্চিত হয়েছেন। কাজেই গাড়ি কিনতে আর কোনো বাঁধাই থাকলো না। তবে পরিবারের কারো সাথে এ বিষয়ে তিনি আলাপ করেননি। একেবারে গাড়ি কিনে বাসার সামনে নিয়ে গিয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছেন। ছেলেমেয়ে সারপ্রাইজ গিফট ভেবে খুব খুশি হলেও তাঁর স্ত্রী পারভীন আক্তার খানিকটা মন খারাপ করে বলেন, ‘তুমি আমাক একবার বইল্লেও পারতা!’ আমীর আলী এরকম অভিমানসূচক বাক্যকে খুব এক পাত্তা দেন না। মেয়েছেলের এসব অভিমানকে কখনো পাত্তা দিতে নেই। রাত বিরাতে গাড়ি নিয়ে ঘুরতে বের হওয়ার বিষয়টা নিয়ে স্ত্রীর আপত্তিকে যেমনটা তিনি পাত্তা দেন না। স্ত্রীর অভিযোগ থাকলেও মামুন রাত বিরাতে ঘোরার ব্যাপারে বিশেষ উৎসাহ বোধ করে এবং এটা যে ওর দৈনন্দিন ডিউটির বাইরে সেটা বেমালুম ভুলে যায়।
মাঝে মাঝে রাতের ঢাকা আর দিনের ঢাকার মধ্যে আকাশ জমিন পার্থক্য মনে হয় আমীর আলীর। সারাদিনের ব্যস্ততা আর কোলাহলময় জীবন খুবই বিরক্তিকর হয়ে ওঠে। রাতের শহরে খানিকটা আশ্রয় খোঁজেন, নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করেন যদিও কোলাহলমুক্ত রাতের শহরটা লাল নীল আলোয় ভরে থাকলেও কেমন যেন একটা বিষন্নতা কাজ করে। আকাশের দিকে তাকালেই আর ভালো লাগে না তাঁর। ধূলিকণাময় একটা আবরণ কী অদ্ভুদভাবেই না শহরটাকে ঘিরে রেখেছে! অথচ গ্রামের আকাশে যে সংখ্যক তারার উপস্থিত দেখা যায়, তার অর্ধেকও যদি ঢাকার আকাশে দেখা দিত তাহলে হয়তো এতোটা বিষন্নতা বিরাজ করতো না। ফুটপাথে রাত্রিযাপন করা মানুষগুলোকে মনে হয় অন্য কোনো গ্রহ থেকে আসা প্রাণি। মাঝে মাঝে রাস্তায় নেমে পড়তে ইচ্ছা করে। ছেলেবেলায় শোনা বাগদাদের খলিফা হারুন-ওর-রশীদের কাহিনি মনে পড়ে, যিনি রাতবিরাতে ছদ্মবেশ ধারণ করে বেরিয়ে পড়তেন প্রজাদের সুখ দুঃখ দেখার জন্য। যে রাতের গল্পটা মায়ের মুখে বারবার শুনেছিলেন তিনি, সে রাতে পুত্র মুহতাসীমকে সাথে নিয়ে নৈশ অভিযানে বেরিয়েছিলেন ছদ্মবেশী খলিফা। পথে যেতে যেতে হঠাৎ কান্নার শব্দ শুনতে পান তাঁরা। শব্দের উৎপত্তিস্থলে পৌঁছে খানিকটা আড়ালে দাঁড়িয়ে দেখেন যে, এক মহিলা চুলোর নিভু নিভু আগুনে হাঁড়ি চাপিয়ে কিছু একটা রাঁধছেন আর ওঁর পাশে দুটি শিশু ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। মহিলা মাঝে মাঝেই জানিয়ে দিচ্ছেন যে কিছুক্ষণের মধ্যেই রান্না শেষ হবে আর তারপর ওরা খেতে পারবে। সময় যায় অথচ রান্না শেষ হয় না। শিশুদুটির কান্না বাড়তেই থাকে। ছদ্মবেশী খলিফা এগিয়ে যান মহিলার দিকে এবং শিশুদুটির কান্নার কারণ জানতে চান। তখন মহিলা জানান যে, তিনি প্রকৃতপক্ষে কিছুই রান্না করছেন না, চুলোয় হাঁড়িতে কয়েকটি পাথর সিদ্ধ করছেন যেন বাচ্চারা মনে করে- খাবার রান্না হচ্ছে। কারণ সেদিন তিনি ওদের জন্য কোনো খাবারই সংগ্রহ করতে পারেননি, অথচ সেকথা ওদের তিনি বলতেও পারছেন না। বাচ্চাদের কাঁদতে কাঁদতে এক ঘুমিয়ে যাবার অপেক্ষায় আছেন তিনি। তখন খলিফা পুত্র মুহতাসীম নিজ কাঁধে করে মহিলা ও শিশুদ্বয়ের জন্য খাবার বয়ে আনেন। এ গল্পটা শুনে প্রায়ই মনে হতো কেউ হয়তো এগিয়ে এসে তাদের সাহায্য করবে যদিও ঐ পরিবারের থেকে ওঁদের অবস্থা তুলনামূলক ভালো ছিল, অন্তত নিয়মিত দুইবেলা রান্না হতো যদিও একটা বিষয় দুই পরিবারে খুব মিল ছিল আর তা হলো উভয় ক্ষেত্রেই বাবা ছিলেন না। প্রথমক্ষেত্রে বাবা যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন আর দ্বিতীয়ক্ষেত্রে বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করে প্রথম পরিবারকে ত্যাগ করে চলে গিয়েছিলেন। আমীর আলীর মা অবশ্য দ্বিতীয় বিয়ে করেননি বরং এ-বাড়ি ও-বাড়ি কাজ করেছেন যতদিন পর্যন্ত ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রমের মাঠকর্মীরা ওদের জন্য বিশেষ ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবস্থা না করে। কাজেই বেড়ে ওঠাটা খুব একটা সুখকর ছিল না আমীর আলীর জন্য যদিও প্রাইমারি স্কুল পেরোনোর পর টুকটাক ফাই-ফরমাশ খাটা আর তারও কয়েক বছর পরে গায়েগতরে খেটে সময় পার করেছেন। এরপর হঠাৎই তিনদিনের জ্বরে মা মারা গেলে দুঃসর্ম্পকের এক আত্মীয় তাঁকে ঢাকা নিয়ে আসে এবং বড়ো এক জুতার দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজে লাগিয়ে দেন। শুধুমাত্র নিজ চেষ্টায় সেখান থেকে ম্যাট্রিক ও পরবর্তীতে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন আমীর আলী। অতীতের এসব ভাবনায় মাঝে মাঝেই ডুবে যান তিনি। শহুরে রাতের আকাশে গ্রামের তারা খোঁজেন কিংবা হারিয়ে যাওয়া মা’কে খোঁজেন তারার বেশে।
ফার্মগেটের ফুট ওভারব্রিজগুলো পেরিয়ে গাড়ি বিজয় স্মরণীর দিকে এগিয়ে যেতে থাকে, যেখানে দিনের বেলায় গোদরোগে আক্রান্ত একদল প্রফেশনাল ফকির ভিক্ষা করে কিংবা হকাররা রঙ্গবেরঙ্গের চাইনিজ পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসে। ফুটপাথও এড়ায় না তাঁর চোখে, যেখানে এখন কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমানোর সংখ্যাও নেহাত কম নয়। এরকম একটা জীবন তাঁর নিজেরও হতে পারতো। দুঃসম্পর্কের আত্মীয় একজন আজিজ মোল্লার প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতাবোধ করেন, নিজেকে দায়বদ্ধ ভাবেন। হয়তো এমনি এক দায়বদ্ধতা থেকে কিংবা বাগদাদের খলিফা হারুন-ওর-রশীদ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েই পথশিশুদের জন্য এগিয়ে যান তিনি। ওদের জন্য কিছু একটা করার চেষ্টা নিজের মধ্যে পোষেন। মাসখানেক আগে শেষবারের মতো পথশিশুদের মাঝে কিছু প্যাকেট বিরিয়ানী নিয়ে বিতরণ করতে গিয়েছিলেন। আগেও তিনি খাবার, শীতবস্ত্র বিতরণ করেছেন। এজন্য অবশ্য নির্ধারিত কোনো স্থান ছিল না, যেদিন যেখানে যাদেরকে পেয়েছেন আরকি। কিন্তু সেদিন একটু দেরিতে বের হবার কারণে খুব বেশি পথশিশুকে জাগ্রত পেলেন না। গাড়ির গতি কমিয়ে কাঁটাবন পার হতে হতে ফুটপাথে দুই শিশুকে দেখতে পেয়ে গাড়ি থামিয়ে দুটো খাবারের প্যাকেট হাতে করে নেমেছিলেন। প্যাকেট দুটো দিতে দিতে নাম-ঠিকানা জিজ্ঞেস করলেন, এরপর রাতে কী খেয়েছে জিজ্ঞেস করতে যাবেন এমন সময় কোত্থেকে যেন এক লোক চিৎকার করে কিছু একটা বলতে বলতে তাঁর দিকে ছুটে আসছে দেখে থেমে গেলেন তিনি। গাড়ির ভেতর থেকে মামুনও চিৎকার করে ডেকে উঠলো, ‘স্যার স্যার, তাড়াতাড়ি গাড়িতে উইঠা পড়েন। পরিস্থিতি ভালা না।’ আমীর আলী ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেন। দুই বা তিন সেকেন্ড সময় নিলেন। দেখলেন, এই অল্প সময়ের মধ্যেই মামুন ওর পাশের সিটের দরজাটা খুলে ফেলেছে, তিনিও দ্রুত সামনের সিটে ওঠা মাত্রই মামুন গাড়ি ছেড়ে দিল। জানলার গ্লাসটা খুলে মাথা বের করে দেখলেন, চিৎকাররত ঐ মানুষটির সাথে আরো কয়েকজন যোগ দিয়েছে। তারা কী বলছে পুরোপুরি না বুঝতে পারলেও শুধুমাত্র কয়েকটা শব্দ স্পষ্ট শুনলেন- ‘হালায় কল্লাকাটা...!’ শিউরে উঠলেন। পদ্মা সেতুর জন্য এক লক্ষ মাথা লাগবে, এজন্য একদল ‘কল্লাকাটা’ বের হয়েছে যারা শিশুদের কল্লা কেটে নিয়ে যাচ্ছে- হঠাৎই এমন একটা গুজব রটে যাবার পরে বাড্ডার একটি স্কুলে সন্তানের ভর্তির খোঁজখবর নিতে যাওয়া রেনু নামক একজন নিরপরাধ মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে মাত্র কদিন আগেই। কাজেই আমীর আলীর উদ্দেশ্য বুঝতে না পেরে তাঁকে কল্লাকাটা মনে করে ঐ মানুষগুলো তেড়ে আসছিল ভাবতেই গলা শুকিয়ে যাচ্ছিল তাঁর। ওরা তো তাঁকে কথা বলার সুযোগই দিত না কিংবা কোনো কথা বিশ্বাসও করতো না, যেমনটা বিশ্বাস করেনি রেনুর কথা। অথচ শুধুমাত্র গুজবে আতঙ্কিত হয়ে একজন নিরপরাধ মা’কে যে এভাবে মেরে ফেলা যায় সেটা আমীর আলী বিশ্বাস করতে পারেন না। তবে একদিক থেকে ভাবলে তাঁর ভাগ্য খুবই ভালো। তিনি বিপদ বুঝতে না পারলেও মামুন সঠিক সময় আঁচ করতে পেরেছিল। ঐ ঘটনার পর থেকে তিনি আর ফুটপাথে নামেনি। আজও নামবেন না। সেরকম কোনো প্রস্তুতিও অবশ্য নেই।
মহাখালী ফ্লাইওভারে উঠতে গিয়ে গতি একটু কমাতে হলো। আশেপাশে তেমন কোনো গাড়ি নেই, শুধু সামনে একটা সিএনজি অটোরিক্সা দেখা যাচ্ছে। পরিবেশ বান্ধব বাহন। মামুন গতি বাড়িয়ে অটোরিক্সাটিকে ওভারটেক করে বাঁয়ে মোড় নিল কারণ ফ্লাইওভারের এই অংশে একটি বাঁক রয়েছে। আমীর আলী খেয়াল না করলেও মামুন হয়তো কিছু একটা বিষয় সন্দেহ করেছে। সে বললো, ‘স্যার, সিএনজিটার মতিগতি ভালা না। ভিত্রে কিছু একটা হইতেছে।’
আমীর আলী কোনো জবাব দিলেন না। ঢাকা শহরে রাতের বেলা সিএনজি অটোরিক্সা খুবই অনিরাপদ একটি বাহন। কিছু একটা ঘটলেও ঘটতে পারে। ধর্ষণ, ছিনতাই এখন মামুলি ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। মামুন গাড়ির গতি খানিকটা কমিয়ে আনলো এবং সিএনজিটাকে কাছাকাছি আসতে দিল। আমীর আলীও মাথা ঘুরিয়ে পেছনে তাকালেন। ঠিক তখনি লুকিং গ্লাসে মামুন দেখলো সিএনজির ডানপাশের দরজা দিয়ে একজন মানুষকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়া হলো। ওভারটেক করার সময় সিএনজির ডান পাশের দরজাটা খোলা ছিল কিনা মনে করতে পারলো না কেউ। আমীর আলীর গলা দিয়ে আওয়াজ বের হলো না। মামুন শুধু বললো, ‘স্যার, থামামু?’ আমীর আলী সম্ভবত উত্তরে হ্যাঁ সূচক কিছু একটা বললেন কারণ পরমুহূর্তেই মামুন গতি কমিয়ে, ইমার্জেন্সি ইন্ডিকেটর বাতি জ্বালিয়ে এবং ক্রমান্বয়ে ডানে ও বামে চেপে অটোরিক্সাকে থামানোর চেষ্টা করলো যদিও অটোরিক্সার ড্রাইভার ব্যাপারটা বুঝতে পেরে গতি বাড়িয়ে দিয়েছে ইতিমধ্যে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই একটা সংঘর্ষ হলো। অটোরিক্সার পেট বরাবর টয়োটা করোলাটি ধাক্কা দিলে অটোরিক্সাটি উল্টে গিয়ে কয়েকবার পল্টি খেলো এবং মামুনও গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফ্লাইওভারের পার্শ্ব রেলিং-এ গিয়ে আঘাত হানলো। সিটবেল্ট বেঁধে রাখার কারণে মামুন খুব একটা আহত না হলেও আমীর আলী ও তাঁর গাড়ির ক্ষয়ক্ষতি অনেক বেশি হলো। আমীর আলী পেছনের সিট থেকে সামনের দুই সিটের মাঝখান দিয়ে ছিটকে গিয়ে উইন্ডশিল্ডে ধাক্কা খেলেন এবং জ্ঞান হারালেন।
একদিন পর দৈনিক পত্রিকার ভেতরের পাতায় ছোট্ট একটা খবর ছাপা হলো যার সারমর্ম এমন ছিল যে, গত পরশু রাতে মহাখালি ফ্লাইওভারের ওঠার সময় একটি প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একজন পথচারীকে চাপা দেয় এবং পরবর্তীতে দ্রুত পালাতে গিয়ে অন্য একটি সিএনজি অটোরিক্সাকে ধাক্কা দেয়। ড্রাইভারসহ আহত ছয়, একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
ছবি: সঞ্জয় দে রিপন
(০৯.০৪.২০ তারিখের দৈনিক সংবাদ এর 'সংবাদ সাময়িকী' তে প্রকাশিত)
১৩ ই জুলাই, ২০২০ সকাল ১১:৩৪
ফয়সাল রকি বলেছেন: ধন্যবাদ করুণাধারা। আমি আসলে নিয়মিতভাবে অনিয়মিত।
মাঝে এসে অবশ্য আপনার 'নতুন জীবন'-এর সবকয়টা পর্ব পড়েছি। ফাঁকিবাজী করে লগিন না করায় মন্তব্য করা হয়নি। শেষটা খুবই চমকপ্রদ ছিল, তবে তাড়াহুড়ো করে শেষ না করলে হয়তো ....
সময় করে এসে পড়বেন।
ভালো থাকুন।
২| ১২ ই জুলাই, ২০২০ বিকাল ৫:২৩
ইসিয়াক বলেছেন: ভালো লাগলো।
১৩ ই জুলাই, ২০২০ সকাল ১১:৩৬
ফয়সাল রকি বলেছেন: ধন্যবাদ ইসিয়াক ভাই। ভালো থাকবেন।
৩| ১২ ই জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:১৫
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: গল্পের এমন পরিণতির জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। সুন্দর লিখেছেন।
আমীর আলীর কষ্টার্জিত টাকায় কেনা গাড়িটা গেল, দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত হওয়ার অপবাদও পড়লো তার গাড়ির উপর। আমাদের অনেক ঘটনার অন্তরালে এমনই ঘটে থাকে, একজনের অপরাধ অন্যের উপর পড়ে।
১৩ ই জুলাই, ২০২০ দুপুর ১২:১৩
ফয়সাল রকি বলেছেন: ধন্যবাদ সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই।
এটা আমাদের শহরেরই গল্প। তবে আমরা শুধু সুখী জীবনের গল্পগুলো্ই পড়তে চাই, বিশ্বাস করতে চাই- আমরা ভালো আছি।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
৪| ১২ ই জুলাই, ২০২০ রাত ৯:১২
নেওয়াজ আলি বলেছেন: ভালো লিখেছেন।ভালো লাগল।
১৩ ই জুলাই, ২০২০ দুপুর ১২:৫২
ফয়সাল রকি বলেছেন: ধন্যবাদ নেওয়াজ আলি ভাই।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
৫| ১২ ই জুলাই, ২০২০ রাত ১১:২০
রাজীব নুর বলেছেন: আমীর আলী বোকা মানুষ। এই সমাজে বোকা মানুষের যা হয় আমীর আলীর তাই হয়েছে।
১৩ ই জুলাই, ২০২০ দুপুর ১২:৫৫
ফয়সাল রকি বলেছেন: সমাজের বেশিরভাগই মানুষই বোধহয় বোকা।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
৬| ১২ ই জুলাই, ২০২০ রাত ১১:৪২
ডি মুন বলেছেন:
চমৎকার গল্প।
একই সাথে ঢাকা শহরের নিম্নবিত্ত মানুষের জীবন, রাতের অনিরাপত্তা, নগরভর্তি সন্দেহবাতিকগ্রস্থ মানুষ, কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষ আবার অন্যদিকে আমীর আলীর মতো সংবেদনশীল মানুষ ও তার করুণ পরিণতি। সব মিলিয়ে উপভোগ্য গল্প।
গল্পের পরতে পরতে জীবনের করুণ সুর।
পাঠকের মনকে আদ্র করবে এবং সেই সাথে ভাবাবে তার চারপাশটাকে নিয়ে।
১৩ ই জুলাই, ২০২০ দুপুর ১২:৫৭
ফয়সাল রকি বলেছেন: ধন্যবাদ ডি মুন ভাই।
শহুরে গল্প ভালো জেনেছে জেনে খুশি হলাম।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
৭| ১৩ ই জুলাই, ২০২০ রাত ১২:৪৭
অপু তানভীর বলেছেন: চমৎকার গল্প !
১৩ ই জুলাই, ২০২০ দুপুর ১:১৮
ফয়সাল রকি বলেছেন: ধন্যবাদ অপু তানভীর।
৮| ১৩ ই জুলাই, ২০২০ দুপুর ১২:৪৩
হাসান মাহবুব বলেছেন: দুর্ভাগাদের কপালে এই থাকে! ভালো লাগলো গল্পটা।
১৩ ই জুলাই, ২০২০ দুপুর ১:৪৫
ফয়সাল রকি বলেছেন: ধন্যবাদ হামা ভাই।
৯| ১৩ ই জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০৪
আকিব ইজাজ বলেছেন: গল্পের মোড় এভাবে ঘুরে যাবে ভাবিনি। বিপদে এগিয়ে আসাটাও এখন বিপদজনক, অথচ বিপদ দেখে এড়িয়ে গেলেও মন অনুতপ্ত হয়ে থাকে।
১৪ ই জুলাই, ২০২০ সকাল ১০:৫৬
ফয়সাল রকি বলেছেন: ঠিকই বলেছেন। অন্যের বিপদে এগিয়ে যাওয়াটাও এখন বিপদজনক হয়ে পড়েছে।
সময় থাকলে আমার আরেকটা লেখা পড়তে পারেন ... Click This Link
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
১০| ১৪ ই জুলাই, ২০২০ বিকাল ৫:৩১
করুণাধারা বলেছেন: সমাপ্তি হয়েছে হঠাৎ! একটা ধাক্কা লাগলো। কিন্তু যতক্ষণ পড়ছিলাম ততক্ষণ মনে হচ্ছিল জীবনের গল্প পড়ছি, নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের কর্তার সাধ ও সাধ্যের টানাপোড়েন... আমীর আলীর জীবনের পরিনতি দুঃখজনক হলেও অপ্রত্যাশিত নয় একেবারেই।
নিরাবেগ বর্ণনা ভালো হয়েছে, ++++
১৮ ই অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৩:১২
ফয়সাল রকি বলেছেন: ধন্যবাদ করুণাধারা।
অনেক দিন পর প্রতিমন্তব্য করছি।
কেমন আছেন?
১১| ২০ শে জুলাই, ২০২০ রাত ৯:২৫
আমি তুমি আমরা বলেছেন: গল্পটা ভালই। ফিনিশিংটাও ভাল হয়েছে। তবে প্রতিটা প্যারাই প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি বড় ছিল। প্রত্যকেটি প্যারাগ্রাফকে আরী কয়েকটি ছোট ছোট প্যারায় ভাগ করলে পাঠক হিসেবে পড়তে সুবিধা হত।
১৮ ই অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৩:৩১
ফয়সাল রকি বলেছেন: প্যারার ব্যাপারটা ভাবছিলাম। কিন্তু ইচ্ছাকৃত এভাবে লেখা। একটা এক্সপেরিমেন্ট বলতে পারেন।
ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
১২| ১৭ ই নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:০৮
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: ব্লগে অনেকদিন এমন গতিময়, জীবনময় গল্প পড়া হয়না।
আহা ভাল কাজ করতে গিয়ে আজীবন সংগ্রামী আমীর আলীর এহেন ঘটনা দুঃখজনক।
সুন্দর।++++++++++
১৭ ই নভেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:১৯
ফয়সাল রকি বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ সুন্দর একটা মন্তব্যের জন্য।
এত্তোগুলা প্লাস পেয়ে আপ্লুত।
©somewhere in net ltd.
১| ১২ ই জুলাই, ২০২০ বিকাল ৫:২২
করুণাধারা বলেছেন: অনেক দিন পর ফিরে আসায় লাইক। গল্প পরে পড়বো।