নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দুঃখের কবিতাই শ্রেষ্ঠ কবিতা। ভালোবাসা হলো দুঃখ, এক ঘরে কবিতা ও নারী।
জীবনে সর্বপ্রথম যে গানটা শুনেছিলাম
আপনাদের কি মনে পড়ে জীবনে সর্বপ্রথম কোন্ গানটি শুনেছিলেন?
এর আগে আমি অন্য কোনো গান হয়ত শুনে থাকব, কিন্তু তার কিচ্ছুটুকুন আমার মনে নেই। বা গান বলে যে একটা বস্তু বা বিষয় আছে তাও হয়ত এর আগে বুঝি নি।
তবে এ গানটি গান হিসেবেই কবে কোথায় কীভাবে শুনেছিলাম তা আমার স্পষ্ট মনে আছে।
১৯৭১।
বর্ষার প্রথম পানিতে গাঁয়ের খাল ভরে গেছে। আমি বাবার সাথে চকে গেছি ধানক্ষেত দেখতে। সূর্য তখন পশ্চিমে হেলে পড়েছে। কিছু আগে সামান্য বৃষ্টি হয়েছিল, আকাশে ঝলমলে রোদ্দুর আর ক্ষেতের উপর বাতাসের ঢেউসমেত গরমের হলকা।
বাবার সাথে গুটি গুটি পায়ে খালের পার ধরে বাড়ি ফিরছি। পারাপারের জায়গাটাতে এসে আমরা কিছুক্ষণ দাঁড়াই। এখানে ডাকের খেয়া নেই, পানিতে নেবে বা সাঁকোতে খাল পার হতে হয়। ওখানে সাঁকো ছিল না।
মামা সম্পর্কের একজন ভাটি থেকে উজান টেনে নৌকা বেয়ে আসছিলেন। তাঁকে দেখেই বাবা ডাকলেন, ও ইয়ার আলী, পার কইরা দেও।
ইয়ার আলী মামা নৌকা ভিড়ালেন। বাবা আমাকে সাবধানে উঠিয়ে মাঝখানে বসালেন। ছোটোখাটো দু-একটা কথা। তারপরই নৌকা বাইতে বাইতে ইয়ার আলী মামা গেয়ে উঠলেন :
আমার সোনার বাংলা...
আমার কাছে খুব ভালো লাগল। এমন গান আগে শুনি নি। যা শুনেছি তা হলো বৃষ্টি নামানোর ছড়া, যা মেয়েরা বুনো ফুল আর চালুনি মাথায় নিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে ঘটীর পানিতে ভিজতো আর বৃষ্টির জন্য গাইতো।
কিন্তু... আমার সোনার বাংলা... এ তো এক আশ্চর্য গান! আমি মনে মনে চেষ্টা করি, অল্প অল্প পারিও।
বাড়ি গিয়ে মাকে বলি, ইয়ার আলী মামু গান গাইবার পারে... এ কথা দ্বারা কী বোঝাতে চেয়েছিলাম তা মনে নেই, কিন্তু আমি ঠিক এরকম একটা কথাই মাকে বলেছিলাম... ইয়ার আলী মামু সোনার বাংলা গান গাইছে।
এরপর সপ্তাহখানেকের মধ্যে আমি আরো একজনকে এ গানটা গাইতে শুনেছিলাম। তারপর আমি অনেকের মুখেই এ গানটা শুনতে পেয়েছিলাম। যে-ই এ গানটা গাইত, আমি দৌড়ে তার কাছে গিয়ে, পিছে পিছে হাঁটতে হাঁটতে এ গানটা শুনতাম।
ভয়াল ২৫ মার্চের উত্তাপ তো এর কত আগেই সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। আমি কি অতসব তখন বুঝি?
‘আমার সোনার বাংলা’ আমাদের জাতীয় সঙ্গীত, এটা জেনেছি অনেক পরে যখন বোঝার জ্ঞান হয়েছে। কিন্তু এ গানটার মধ্য দিয়েই আমার গান শোনার প্রথম অভিজ্ঞতা হয়েছিল, তা ভাবতে গেলে খুব পুলকিত, বিস্মিত ও কেবল গর্বিত হতে থাকি আর আনমনে গেয়ে উঠি :
আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি
চিরদিন তোমার আকাশ তোমার বাতাস আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি...
যেদিন প্রথম পতাকা হাতে তুলে নিয়েছিলাম
ব্যাপারটা ভেবে আপনিও বিস্মিত হবেন- কখনো কি জাতীয় পতাকা হাতে তুলে নিয়েছেন? অনেকের এরূপ অভিজ্ঞতা থাকলেও আমাদের কিন্তু খুব কমই সুযোগ আসে জাতীয় পতাকা হাতে তুলে নেবার।
কোনো জাতীয় অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের অনেক অনেক আগে আমি একটা পতাকা হাতে তুলে নিয়েছিলাম। সেই মামুলি কাহিনিটা বলি।
সেদিন দুপুরে এক মিছিল এল। ছেলেবুড়ো, যুবক সবাই সেই মিছিলে। তাদের কণ্ঠে উদাত্ত শ্লোগান। তাদের কারো কারো হাতে পতাকা। দৌড়ে যাচ্ছে মিছিল- দৌড়ে যাচ্ছে।
মিছিল গিয়ে জমায়েত হলো স্কুলের ময়দানে। চারদিক থেকে ছুটে আসতে লাগল মানুষের ঢল। বিরাট মাঠ মানুষে ভরে গেল। মাইকে অনবরত বেজে চলছে আমার সোনার বাংলা গানটি।
১৯৭১-এ আমার বয়স কত ছিল জানি না। আর যেদিনটার কথা বললাম তখন বুঝি নি, শুধু জ্ঞান হবার পরই সুনিশ্চিত ধারনায় বুঝেছিলাম ওটা ছিল ১৬ই ডিসেম্বর। যখন গাঁয়ের রাস্তা জনস্রোত আর গগনবিদারী শ্লোগানে টলোমল করছিল, হাতে ছিল পতাকা- কী মহোল্লাসে আমারও চিত্ত চঞ্চল হয়ে উঠেছিল- কী অভূতপূর্ব উত্তেজনা, এক দুর্দমনীয় নেশা হাতে একটা পতাকা ধরার জন্য। কিন্তু ন্যাংটো শ্রীযূতকে কে দেবে পতাকা?
আমার মত আরো অনেকের হাতেও এমন পতাকা ছিল- তাই আর মুহূর্ত দেরি নয়, হাতের নাগালেই ছিল খড় নাড়ার কাড়াল, আর ছিল আমার প্রিয় মলিন গামছাটি। আমি কাড়ালের মাথায় গামছা বেঁধে এক পলকে বানিয়ে ফেললাম বাংলাদেশের পতাকা- আর দৌড়ে মিশে গেলাম রাস্তার মিছিলে।
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা এভাবেই আমার হাতে প্রথম এসেছিল।
আমার স্কুলে যাওয়ার প্রথম দিন
আমার সব ‘প্রথমে’র রেফারেন্স পয়েন্ট হলো ১৯৭১। তখন বয়স কত ছিল জানার উপায় নেই, কারণ কৃষকের ছেলের জন্মতারিখ লিখিত থাকে না, ধাইমার হাতে সে ভূমিষ্ঠ হয়; মা-চাচি-দাদি-নানিরা ঘোর বৃষ্টির দিনে, তুমুল তুফানের রাতে বাংলা মাসের ‘অমুক তারিখে’ বা ‘অততম’ চাঁদের দিন জন্ম হয়েছিল- এভাবে দিনতারিখ মনে রাখেন। তারপর নবম শ্রেণীতে রেজিস্ট্রেশনের সময় গড়পড়তা একটা জন্মতারিখ, যা চাকরিক্ষেত্রে সুবিধা দিতে পারবে অনুমান করে লেখা হয়ে থাকে, যাতে প্রায়শ প্রকৃত জন্মতারিখ থেকে বিস্তর ব্যবধান থাকে।
আমি বড্ড নিরীহ প্রাণী সেই ছোটোকাল থেকে- কেবল ঘরের বাইরে; এজন্য কত পিটুনি খেয়েছি পরের হাতে তার ইয়ত্তা নেই। কিন্তু ঘরের ভেতর আমার দুরন্তপনায় সবাই সবসময় ভীষণ অতিষ্ঠ থাকত; বাইরে পরের হাতে মার, ঘরের ভেতর মায়ের পিটুনি খেতে খেতে আমার দফারফা অবস্থা।
সে পর্যন্ত দুবার খেজুর গাছ থেকে পড়ে মরতে মরতে বেঁচে উঠেছি। গাবগাছ থেকেও পড়েছি বেশ কয়েকবার। আর বাড়ির পাশে খালের ধারে একটা দইল্লা গাছ ছিল, উন্নার দিনে ওটাতে রসি দিয়ে পিঁড়ির দোলনা বানাতাম; আর বর্ষাকালে এ গাছটা ছিল আমাদের সবচেয়ে মজার জায়গা- করতাম কী, দল বেঁধে গাছের ডগায় উঠতাম, আর ঝাঁকে ঝাঁকে গাছের ডগা থেকে লাফিয়ে পানিতে পড়তাম। ডুব দিয়ে যে যত বেশি দূরে গিয়ে উঠতে পারতাম, সে তত সেয়ানা। আমি এ কাজটায় বড্ড সেয়ানা হয়ে গিয়েছিলাম। মা মানা করতেন, কিন্তু আমি কি আর মায়ের হাতের পুতুল?
একদিন আমার এমনি এক বিটকেলির শাস্তি স্বরূপ আমাকে বাম হাতে ধরে ডান হাতে পিঠের উপর দমাদম কিল ঝাড়তে ঝাড়তে মা মুখ দিয়ে আগুন বের করতে লাগলেন- তোর মতো পুলা আমি দুনিয়াতে রাহুম না- আমার কইলজ্যা খাইয়া হালাইলি তুই- পুলার পুলা, ক, গাছে গনে আরো লাফ দিবি? আরো লাফ দিবি? আর আমার ছিল কইমাছের প্রাণ বা গণ্ডারের শরীর- মায়ের কিলে আমার কোনো ব্যথা হত না, যদিও পিটুনি খাওয়ার সময় গলা ফাটিয়ে বাবা-বাবা বলে চিল্লানি দিতাম।
একটু বিরতি দিয়ে মা বললেন, তুই জানস তোর মত পুলারা আইজকাল ইস্কুলে যায়? তোর সুরুজ মামু পরশু দিন গনে ইস্কুলে যাইবার নাগছে। কত বদ্র অইয়া গেছে সুরুজ!
সুরুজ মোল্লা আমার একমাত্র মামা, আমার থেকে তিন-চার মাসের বড়। মামা আমাদের বাড়ি আসে, তার সাথে কিছুক্ষণ ত্যাঁদরামি করি, সে ত্যক্ত হয়ে কান্নাকাটি করে বাড়ি চলে যায়। মামাও বেশ গোবেচারা বটে, আমার সামনে। সেই মামা স্কুলে যাওয়া শুরু করেছে শুনে আমার কোনো ভাবান্তর হলো না; কেননা ‘বদ্র’ই বা কী জিনিস, আর স্কুলে যাওয়ার মাহাত্ম্যই বা কী, গাছে গাছে বাস করার চেয়ে তাতে অধিক আনন্দ আছে কিনা সে বিষয়ে কোনো জ্ঞান তো ছিলই না, জানারও কোনো আগ্রহ ছিল না।
মায়ের পিটুনিতে ব্যথা না পেলেও মা-ই ছিলেন সাক্ষাৎ ‘রাক্ষসী’, আর বাবা ছিলেন সকল বিপদের নিরাপদতম আশ্রয়স্থল; যতক্ষণ বাবা বাড়িতে, মা আমার টিকিটিও ছুঁতে পারতেন না, আর আমার থাকতো তখন সাত খুন মাফ।
মা একদিন সন্ধ্যায় বাবাকে মৃদু ক্ষোভের সাথে বলছেন, তোমার বান্দর পুলারে হয় তুমার সাতে ক্ষ্যাতে নিয়া যাইবা, নাইলে ইস্কুলে দিয়া দেও। ওর জ্বালায় আমার জানডা ত্যাজপাতা অইয়া গেল।
বাবা হাসতে হাসতে বলছেন, কও কী, ইস্কুলের বয়স বড় অইছে নি? বয়স অইলে আল্লায় নিলে ইস্কুলেই বর্তি কইরা দিমু। আমার মতন লাঙ্গল টানবো নি বড় আমার পুলা!
বয়স অইছে না! মা ঝামটা দিয়ে বলেন, সুরুজ ইস্কুলে যাইবার নাগছে কবে গনে। সুরুজ কত বদ্র অইয়া গেছে দ্যাকছাও না!
বাবা আমার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসেন।
এরপরের কিছুদিনের কথা ও ঘটনা আর মনে নেই। মনে পড়ে শুধু কথাগুলো- বাড়িতে প্রস্তুতি চলছে আমাকে স্কুলে ভর্তি করানোর জন্য। আজ না কাল, কাল না পরশু- এভাবে। বাবা বাড়িতে থাকলেই স্কুলে নিয়ে যাবেন একদিন, কিন্তু বাবার সেই সময় আর হয়ে ওঠে না।
বাবার সময় হল একদিন সকালে। আমার জন্য একটা বই কেনা হয়েছে- সবুজ সাথী। একটা শ্লেট আর মাটির পেন্সিলও। সেগুলো গত কয়দিন ধরে নাড়াচাড়া করেছি, আর কেবলই বিষণ্ণ হয়েছি- হায়, এ আপদগুলোর জন্যই আমাকে স্কুলে যেতে হবে! আমার পুরোনো হাফপ্যান্ট আর শার্টটা ৫৭০ সাবান দিয়ে ধুয়ে নতুনের মত করা হয়েছে। কিন্তু সকালবেলা থেকেই আমার খুব মন খারাপ- খুব কান্না পাচ্ছে। মায়ের ‘বদ্র’ কথাটার অর্থ আমি না বুঝলেও এটুকু বুঝেছিলাম যে স্কুলে গেলে আমিও সুরুজ মামার মত ‘বদ্র’' হয়ে যাবো- হায়রে, আমার দিনভর গাছগাছালি খেলা- এসব তো আর কিছুই করতে পারব না- আমি তবে কীসের লোভে স্কুলে যাবো?
স্কুলে যাবার সময়টাতে পাড়াপড়শিরা ও বাড়ির সবাই জড়ো হল আমাদের ঘরের সামনেটায়, আর ঠিক তখনই ডুকরে কাঁদতে শুরু করলাম। যতই সময় ঘনিয়ে আসতে লাগল বাড়ি হতে বের হবার, আমার কান্নার বেগ ততই বাড়তে থাকলো, একসময় গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে লাগলাম- আমি ইস্কুলে যামু না। ইস্কুলে যামু না। আর আমার কান্না তখন এতই করুণ হয়ে উঠেছিল যে বাবা আমার চোখের দিকে তাকিয়ে তিনি নিজেও কেঁদে দিয়ে মাকে বললেন, তাইলে আইজক্যা বাদ দেই? কিন্তু মা শাসিয়ে উঠতেই বাবা আমার হাত ধরে বললেন, চলো বাজান- কাইন্দো না- ইস্কুল অনেক বালো জাগা।
আহারে কী কান্নাই না করেছিলাম সেদিন- আমি কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি থেকে নেমে যাচ্ছি আর আমাকে বাড়িভর্তি মানুষজন দেখছে- আমি আমার সোনার দিনগুলো ফেলে চলে যাচ্ছি অন্যদিনের দিকে...
স্কুলে আমি ভাল করছিলাম। কয়েক বছরের মধ্যে পাড়াপড়শি ছাড়িয়ে পুরো গ্রামে আমার মেধার কথা ছড়িয়ে পড়ল। লোকে বলতে লাগল- গোবরে পদ্মফুল।
আমার অজপাড়াগাঁয়ের স্কুলটাতে আমিই প্রথম প্রাইমারি বৃত্তি পরীক্ষায় পাশ করেছিলাম- এই বৃত্তির খবর নিয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষকসহ তিনজন শিক্ষক ও কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তি যখন আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন- আমার মা হাউমাউ করে কেঁদে দিয়েছিলেন।
আমার মা মারা গেছেন আমি যখন ৭ম শ্রেণীতে পড়ি। প্রাইমারি স্কুল থেকে হাইস্কুলে যেয়েও আমি স্কুলে খুব ভাল করতে থাকি- আমার মা এ খবরে অতি আপ্লুত হয়ে বলতেন- তর মনে আছে, ইস্কুলে যাইবার দিন তুই কত কানছিলি?
ফেলে আসা দিনের অবিস্মৃত অনেক কিছুর মধ্যে স্কুলে যাওয়ার প্রথম দিনটির কথা এভাবেই আমার ভেতর সতত ঝলমল করে আলো দেয়...
আমার দেখা প্রথম ছায়াছবি
দশ-এগার বছর বয়সের কালে মায়ের চোখে ধূলি দিয়ে দুই মহাধূরন্ধর বন্ধুর সাথে পদব্রজে বাড়ি থেকে তিন মাইল দূরবর্তী জয়পাড়া সিনেমা হলে গিয়ে জীবনের প্রথম ছায়াছবিটি দেখে রাত দশটার দিকে বাড়ি ফিরে এসে মায়ের হাতের সালুন নাড়ার লাঠিতে বেধড়ক ধোলাই খেয়ে আমাকে একটুও কাঁদতে হয় নি। সিনেমা দেখার উত্তেজনা ও আনন্দ এবং বিস্ময়ে আমি এতখানি ঘোরের ভেতর ডুবে গিয়েছিলাম যে এসব জাগতিক বিষয়আশয় তুচ্ছাতিতুচ্ছ বিষয়ের চেয়েও গৌণতর জ্ঞান হচ্ছিল। এরপর অবশ্য প্রায় মাস দেড়েকের মত আমাকে ঘরের ভেতর অন্তরীণ করে রাখা হয়েছিল; আমি নাকি সেয়ানা হয়ে গেছি, রাতবিরাতে ঘরের বাইরে থাকি, এই সেয়ানাগিরি ছোটানোর জন্য মায়ের এই কার্ফিউ ব্যবস্থা ছিল।
ছবির নাম বুলবুল-এ-বাগদাদ।
ছবি দেখার খায়েস অনেক আগে থেকেই ছিল। আর ছায়াছবি নামে যে অত্যাশ্চর্য একটা বস্তু আছে তা অবশ্য জানতে পেরেছিলাম এর বছর দেড়েক আগে, যখন জয়পাড়া বাজারে প্রথম বারের মতো প্রেক্ষগৃহ তৈরি হলো। পুরো দোহার, শ্রীনগর ও নবাবগঞ্জ উপজেলা মিলিয়ে দ্বিতীয় আর কোনো সিনেমা হল তখন ছিল কিনা সে সময়ের জ্ঞান নিয়ে তা জানা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। শুধু এটুকু ভাবা খুব সহজ ছিল, ইশ, আমাদের বাসা যদি ঢাকা শহরে থাকতো তাহলে সবগুলো সিনেমা হলে ঘুরে ঘুরে এক সপ্তাহে অনেকগুলি ছবি দেখতে পারতাম।
সিনেমা হলে ঢুকেই দেখি একেবারে প্রথম সাড়িতে আরেক মহাধূরন্ধর ক্লাসমেট। আমি পাশের দুজনকে বলি, সামনে তো কত সিট খালি, চল্, সামনে যাইয়া বসি।
ওরা দুজন সেয়ানারও সেয়ানা। আমাকে ধমক দিয়ে বলে, চোপ ভোদাই, ঐডা অইল থার্ড ক্লাস, আমরা বইছি সেকেন্ড ক্লাসে।
আমার কাছে খুব আশ্চর্য লাগলো। সামনের সারিটা থার্ড ক্লাস হয় কীভাবে? আমি নিজেকে মনে মনে একটু বেশি বুদ্ধিমান ভাববার চেষ্টা করি, আর বলি, তোমরা ভোদাই কিচ্ছু জানো না।
এর পরের দুবার আমি সামনের সারির টিকিট কিনেছিলাম; আর সামনের সারিটা কেন যে ফার্স্ট ক্লাস না হয়ে থার্ড ক্লাস হল, তা বুঝতে আমার আরও বছর খানেকের মতো সময় লেগেছিল।
পতাকা উত্তোলনের সাথে সাথে সবাই দাঁড়িয়ে গেল। আমিও দাঁড়ালাম। শরীরে এক প্রচণ্ড অনুভূতি, যা বোঝানোর কোনো ভাষা নেই। সামনে এতক্ষণ একটা ধবধবে সাদা পর্দা ছিল। ছবি শুরুর আগে সঙ্গী দুজনকে একের পর এক প্রশ্নে ঝাঁঝরা করে ফেলেছি- এতটুকু জায়গায় জীবন্ত একটা শহর বা গ্রামের মানুষেরা কীভাবে চলাফেরা করে? ছবির মানুষগুলো কি সত্যিই নড়াচড়া করে, নাকি বায়স্কোপের মত একের পর এক ছবি ভেসে ওঠে পর্দায়? সঙ্গী দুজনের মুখে ছবির গল্প শুনতে শুনতে আমার মনে এসব প্রশ্ন দেখা দিত।
জাতীয় পতাকা নামতেই তীব্র খটাখট খটাখট শব্দে কয়েক সারি ঘোড়া চোখের সামনে দিয়ে মরুভূমির এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তের দিকে ছুটে গেল। এরপর আরো কয়েক সারি ঘোড়ার দুরন্ত ছোটাছুটি। আমি যুগপৎ বিস্মিত, চমৎকৃত ও উল্লসিত, আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে যাচ্ছে, চোখের সামনে যা দেখছি তা আমার কল্পনার জগৎ ছাড়িয়ে অনেক অনেক দূরের এক মহাবিস্ময়।
একটা ঘোড়া থামলো। ঘোড়ার পৃষ্ঠ থেকে নেমে খট খট কদম ফেলে যে অতিশয় সুদর্শন রাজকুমার রাজদরবারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে- সঙ্গীরা জনালো তাঁর নাম ওয়াসীম। আমি সত্যিই বিমোহিত হয়ে গেলাম ওয়াসীমের সৌন্দর্য দর্শনে।
এরপর কিছু জাদুদৃশ্যও বোধহয় ছিল। বিকট চেহারার এক দৈত্য ও তার অট্টহাসি দেখে ভয় পাচ্ছিলাম। সঙ্গীরা জানালো- তার নাম জাম্বু।
মাঝে মাঝেই তরবারি-যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধ আর ঘোড়দৌড় আমার কাছে সর্বাপেক্ষা আকর্ষণীয় মনে হচ্ছিল।
আমার ঘোরলাগা বিস্ময় আকাশ ছুঁলো রাজকুমারীর দৃশ্যে। রাজকুমারী তার শয়নকক্ষে শায়িতাবস্থায় ছিল; সেখানে রাজকুমার ওয়াসীমের প্রবেশ। চমকে শোয়া থেকে উঠে বসে রাজকুমারী, আর এ দৃশ্যটা তিনবার করে দেখানো হচ্ছিল। ও-বয়সেই রাজকুমারীর রূপলাবণ্য দেখে আমি দিশেহারা হয়ে গেলাম। আমার কী যে ঘোর লেগে গেল!
রাজকুমারীর নাম অলিভিয়া।
তারপর বিশ্বাস করুন, জীবনে কত নায়িকাদেরই তো দেখলাম, অলিভিয়া জীবন ভর আমার কাছে স্বপ্নের রাজকন্যা হয়েই থাকল, তার মত অপরূপা সুন্দরী নায়িকা আর কাউকেই পেলাম না।
বিপুল উচ্ছ্বাস আর উত্তেজনার ঘোরে ছবি দেখা শেষ করে রাত সোয়া নয়টার দিকে জয়পাড়া সিনেমা হল থেকে আমরা ত্রিরত্ন মায়ের কোলে ফিরে আসতে হাঁটা ধরলাম।
রবীন্দ্রনাথের যে বইটি আমি প্রথম পড়েছিলাম
অনেকে মিটিমিটি হাসছেন- আমাকে হয়তো ‘প্রথম’ মুদ্রাদোষে পেয়ে বসেছে। একদম ঠিক। মাথায় কিছু আসছে না- না কবিতা, না গল্প, না অন্যকিছু। এ অবস্থায় বেশ কিছুদিন চলে যাওয়ার পর হঠাৎ হঠাৎ একেকটা জিনিসের কথা মনে পড়ে আর নিজেই নিজের কাছে প্রশ্ন করি- কবে যেন প্রথম এটা করেছিলাম!
এইতো সংক্ষিপ্ত পটভূমিকা।
মোটামুটি ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত আমি বইয়ের পোকা ছিলাম- সামনে যা পেতাম গোগ্রাসে কাটতাম আর চিবুতাম। তবে আপনাদের মত অত না আবার!
কিন্তু এত বই কোথায় পাব? সপ্তম শ্রেণীতে থাকা অবস্থায়ই নবম-দশম শ্রেণীর বাংলা বই পড়ে ফেলেছি- বিশেষ করে গল্পগুলো। সেকালে আমাদের অজগ্রামে কেন, হাইস্কুলেও কোনো খবেরের কাগজ যেত না। স্কুলে যে একটা লাইব্রেরি আছে তাও জানতে পেরেছিলাম অনেক পরে।
তো, এত বই কোথায় পাব? কিনে বই পড়ার মত সামর্থ আমার ছিল না। তবে এখানে-সেখানে ‘চটি’ জাতীয় কিছু বই মাঝে মাঝেই ক্লাসমেটরা একত্র হয়ে রসিয়ে রসিয়ে পড়ি- এক হাত থেকে আরেক হাতে যেতে যেতে একসময় ভুলে যাই এর মালিক কে ছিল- ভুলে যাই বর্তমানে বইটা কোথায় কার কাছে আছে।
খুব পড়ুয়া পরিবারের দু-তিনজন ক্লাসমেট ছিল। বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানের দিন, যেমন নজরুল-রবীন্দ্র-জসীম উদ্দীন জন্মজয়ন্তীতে তাঁদের কবিতার বই ওরা নিয়ে আসত। ওদের কাছ থেকে নিয়ে পড়তাম। বাসায় নিয়ে যেতাম। আমার এই পড়ার নেশা সম্বন্ধে ওরা যখন বুঝতে পারল, নিজেরাই বলল- আমাদের বাসায় কাঁড়ি কাঁড়ি বই, পড়ার কেউ নাই। তুই পড়বি নি? পড়বার পারোস।
ওর নাম জাহিদ। বললাম, কাল আমার জন্য একটা বই নিয়া আসিস।
জাহিদ পরের দিন আমার হাতে যে বইটা এনে তুলে দিল ওটার মলাট ছিল না। মলাটের পরের সাদা পাতাটা ময়লা আর ছেঁড়াছেঁড়া মত হয়ে গেছে। তাতে কী- বইটা হাতে নিয়ে পৃষ্ঠা উলটাতে থাকি।
শেষের কবিতা
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
আমি তখন সপ্তম অথবা অষ্টম শ্রেণীতে পড়ি, সঠিক মনে নেই। পাঠ্যপুস্তকে কবি-পরিচিতি আর শিক্ষকদের কাছ থেকে শোনা জ্ঞান থেকে অল্প অল্প চিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর- কাজী নজরুল ইসলাম- আর জসীম উদ্দীন। স্কুলে খুব আড়ম্বরের সাথে এঁদের জন্ম বা মৃত্যুদিবস পালিত হয়, অন্য কবিদের না- পাঠ্য বইয়ের কবিতা বা আর কারো কাছে পাওয়া বই থেকে মাঝে মাঝে অনুষ্ঠানে তাঁদের কবিতা পড়ি। তাঁদের সম্বন্ধে আর কতটুকুই বা জানি!
আমি শেষের কবিতা পড়তে শুরু করি। ক্লাসের পড়া, বাড়ির কাজ আর খেলাধূলার সময় সহ বইটা পড়ে শেষ করতে আমার চার-পাঁচ দিনের মত লাগে।
বইটা পড়ার সময় বিশেষ কয়েকটা অংশে আমি খুব আপ্লুত হয়ে পড়ি।
ভীরু যতীন্দ্র লাল চুপিসারে লাবণ্যর ড্রয়ারে চিরকুট লুকিয়ে রাখত, যাতে লেখা থাকত লাবণ্যর প্রতি তার নিবেদন, কিন্তু মুখ ফুটে বলার দুঃসাহস তার কোনোদিন হয় নি।
আরেকবার লাবণ্য অমিতকে নিয়ে চলে যায় সেই পাহাড়ের ধারে কোনো এক গোধূলিবেলায়, যেখানে দাঁড়িয়ে এমনি আরেকদিন লাবণ্যকে সে একটি আংটি পরিয়ে দিয়েছিল- লাবণ্য সেদিন এটা ফিরিয়ে দেয়।
বইটার এক জায়গায় গিয়ে আমার খুব খারাপ লেগেছিল, কান্না চলে এসেছিল। অমিত যোগমায়াদের বাড়ি গেছে। কিন্তু যোগমায়ারা আর আগের বাড়িতে নেই। ‘ঘর বন্ধ, সবাই চলে গেছে, কোথায় গেছে তার কোনো ঠিকানা রেখে যায় নি।’ অমিত লাবণ্যের বসবার ঘরে গেল। ‘সেই ঘরটার মধ্যে বোবা একটা শূন্যতা। তাকে প্রশ্ন করলে কোন কথাই বলতে পারে না। সে একটা মূর্ছা, যে মূর্ছা কোনোদিনই আর ভাঙবে না।’ তারপর অমিত নিজের কুটিরে গেল। যোগমায়া যা যেমন রেখে গিয়েছিলেন তেমনি সব আছে। এমনকি, যোগমায়া অমিতকে দেয়া তাঁর কেদারাটিও ফিরিয়ে নিয়ে যান নি। যেন স্নেহ করেই এই কেদারাটি তিনি অমিতকে দিয়ে গেছেন। অমিত যেন শুনতে পেলো শান্ত মধুর স্বরে তাঁর সেই আহ্বান- ‘বাছা!’
আর সবচেয়ে খারাপ লেগেছে লাবণ্যর লেখা কবিতাটা, যা সে অমিতকে লক্ষ করে লিখেছিল :
কালের যাত্রার ধ্বনি শুনিতে কি পাও
তারই রথ নিত্যই উধাও
বুকের ভেতর মোচড় দিয়েছিল এ কথাটা- ‘হে বন্ধু, বিদায়।’ আমার সেই কচি মনে কেবলই মনে হত- এরপরও আরেকটু থাকতে পারত, এ কবিতার উত্তরে অমিতের কিছু একটা, তাহলে হয়ত মনটা প্রশমিত হত। এমন ভেবেছি আরো অনেক অনেক বার।
এরপর আরো বহুবার শেষের কবিতা পড়েছি। শেষের কবিতা সম্বন্ধে অনেকেই বলে থাকেন- এ উপন্যাস পাঠের জন্য কোনো নির্দিষ্ট বয়স নেই, এটা সর্বকালের সব বয়সের পাঠকের জন্য উৎকৃষ্ট ও যথোপযুক্ত রচনা- আপনি যে বয়সেই পড়বেন, মনে হবে আপনার বয়সের জন্যই এটা লেখা হয়েছে- আপনি যতবার পড়বেন, ততবারই এটা আপনার কাছে আনকোরা নতুন মনে হবে- মনে হবে এই কথাটা, এই লাইনটা তো আগের বার পড়ি নি।
নবম শ্রেণীর মাঝামাঝি সময় থেকে রবীন্দ্র সঙ্গীত আমাকে এমনভাবে পেয়ে বসল যে বলতে গেলে অন্য কোনো গানই আমার ভাল লাগত না। এই ভাল লাগার মূলে ছিল শেষের কবিতা, আর রবীন্দ্র সঙ্গীত রক্তের ভেতর ঢুকে যাওয়ার পর একদিন অনুভব করি- আমার রক্তকণিকায় শুধু গান আর সুরের তরঙ্গই বয়ে যাচ্ছে- অবিরাম অবিরল কলকল ছন্দে।
১-৮ মে ২০০৯
১৯ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৪:৪৮
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: প্রিয় বোকামন, এ লেখাটি আপনার বারবার পড়তে ইচ্ছে করছে জেনে খুব ভালো লাগছে। এ ব-দ্বীপের সন্তানেরা একই ধুলিবালিছাই গায়ে মেখে বড় হয়েছে, একই খালবিলপুকুর ও নদীতে সাঁতার কেটেছে, একই বাতাসে শরীর জুড়িয়েছে। এজন্য সবার কাহিনি প্রায় অভিন্ন। আপনি লিখলেও আপনার মাঝে আমাকে খুঁজবার প্রবণতা তীব্রতর হবে। মনে হবে- এ দেখি আমার কাহিনি!
নিজেকে খুঁজে দেখি - হতে পারে এ ইচ্ছের নাম।
আবারও ধন্যবাদ প্রিয় বোকামন।
২| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৮:১৭
বোকামন বলেছেন:
আপনার এই লেখাটি অনেক নস্টালজিক করছে .. আবার পড়লাম।
ভালো হত যদি ধুলিবালিছাই গায়ে আরো মাখানো যেত
ভালো হত যদি খালবিলপুকুর ও নদীতে আরো অনেক সাঁতার কাটা যেত
ভালো হত যদি এই বাংলার সবুজ বাতাসে আরো অনেকবার পেট বোঝাই করা যেত .......।
আপনার মত ওত সুন্দর করে কখনো লিখতে পারবো না জানি, তাই লেখাটি নিয়ে গেলাম। ভালো থাকুন সবসময় :-)
১৯ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১১:৫৭
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন:
ভালো হত যদি ধূলিবালিছাই গায়ে আরো মাখানো যেত
ভালো হত যদি খালবিলপুকুর ও নদীতে আরো অনেক সাঁতার কাটা যেত
ভালো হত যদি এই বাংলার সবুজ বাতাসে আরো অনেকবার পেট বোঝাই করা যেত----
বাহ্! আপনি তো দেখি একটা কবিতারই গোড়াপত্তন করে ফেললেন!
আপনার দ্বিতীয়বার আসায় খুব ভালো লাগছে। আপনার হাতও শক্তিশালী। তাই আপনার লাস্ট কথাগুলোকে বিনয় ও উদারতা হিসাবে বিবেচনা করে আমি অনুপ্রাণিত হবার সুযোগ নিলাম।
অনেক ধন্যবাদ প্রিয় বোকামন।
৩| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৯:৫২
মামুন রশিদ বলেছেন: আপনার প্রথম অনেক কিছুর সাথেই ৭১ এর সংযোগ দেখে আপ্লুত হয়েছি । প্রথম গান শোনা, প্রথম প্রিয় পতাকা হাতে নেয়া, প্রথম স্কুলের স্মৃতি- সত্যিই গর্ব করার মত ব্যাপার ।
সামান্যের জন্য মিস করেছি, আমার জন্ম পরের বছর ।
প্রথম সিনেমা দেখার গল্পটা পড়ে মজা পেয়েছি । আমি প্রথম সিনেমা দেখে মার খাইনি, কারণ ধরা পড়িনি
নবম শ্রেনীতে উঠে জেলা শহরে নতুন বই কেনার জন্য গিয়েছিলাম । পাঠ্য বইয়ের সাথে একটা 'আউট বই' কিনে এনেছিলাম কোন কিছু না বুঝেই । সেই থেকে আমি 'শেষের কবিতা'র সাথেই আছি । বাংলা সাহিত্যের চিরায়ত ক্লাসিকগুলো নিয়ে একটা মজার সিরিজ লিখেছিলাম, সেখানে এটাও ছিল..
" style="border:0;" />
অনেক অনেক ভাল লাগল আপনার নস্টালজিক 'প্রথম' সমূহ পড়ে ।
ভালোলাগা জানবেন কবি +++
২০ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১২:৩৪
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ মামুন ভাই।
আগের দিনে বেশিরভাগ পাঠকের প্রথম পড়া বইগুলো এরকম উচ্চমার্গীয় হবার কারণ আমার মতে- লাইব্রেরির সংখ্যা কম, পাঠকের সংখ্যা কম, সেজন্য বুকস্টলে বেছে বেছে ভালো বইগুলোই রেখে দেয়া হতো। রবীন্দ্রনাথের বদলে বঙ্কীমচন্দ্রের বইও প্রথম পড়া বই হওয়া বিচিত্র ছিল না। অবশ্য এর পরে দেখেছি শরৎ, ফাল্গুনী, নীহার রঞ্জন, আশুতোষ, বিমল মিত্র এঁদের পেপার-ব্যাক বইয়ে বাজার সয়লাব।
আপনার অভিজ্ঞতাও মজাদার - ধরা না পড়া, এবং মার না খাওয়া।
ধন্যবাদ আবারও।
৪| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৯:৫৫
মামুন রশিদ বলেছেন: লিংকটা কাজ করেনি । এটা দেখুন,
দোহাই তোদের, একটুকু চুপ কর । ভালবাসিবারে দে আমারে অবসর ।
২০ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১২:৩৫
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: লিংক পড়েই কমেন্ট করতে বসলাম। ওখানে যা লিখছি এখানে তা-ই রিপোস্ট করলাম
***
হাসতে হাসতে আমি শ্যা-----ষষষষষষষ
আপনার রসবোধে আমি মুগ্ধ। লেখার গুণে একটানে পড়ে ফেললাম, মাঝখানে হাসতে হাসতে কাহিলও হলাম
আবদুল্লাহ আবু সাইয়ীদ তাঁর এক প্রবন্ধে লিখেছেন, শেষের কবিতা দ্বারা রবিমামা পরকীয়া জায়েজ করে গেছেন
আর আমিও কি কম উদ্বুদ্ধ হয়েছি? সময় পেলে ঢুঁ মারুন এখানে আমরা মেয়েদের কথা মনে রাখি; মেয়েরা ভুলে গেছে এবং ওখানে প্রিয় বান্ধবীদের বিয়ে হয়ে গেলে
আরেকটা আইডিয়ার কথা বলি। আপনার পড়া বিখ্যাত গল্পগুলোকে সংক্ষেপে লিখে দেখুন নিজের ভাষায়, কেমন হয়
শুভ কামনা মামুন ভাই।
৫| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১০:৪৪
আম্মানসুরা বলেছেন: ভালো লাগল পড়ে। আপনার চমৎকার শৈশবের বর্ণনায় আমি কিছুটা ঈর্ষান্বিত! আমি বড় হয়েছি কাওয়ার শহর ঢাকাতে, বন্দী ঘরে বন্দী শৈশব আপনি ভাগ্যবান।
২০ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১২:৫১
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: অতীত দিনের স্মৃতি কেউ ভোলে না। আর অতীতের সবকিছুই মনে হয় মধুর, এমনকি ভয়াবহ কষ্টের দিনগুলোও। কষ্টের দিনগুলোর কথা ভাবি, নিজের অজান্তেই চোখ গলে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে, অথচ তা ভাবতে কত ভালো লাগে।
স্কুল লাইফ পর্যন্ত আমার গ্রামের বাড়িতেই কেটেছে। কলেজে ভর্তি হওয়ার পর বাড়ি ছাড়লাম, এরপর একনাগাড়ে ১৫ দিনের বেশি বাড়িতে থাকা সম্ভব হয়েছে কিনা মনে পড়ে না, এবং কর্মক্ষেত্রে ঢুকবার পর সারা বছরেও হয়তো ১৫ দিন বাড়িতে থাকা সম্ভব হয় নি। অথচ আমার মন কাঁদে, আড়িয়াল বিল আর পদ্মার উপনদীতে নৌকা বাইচের কথা মনে পড়লে বুক ভেঙে যায়। স্কুলের উত্তাল দিনগুলোর কথা মনে পড়লেই চিলিক দিয়ে বুকে ব্যথা জাগে। সেই যে আমার নানান রঙের দিনগুলো, সোনার খাঁচা ভেঙে ফেলে উড়ে গেলো, আকাশের সুনীলে তার ঝাপসা ডানা ঝাপটানো দেখি, আর শুধু চোখের জল ফেলি।
ধন্যবাদ আম্মানসুরা।
৬| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১১:৪১
স্বপ্নবাজ অভি বলেছেন: যা কিছু প্রথম আপ্লুত করে দিলো ভাই !
২০ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৩
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ অভি ভাই।
৭| ২০ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১২:০০
রোমেন রুমি বলেছেন: ভাল লাগা রইল সোনা ভাই ।
২০ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৩
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ রুমি ভাই।
৮| ২০ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১২:০৫
সেলিম আনোয়ার বলেছেন: আসলেই জীবনের প্রথম কথা গুলো গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম কি শব্দ বলেছিলাম তাও। প্রথম দেখা কার্টুন মনে হয় থান্ডার ক্যাটস।আর কিছু মনে নাই।
২০ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১:৫৭
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: চাকরির প্রথম দিন, প্রথম মাসের বেতন, প্রথম প্রেম, প্রথম চুম্বন, প্রথম সন্তান- ইত্যাদি ‘প্রথমগুলোও’ খুব স্মরণীয় হয়ে থাকতে পারে কারো কারো জীবনে।
ধন্যবাদ সেলিম আনোয়ার ভাই। ভালো থাকুন।
৯| ২০ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১:৩২
মোঃ ইসহাক খান বলেছেন: খুব চমৎকারভাবে বর্ণনা করেছেন। অসাধারণ।
২০ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ২:০৫
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ মোঃ ইসহাক খান।
১০| ২০ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ২:৪৪
আজ আমি কোথাও যাবো না বলেছেন: প্রথম যা কিছু তা আপ্লুত করলো!!
২০ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ২:১০
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: রম্য রচনায় আপনার দক্ষতায় আমি মুগ্ধ। গতরাতে আপনার বিড়ম্বনার কাহিনি পড়ে তো বিপদেই পড়ে গেলাম হাসতে হাসতে পেটের খিল বিকট আওয়াজ করে ফেটে গেলো
এ পোস্ট পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
১১| ২০ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৩:৫৫
ভিয়েনাস বলেছেন: আমার একটা ডাইলোগ আছে , যা কিছু প্রথম তাই ইতিহাস
আপনার যা প্রথম পড়ে নস্টালজিক হলাম। আমার বেড়ে উঠা গ্রামে সুতরাং মাঠ ঘাট আমাকে অনেক টানে।
প্রথম সিনেমা দেখাটা ছিল আমার জন্য স্মরনীয় । পারিবারিক একটা অনুষ্ঠানে সবাই একত্রিত হয়েছিল। সেই খুশি ধরে রাখার জন্য সবাই মিলে সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখবে বলে ঠিক করেছিল। সবাই সিনেমা হলে ঢুকলেও আমি ঢুকিনি । কারন এমন ঘুটঘুটে অন্ধকারে বসে থেকে সিনেমা দেখতে ভয় লাগছিল। গোঁ ধরেছিলাম ভিতরে ঢুকবোনা বলে। আমার জন্য সেদিন আমার ছোট মামারও সিনেমা দেখা হয়নি। তিনি আমাকে নিয়ে বাহিরে ঘুরাফেরা করেছিলেন।
২০ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ২:১৩
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন:
যা কিছু প্রথম তাই ইতিহাস। কথাটা মনে হয় সর্বাংশেই সঠিক। আর আপনার প্রথম সিনেমা দেখার অভিজ্ঞতা তো ইউনিক আপনার ছোটো মামার জন্য মায়া হচ্ছে। বেচারা আপনার জন্যই একটা সাংঘাতিক সিনেমা দর্শন থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন
ধন্যবাদ ভিয়েনাস।
১২| ২০ শে আগস্ট, ২০১৩ ভোর ৪:০০
জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: আমার মনে আছে, মাঠে ফুটবল খেলা হচ্ছিল। পাশেই একটা হলুদ কি সাদা বিল্ডিঙের ছাদে মাইকে বাজছিল, একেলা না জানা...
তখনও ঞ্জানা হয় নাই স্কুল-বই বা পড়াশুনা বলে আরো কিছু ব্যাপার আছে।
একদিন বাবার সঙ্গে গিয়ে স্কুলটা দেখে এসে জানতে পেরেছিলাম বেবিক্লাসে ভর্তি হয়েছি। তার অল্প কিছুদিন পরই সেই ২৫শে মার্চ।
গুলিস্তান হলে প্রথম ছবি দেখি সংগ্রাম। আমি তখন ফোর-ফাইভের ছাত্র। বড় ভাইয়ের সঙ্গে গিয়েছিলাম।
প্রথম রবীন্দ্রনাথের বই পড়ি ক্লাস নাইনে। নৌকাডুবি।
২০ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ২:২১
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আপনার প্রথমগুলো তো দেখছি ঐতিহাসিক। ‘সংগ্রাম’ ছবি দেখেছি কিনা মনে পড়ে না, তবে এর গান মনে হয় শুনেছি। ‘একেলা না জানা’ গানটা তাহলে ইউটিউব থেকে শুনতে হয় পুরোনো দিনের গান তো, ওপেন করেই হয়তো দেখবো এটা শুনেছি। হিন্দি বুঝি না তবে মাইকের বদৌলতে বাল্যকালে রাতভর ঘুমের ভিতরেও বিয়েবাড়ির গান শুনতে হতো বলে অনেক গানের সুরই মুখস্থ, যদিও গানের (হিন্দি) কলি বলা আমার পক্ষে একেবারেই অসম্ভব
গুলিস্তান সিনেমা হলে ৮৮/৮৯ সনের দিকে সিনেমা দেখেছি বেশ ক’বার। এখন ওখানে মার্কেট
নৌকাডুবি পড়েছি ইন্টারমিডিয়েট পাশ করার কিছু আগে বা কিছু পরে, সঠিক মনে নেই।
আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ প্রিয় জুলিয়ান ভাই। ভালো থাকুন।
১৩| ২০ শে আগস্ট, ২০১৩ ভোর ৫:২০
দিকভ্রান্ত*পথিক বলেছেন: সময় নিয়ে পড়লাম আর ভারাক্রান্ত হলাম নস্টালজিয়ায়! প্রথম কতো কিছুই তো মনে নেই!
+++++++++++++++++++++++
আর অধমের ব্লগে আপনার দেখা পাই নি, আপনি অসামান্য সুলেখক, আশা করি আমাদের গাইড করবেন।
ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইলো।
২০ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৩:১১
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: এতোগুলো প্লাসের নিচে যা লিখলেন তা পড়ে তো লজ্জায় মরে যাচ্ছি!
আর আপনার ব্লগে যাই নি কেন তার কারণ খুঁজে পেলাম না। আপনাকে অনুসরণ করলাম এবং সর্বশেষ পোস্টটি পড়েও এলাম।
এ নিকটার মাঝখানে একটা স্টার দেখতে পাচ্ছি, আগে ছিল না! বদল!!!
যাক, আপনাকে পেয়ে ভালো লাগলো। পোস্ট পড়া ও কমেন্টের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
১৪| ২০ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ৯:০২
কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:
মন্ত্র মুগ্ধের মত পড়ে গেলাম আর মনে মনে আপনার শৈশবের ছবি আঁকার চেষ্টা করলাম। পেলাম একজন চমৎকার মানুষকে।
২০ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৫:২১
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ প্রিয় কান্ডারী অথর্ব। মন্তব্যে আপ্লুত। ভালো থাকুন।
১৫| ২০ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১০:১৫
মুহম্মদ ফজলুল করিম বলেছেন: প্রথম রবীন্দ্রনাথ "চোখের বালি".....
এখন বেশি পড়ি অনুবাদ , বিশেষ করে ছোট গল্প।আন্তন চেখব ,ও হেনরি , জেমস জয়েস..কেন জানি এদের লেখাগুলো খুব ভাল লাগে।
প্রথম গান - আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ...
প্রথম গান মনে নাই, তবে যে গান প্রথম হৃদয় ভেঙ্গে দিয়েছিল - আমার পরাণ ও যাহা চায়...
শুভেচ্ছা রইল
২০ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৫:৩৬
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: চোখের বালি পড়েছি খুব বেশিদিন আগে নয়, খুব সম্ভবত ৯৯ সনের শেষের দিকে। গল্পটার এক জায়গায় গিয়ে এটিকে ত্রুটিপূর্ণ মনে হয়েছে। যাক, সেটা আমার ক্ষুদ্র দৃষ্টিভঙ্গি হওয়াটাই স্বাভাবিক।
আমরা ক্লাস নাইনে বা টেনে পড়ার সময় স্কুলে এক সুদর্শন শিক্ষক যোগদান করলেন। রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী অথবা মৃত্যুবার্ষিকীতে যে অনুষ্ঠান হলো, সেখানে তিনি গর্বের সাথে ঘোষণা করলেন, তিনি একটা রবীন্দ্র সঙ্গীত গাইবেন। ওরেব্বাপসরে! রবীন্দ্র সঙ্গীত গাওয়া চাট্টিখানি কথা না! মেয়েরা নড়েচড়ে বসলো। নায়ক ছেলেরা স্যারের প্রতি হিংসায় জ্বলতে লাগলো- মেয়েরা আজ ক্লাসের ছেলেগুলোকে ভেড়া বানিয়ে স্যারের প্রেমে পড়ে যাবে।
স্যার সুর তুললেন- আমারও পরাণও যাহা চায়.....
ওহ, সে কি শুরু! সবাই একদৃষ্টিতে স্যারের দিকে তাকিয়ে। কিন্তু হায়, শেষ পর্যন্ত তাঁর গানটা ফ্লপ হলো আমাদের যুবকেরা স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লো।
ঐদিনই প্রথম আমি এ গানটা শুনেছিলাম।
শুভেচ্ছা আপনার জন্যও।
১৬| ২০ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১২:১৯
অদৃশ্য বলেছেন:
কবি
আপনার প্রথমগুলো জানতে পারলাম... খুব সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করলেন সব... তাইতো পাঠে আনন্দ পেয়েছি...
আপনি এমন একটি সময়ে মাকে হারিয়েছেন যখন মানুষের ভেতরে ব্যথা তৈরী হওয়া শুরু করে... পুরো স্মৃতিচারণায় খুব মজা পেলেও আপনার মাতৃবিয়োগের ব্যপারটা থেকে আর বেরোতে পারলাম না শেষ পর্যন্ত থাকলো...
আপনার অভিজ্ঞতার আরও অনেক কিছু সামনে জানবার ইচ্ছা রাখলাম, আশাকরি সময়ে আপনি তা শেয়ার করবেন আমাদের সাথে...
শুভকামনা...
২০ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৫:৫৩
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: প্রিয় অদৃষ্টের উপস্থিতি সর্বদাই অনেক আনন্দদায়ক।
আমার মাকে আমার চোখের সামনে ছটফট করতে করতে মরে যেতে দেখেছি। মৃত্যুযন্ত্রণায় মানুষ আর্তনাদ করতে করতে কীভাবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে- সেই একবারই, আমার মায়ের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে দেখেছি।
মা‘র মৃত্যুর পর কিছুই ভালো লাগতো না। কিছুদিন মনে হতো, হয়তো স্বপ্ন দেখছি, কতো কষ্টের স্বপ্নই তো দেখি, এটাও সেরকম কিছু।
রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে মনে হতো, এই বুঝি মা আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলবে, ও বাজান, কই যাছ?
কোনো দুঃখিনী নারীকে দেখলেই মন হুহু করে উঠতো, হায়, আমার মা মরে গিয়ে এ নারীর শরীর নিয়ে দুনিয়াতে হাজির হয় নি তো!
মা না থাকলে কোনো কিছু ভালো লাগে না। মা না থাকলে পৃথিবী শূন্য মনে হয়। মা না থাকলে বাতাস হু হু করে কাঁদে, চারদিকে শুধু হাহাকার ভেসে বেড়ায়। মা না থাকলে নিজেকে চেনা যায় না। মা না থাকলে মায়ের কাছে চলে যেতে সাধ হয়।
অদৃশ্যকে ধন্যবাদ। শুভ কামনা।
১৭| ২০ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৫
সায়েম মুন বলেছেন: আপনার বিস্তারিত প্রথম ঘটনাবলির লিস্ট পড়ে কিছু স্মৃতি মাথাচাড়া দিলো।
২০ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৫:৫৫
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আপনার স্মৃতিচারণ পড়ার সাধ জাগছে। এ পোস্ট পড়ার জন্য ধন্যবাদ নিন কবি।
১৮| ২০ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১:০৪
মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন: বেশ মজার বিষয়ে আপনি ‘প্রথম’ অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন!
আমি জাতীয় সংগীত প্রথম শুনেছি রেডিওতে, গেয়েছি প্রাইমারি স্কুল জীবনে। পতাকা ধরেছি অনেক পরে। উড়ন্ত পতাকা দেখে এখনও গা শিউরে ওঠে! ‘শেষের কবিতা’ প্রথমে পড়ে মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝি নি। পড়ত হবেই, এসিদ্ধান্তে অটল থেকে তৃতীয়বারে কিছু বুঝেছি। তারপর কতবার পড়েছি খেয়াল নেই। প্রথম সিনেমা দেখার সময় বিরতিতেই ‘সিনেমা শেষ’ ভেবে বের হয়ে এসেছি! দূর সম্পর্কের এক চাচা আমাকে শিখিয়ে দিলেন, তখন আবার ফিরে গেলাম। ‘সারেন্ডার’ সিনেমা
প্রথম স্কুলে যাওয়ার ঘটনা যেরকম ঘটনাবহুল নয়।
২০ শে আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩১
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: সিনেমা দেখতে হলে ঢুকে বিরতির সময়ে বের হয়ে আসাটা খুব মজা লাগলো 'সারেন্ডার‘ ছবিটা দেখা হয় নি। আফসোস থাকলো
আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ। শুভ কামনা।
১৯| ২০ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ২:৪০
অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: আপনার আনন্দময় শৈশবের কথা শুনে ঈর্ষা বোধ করছি। মানে স্কুলে যাবার আগের অধ্যায়ে যেভাবে লিখেছেন তাতে তো মনে হচ্ছে জীবন বেশ সুখের ছিল। আবার লুকিয়ে লুকিয়ে সিনেমা হলে সিনেমা দেখা।
আমার প্রথম কি কি কিছুই মনে নেই । শৈশবের মতো এই বর্তমানের সময়টাও আনন্দময় হোক এই কামনা করি ভাইয়া আপনার জন্য।
২০ শে আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪৪
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: শিশুকালটাই মনে হয় সবচেয়ে আনন্দের। এ সময়টা শুধু চাওয়া আর পাওয়ার সময়। কোনো চিন্তা নেই, ভাবনা নেই। পড়ালেখা নেই। তার কোনো সংসার নেই, কিন্তু সে নিজেই সংসারের একটা বিরাট স্বপ্ন। আমার প্রথম গান শোনা আর পতাকা উড়ানোর সময়টা এমনই, যখন খেলাধূলাই ছিল আমার সবচেয়ে বড় কাজ। জীবনের কষ্টকর বাস্তবতা কীরূপ তা বুঝবার বয়স আমার তখনও হয় নি।
স্কুলে যাওয়ার প্রথম দিনেই মূলত জীবনের দ্বিতীয় ধাপে পা ফেলা হলো। এরপর সিনেমা দেখার সময়, বই পড়র সময়- মধুর, কিন্তু সংসারের টানাপোড়েন, স্বপ্নের হাতছানি- আমাকে জীবনের গভীরে টেনে নিয়ে যায়। ঝড় ও তুফান, তুমুল বৃষ্টি ও প্রখর রোদ শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে। এসব যখন মনে পড়ে, আমার শৈশবের ছোট্ট আমি‘র প্রতি প্রচণ্ড এক মায়ায় মন কেঁদে ওঠে।
ধন্যবাদ আপু।
২০| ২০ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৩:০৪
সোমহেপি বলেছেন: অসাধারণ বর্ণনা সোনা ভাই।
আমিও ভদ্র হতে চাইনি।পড়ালেখা যে কি পরমাণ তিতা আমি ছাড়া আর কেউ জানে না।বালের পড়ালেখা কইরাইতো জীবনডা ফাইসা গেলো।চকে যাইতাম পইখ তাড়াতাম।ঘাস কাটতাম।পোলাপাইনের লগে কুস্তি লড়তাম।খিস্তি খেউরের প্রতিযোগিতা করতাম।কোন হালায় আমার চে বেশি গালি পারতো না।গাছ বাউনের উস্তাদ আছিলাম।কয়দিন গাছ থাইকা গাছে চড়ার কাঠবিড়ালি প্রশিক্ষণ নিতে গিয়া পইড়া গেছি।আর কানমলা খাইছি।আমি কি বাপ মায়ের কথা হুনার পাত্র ?হুনি কি সাধে !তারা েয ভাত দেওনের মালিক!
বাল নাইলে দুনিয়াডা গাঙ কইরা লাইতাম।চেড যা থাকতো কপালে।
আপনার মশৈশবের সাথে আমার শৈশবের মিল আছে ভাইজান।তবে আপনে বেশি আগে জন্মাইছেন।এইডা ঠিক হয় নাই।
২০ শে আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০৪
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আমি দেখি পুরাই থ বনে গেলাম! এ দেখি আমার জীবনের প্রতিচ্ছবি!!! ‘চেড’ শব্দটা শুনে হাসছি। আমাদের এলাকার বাইরে এই প্রথম অন্য কারো মুখে এই শব্দটা আমরা অবশ্য উচ্চারণ করি ‘চ্যাড’
আপনার চেয়ে বেশি আগে জন্মগ্রহণ করে বিরাট অন্যায় করে ফেলেছি। মাফ করে দেন
খুব মজা পেলাম ইমন ভাই আপনার কমেন্ট পড়ে। ভালো থাকুন।
২১| ২০ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৩:১৪
আশরাফুল ইসলাম দূর্জয় বলেছেন:
সময়কালের পার্থক্য থাকলেও আপনার অনেক লেখা এমনকি এই লেখার কিছু বিষয়ের সাথেও মিলে যায়।
কৃষক বাবার সন্তান বলেই হয়তো, গ্রাম আর লোকজ বাংলার কথা আপনার লেখায় ফিরে আসে দারুনভাবে।
আমিও গ্রামে জন্ম বেড়ে উঠা, কৃষান-কৃষানির উঠোনের ধুলো শ্বাসে নিয়ে বড় হওয়া, শুধু আপনার মত লিখতে পারি না।
আপনার জন্ম সাল জানা নেই, কিন্তু যে জিনিসটি যে কারো অহঙ্কার করার মতো হতে পারে, একাত্তরের সাথে যোগ-বিয়োগে দৃশ্যপট ভেসে আসা বেড়ে উঠা, প্রথম ঘটনাগুলোর।
আর যে প্রথম হয়ে উঠা বিষয়গুলো বললেন, সবকয়টাই গর্ব করার মতো। আর আপনার চমৎকার লেখনিতে লেখাগুলো আমাদের হয়ে উঠে, পাঠকের হয়ে উঠে। বারবার পড়তে ইচ্ছে হয়।
২০ শে আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২৬
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আমার জন্মদিনের সঠিক ইতিহাস আমার জানা নেই। আমার ছেলেমেয়েদের জন্মদিন যেভাবে লিখে রাখা হয়েছে, আমারটা সেভাবে লিখে রাখেন নি আমার লেখাপড়া-না-জানা মা-বাবা। সেদিন খুব তুফান ছিল দিনভর। সন্ধ্যার দিকে তুমুল বৃষ্টি। মাঝরাতের কিছু আগে আমি ভূমিষ্ঠ হয়েছিলাম। এসব কথা আমার মা বলতেন। দাদিও বলতেন। মা মারা গেছেন ৩৩ বছর, দাদি প্রায় ৩৯। মা জীবিত থাকাকালে চাঁদ আর ঝড়বৃষ্টির দিনের হিসেব করে জন্মদিন বের করার চেষ্টা করেছি খুব। কোনো সুরাহা হয় নি।
সন-তারিখ ভুল হতে পারে, আমার জন্মটা নিশ্চয়ই ভুল নয়। নিছক দাপ্তরিক কাজের জন্যই একটা জন্মতারিখ থাকতে হয় যদি ধরে নিই, তবে আমার জন্মতারিখটাও সেরকমই ধরে নেয়া আর কী। ছোটোকালে অন্যের চেয়ে আমি বড়- এরকম একটা ঠাণ্ডা প্রতিযোগিতা চলতো আমাদের মধ্যে। বড়ত্বের প্রমাণ স্বরূপ বিঘত আর হাতের দৈর্ঘ্য মাপতাম। একচুল লম্বা হলেই গলা ফাটিয়ে বলতাম, ঐ চুপ, আমি তর থাইক্ক্যা বড়।
ক্লাস ফাইভ পাশ করার পর মায়ের হিসাব অনুযায়ী জানতে পারলাম আমার বয়স ১২ বছর প্লাস। হেড স্যারের কাছে যখন প্রাইমারি পাশের সার্টিফিকেট আনতে গেলাম, হিসাব করে দেখলাম মায়ের হিসাবের চেয়েও তিনি প্রায় দেড় বা দু বছর কমিয়ে জন্মতারিখ লিখে দিলেন। আমার তখন অনেক আফসোস হয়েছিল। সেটাই আমার অফিশিয়াল জন্মতারিখ। প্রকৃত বয়স হয়তো এর চেয়ে দেড় বা দু বছর হতে পারে।
আপনার জন্ম সাল জানা নেই, কিন্তু যে জিনিসটি যে কারো অহঙ্কার করার মতো হতে পারে। আদতেই এ ব্যাপারটা নিয়ে আমি অনেক গর্ব করি। আমার চাচা একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, সেটাও আমার জন্য এক বিরাট গর্ব। এ নিয়ে আমার একটা পোস্ট আছে, যা আপনি পড়েছেন। ১৯৭১ : অস্পষ্ট স্মৃতি থেকে
আপনার কমেন্টে অনেক ভালো লাগা আশরাফুল ভাই। শুভ কামনা।
২২| ২০ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৪:৩৬
প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: বারবার পড়তে চাই স্মৃতিগুলোকে, নেড়েচেড়ে দেখতে চাই। তাই প্রিয়তে রাখলাম।
২০ শে আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২৭
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ প্রোফেসর সাহেব। ভালো থাকুন।
২৩| ২০ শে আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৫৭
ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: চমৎকার!!!
অনেক কিছুই মনে পড়লো হঠাত.....
২০ শে আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২৭
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ইরফান আহমেদ বর্ষণ। ভালো থাকুন।
২৪| ২২ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১২:০৪
নুসরাতসুলতানা বলেছেন: অসম্ভব ভাল লাগলো লেখাটা। এ লেখার সাথে প্রত্যেক পাঠক নিজেকে মেলাবেন । ভাববেন তার নিজের শৈশব কেমন ছিল, তার প্রথম সমূহকে মিলিয়ে দেখবেন। আমিও মেলাতে চেষ্টা করেছি। আপনার মত আমার স্মৃতি শক্তি ভাল নয় । স্কুলের প্রথম দিন মনে নেই - তবে আবছা মনে পড়ে ক্লাসে হাতে একটি খেলনা নিয়ে বসে আছি , নার্সারীর প্রথম দিন সেটা ছিল কিনা জানিনা । প্রথম গান শোনা আর গাওয়া ' আমার সোনার বাংলা ' ছাড়া আর কি হতে পারে। প্রথম পতাকা হাতে নেওয়ার দিন মেলাতে গিয়ে মনে পড়ে গেল ছোটবেলায় ১৬ ই ডিসেম্বর সকালে পতাকা আর লাঠি নিয়ে ছাদে চলে যেতাম, আর কি কষ্ট করতাম ছাদের রেলিং এর সাথে লাঠি আটকিয়ে পতাকা ওড়ানোর জন্য !নজরুলের কবিতা দিয়ে কবিতা পড়া আরম্ভ। অনেক পরে ৭ম বা ৮ম শ্রেণীতে গীতান্জলী দিয়ে রবীন্দ্রনাথ কে পড়া শুরু। আহ , কি চমৎকার সেদিন গুলো মনে করিয়ে দিলেন।
২২ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১০:৫০
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: প্রথম গান শোনা আর গাওয়া ' আমার সোনার বাংলা ' ছাড়া আর কি হতে পারে। কথাটা দারুণ বলেছেন। আজকালকার দিনে বাচ্চারা যে-হারে কার্টুন দেখে, বা অন্যান্য প্রোগ্রাম, কথা বলতে পারার আগেই তারা গানের সাথে পরিচিত হয়ে যায়, টিভিতে চলমান গানের সাথে ন্যাংটো শ্রীযুত দোলনায় শুয়ে শুয়ে হাত-পা ছুঁড়ে নাচতে থাকে আমাদের সময়টা এমন ছিল যে, একটা পাড়ায় কারো কাছে রেডিও থাকলে বিকেলে বা সন্ধ্যায় গোল হয়ে সেই রেডিও শোনা ছিল ব্যাপক বিনোদনের ব্যাপার, তাও একটু বড় হবার পর। তারপর বাচ্চারা স্কুলে গিয়ে নিয়মিত দুটো বিষয়ের সাথে পরিচিত হতো- ১) প্রধান শিক্ষক কতৃক জাতীয় পতাকা উত্তোলনের দৃশ্য, সেই সাথে সম্মিলিত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনা; ২) জাতীয় সঙ্গীত শেষে সামনে ডান হাত প্রসারিত করে সম্মিলিত কণ্ঠে শপথবাক্য পাঠ- আমি শপথ করিতেছি যে-----। এজন্য স্কুলপড়ুয়া বাচ্চারা অন্য কোনো গানের সাথে পরিচিত না হলেও অন্তত ‘আমার সোনার বাংলা’র সাথে পরিচিত ছিল, এবং অবধারিতভাবে এটিই অনেকের জীবনে শোনা প্রথম গান ছিল। বর্তমানের শিশু বাচ্চারা এ গানটা শোনার জন্য এত সুযোগ পায় না, তা আমার ৩ সন্তানের সাথে কথা বলেই বুঝতে পারি।
আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
একটি কথা না বললেই নয়, আপনার উপস্থিতি এবং সুন্দর কমেন্ট আমার খুব ভালো লাগছে, এবং অনুপ্রাণিত বোধ করছি। কৃতজ্ঞতা থাকলো।
ভালো থাকুন আপু।
২৫| ২২ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ৯:২৫
আরজু পনি বলেছেন:
স্কুল পর্বটা দারুণ লাগলো ।
দারুণ বললে কম হবে ...অসাধারণ !
শেষের কবিতা নিয়ে আমার লেখার ইচ্ছে আছে.... লেখার সময় মনে থাকলে আপনার অঙশটুকু থেকে কিছু নিতে পারি আগেই অনুমতি চেয়ে রাখলাম ।।
আমার তো মনে হচ্ছে এভাবে তেমন কিছুই মনে নেই , নখ কামড়াতে কামড়াতে বাড়ি যেতে যেতে ভাববো কি প্রথম ? কি প্রথম ?
২২ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১১:১০
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আপনি ‘দারুণ’ বললে সেটা ‘দারুণ’ না হয়ে আর যায়ই না। এরপর যদি ‘অসাধারণ’ বলে বসেন, তাহলে আমাকে আর কে পায়! এমন উদার মন্তব্য দ্বারা আমি কাউকে উদ্দীপ্ত করতে পারি না, এটা আমার বড় ব্যর্থতা ও বেদনার কারণ। আপনাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি আপু।
এখান থেকে শেষের কবিতাই নয় শুধু, যা-খুশি সব নিয়ে নিন, স্বত্ব ছেড়ে দিলাম বিনা শর্তে উদার হবার চেষ্টা করছি আর কী
আমি ছোটোবেলায়, বয়স ৩ বছর হয়েছে কি হয় নি, এমন সময়ে বর্ষায় বাড়ি থেকে নেমে, তাও যেদিকটায় বেশ জঙ্গল আর আগাছা ছিল সেদিক দিয়ে পানিতে পড়ে গিয়েছিলাম। আমার শুধু এটুকু মনে আছে যে, পানিতে পড়ে পানি খেতে খেতে চোখ বড় করে সামনে যা কিছু পাই হাতড়ে ধরে পানি থেকে মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিলাম। এরপর কীভাবে বেঁচে উঠেছিলাম জানি না। জীবনে সাঁতার শেখার আগ পর্যন্ত এতোবার পানিতে ডুবতে ডুবতে বেঁচে উঠেছি যে কোনো ঘটনাই আর বিশেষভাবে মনে নেই, বা মা-বাবা-চাচি-দাদিরাও এ নিয়ে তেমন গল্প করেন নি আমি বড় হবার পর। এতো ছোটো বয়সের কথা কারো মনে থাকে! এ নিয়ে একদিন আমাদের কলিগদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। এক কলিগ বলে উঠলেন, ছোটোবেলায় মায়ের স্তন্যপানের অনেক স্মৃতি তার এখনও অবিকল মনে পড়ে; এবং তিনি বললেন যে তাঁর ধারণা ছিল এটি সবারই মনে থাকে, এমনকি বড় হবার পরও।
আমার মেয়েকে যেদিন প্রথম স্কার্ট আর টপ্স পরালাম, ও কিছুই বোঝে না, কিন্তু সেটি পরে যেরূপ উচ্ছ্বসিত হয়েছিল তা স্বর্গীয়। তার কিছুদিন পর হাঁটবার জন্য জুতো (কোলের বাচ্চাকে যে জুতো দেয়া হয় তা না) কিনে দিলাম। সে অনেক দিন পর্যন্ত রাতে ঘুমোবার সয়ে জুতো জোড়া কোলে নিয়ে ঘুমাতো।
প্রথম বাবা বা মা হবার আনন্দ, সন্তানের প্রথম হাঁটবার বা বসবার দিন, প্রথম কথা বলবার দিন, অর্থাৎ নিজের যা কিছু প্রথম মনে না থাকলেও সন্তানের সবগুলো প্রথম নিয়ে ভাবলে আমার মনে হয় নিজের প্রথমসকলের চেয়েও আরও গভীর সুখ ও আনন্দ পাওয়া যায়।
ভালো থাকুন আপু।
২৬| ২২ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ৯:৫১
সেলিম আনোয়ার বলেছেন: আমার প্রথম ব্যাংক জবে জয়েন করার কথা না শেয়ার করে পারছি না। দিনটি ছিল 25 ফ্রেব্রুয়ারী,2009। আমার যাত্রা সিলেট অভিমুখে। ডিপার্টমেন্টের এক স্যার আমাকে লিফট দিলেন।তার মাইক্রোতে।আসলে তিনি যে বিষয়ে গবেষনা করতে যাবেন সেটির মুল গবেষক ছিলাম আমি।সেখান থেকে ব্যাংক এ সিনিয়র অফিসার পদে যোগদান করতে যাচ্ছি।পথে যাচ্ছি এমন সময় খরব এলো বিডিআর সংঘর্ষ।ভয়াবহ বিপর্যর হওয়ার সম্ভাবনা।বাসা থেকে ক্রমাগত ফোন আসতে থাকলো।ফোনের চার্জ ই শেষ হয়ে গেল।স্যার ব্যাপক ঘাবড়িয়ে গেছেন।বর্ডার এড়িয়া খুব খারাপ।যেতে যেতে দেরী হয়ে গেল।সেদিন জয়েন করা হলো না।অফিসের জিএম থেকে পিয়ন সবাই প্রমোদ গুনছেন।জয়েন করলাম 26 তারিখ।মানুষ জয়েন করে আনন্দ নিয়ে আর আমি জয়েন করেছিলাম দেশ গেলো দেশ গেলো বলে। এমন অভিজ্ঞতা কয়জনের আছে কে জানে?সেটা আমার প্রথম জয়েন।
২৩ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ২:২৩
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে নৃশংস, ভয়াবহ, ঘৃণিত ও করুণ একটা দিনে আপনার কর্মযাত্রা শুরু হয়েছিল। ঐদিন আমারও বিভিন্ন আত্মীয়স্বজন ও সহকর্মী বিভিন্ন জায়গায় যাত্রা করেছিল, এবং পিলখানার অদূরে ঢাকা কলেজের পাশেই আমার এক ফ্রেন্ড সপরিবারে বসবাস করছিল। আমি বাসায় বসেই আতঙ্কে কাঁপছিলাম। আমার কোনো আত্মীয়স্বজন বা ফ্রেন্ড কোনোপ্রকার বিপদে পড়েন নি, এটাই আল্লাহ্র অশেষ রহমত।
আপনার চাকরির প্রথম দিনটা কোনোদিন ভুলবার নয়।
যাই হোক, আশা করি ব্যাংকজব খুব ইনজয় করছেন। ব্যাংকজব আমারও অনেক প্রিয়
আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ সেলিম আনোয়ার ভাই।
শুভ কামনা।
২৭| ২২ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১০:০৯
ড. জেকিল বলেছেন: লেখাটার মধ্যে কেমন জানি নেশা আছে, পড়ার সময় একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম। অনেক সুন্দর বর্ণনার কৌশল।
২৩ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ২:৩২
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ ড. জেকিল। কেমন আছেন? আপনার চাকরির প্রথম দিন কেমন ছিল জানতে ইচ্ছে করছে। নিশ্চয়ই খুব ইনজয় করছেন! নতুন জীবনও খুব মধুময় কাটছে আশা করি।
শুভ কামনা।
২৮| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১২:২৮
সেলিম আনোয়ার বলেছেন: আসলে ব্যাংক জবটা আমি ছেড়ে অন্য জব করছি।আমার প্রথম হলে সিনামা দেখা হলো বসুন্ধরা সিনে প্লাস। ছবির নাম শাস্তি।কবি গুরুর শাস্তি অবলম্বণে। সেটি দারুণ অভিজ্ঞতা। ফরীদি নাটক করা প্রায় ছেড়ে দিয়ে পুরো দস্তুর সিনামা করা শুরু করলে খুব বিরক্ত হয়েছিলাম।তারপরও ঘাতক সিনেমাটা হলে ঘিয়ে দেখতে গিয়েও বলাকা হলে ঢুকিনি ।গেট থেকে ব্যাক।আমার ঢাকা কলেজের সকল বন্দু ছবিটি দেখেছিল। শুধু মাত্র ফরীদির জন্য বিলিভ! ফরীদির নাটকের ভক্ত যারা তারা অনেকে হলে যাওয়া শুরু করেছিল ফরীদির অভিনয় দেখার জন্য।যাই হোক একটা বিদেশী কলিগ খুব করে ধরলো বাংলা সিনেমা দেখবে।তখন ছবিটি দেখি ।আফটার দেশের ছবি আর হল সম্পকে তার ভালএকটা ধারণা হয় যাতে। সেএক দারুণ অভিজ্ঞতা।
৩১ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১০:৫৬
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: মজার কথা হলো, আপনার প্রোফাইল পিকচার দেখলেই হঠাৎ মনে হয় হুমায়ুন ফরিদী বুঝি সকলের মতো আমারও প্রিয় অভিনেতা ছিলেন তিনি। ভিলেনের অভিনয়ে এক ধরনের নতুন মাত্রা সংযোজন করেছিলেন হুমায়ুন ফরিদী। তবে, ‘দহন’সহ অন্যান্য বিকল্প ধারার ছবিতে নায়ক হিসাবে তাঁর অভিনয় দর্শক-হৃদয়ে দাগ কেটেছিল, যা ভুলবার নয়।
ধন্যবাদ সেলিম আনোয়ার ভাই।
২৯| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৫:১৮
কয়েস সামী বলেছেন: আপনার প্রথম সবকিছু জেনে আমিও আমার প্রথম সবকিছু স্মরন করার চেষ্টা করলাম। নাহ, মনে পড়ছে অনেক কিছুই কিন্তু পরক্ষণেই মনে হচ্ছে না ওটা আমার প্রথম ছিল না। তবে প্রথম প্রেম খুব মনে পড়ে! একদিন বলা যাবে।
৩১ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১০:৫৭
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আপনার প্রথম প্রেম শুনবার অপেক্ষায় থাকলাম কয়েস সামী ভাই।
৩০| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৮:১৯
শান্তির দেবদূত বলেছেন: চমৎকার লেখা! তন্ময় হয়ে পড়লাম। প্রথম রবীন্দ্রনাথের অংশটুকু বেশি ভাল লেগেছে। আমিও ররবীন্দ্রনাথে ডুবে ছিলাম ঐবয়সে তাই হয়ত। এখনো রবীন্দ্রনাথেই মগ্ন আছি।
৩১ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১০:৫৮
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ধন্যবাদ শান্তির দেবদূত।
৩১| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১২:৩০
নুসরাতসুলতানা বলেছেন: আপনার রিপ্লাই পড়ে নিঃসন্দেহে সম্মানিত বোধ করছি। লেখকের কৃতজ্ঞতা - অনেক সম্মানের। রিপ্লাইটা পড়তে পড়তে অনেক গুলো কথা মনে পড়ে গেল। সেই স্কুল জীবন হতে বই আর গান সংগ্রহ শুরু করি - মোটামুটি ভালই একটা সংগ্রহ দাড়িয়ে যায়। একটা সময় পর হঠাৎ লক্ষ্য করলাম পড়াশুনা আর চাকরীর সুবাদে দেশে -বিদেশে ছুটাছুটি করতে করতে আমার সংগ্রহশালা প্রায় শূণ্য হয়ে গেছে - বই , গানের সংগ্রহ বেহাত বা নষ্ট হয়ে গেছে। এমনকি অটোগ্রাফ বইটিও হারিয়ে ফেলেছি। কাজের জন্য পিসিতে বসতেই হয় । একসময় সামু ব্লগ নজরে এলো , সিরাজ সাঁই এর গানের ব্লগ দেখে মনে হল পুরান দিনের গান আর শোনা হয়না - বইমেলা ছাড়া বই কেনা - পড়া হয়না । অথচ প্রফেশনের বাইরে কিছু পড়বেনা এটা খুব অবাক করতো। এখন সময় পেলেই চেষ্টা করি পুরানো অভ্যাসে ফিরতে। ব্লগে সবার লেখা পড়ার সময় করতে পারিনা।কিন্তু আপনাদের মত ভাল কিছু লেখকের লেখা পড়তে চেষটা করি , নুতন কি গান দেয়া হলো তা দেখি। সুতরাং লেখক , কৃতজ্ঞতা আপনাদের নয় , আমরা পাঠকদের কৃতজ্ঞতা আপনাদের প্রতি - চমৎকার সব লেখার জন্য। ভাল থাকবেন , অনেক ধন্যবাদ।
৩১ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১১:০২
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আপনার কমেন্টে আবারও মুগ্ধ হলাম। অনেক ভালো থাকুন।
৩২| ৩০ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১:৫৯
অলওয়েজ ড্রিম বলেছেন: আপনাকে তো আমার খুব হিংসা হচ্ছে সোনা ভাই। আপনার সব প্রথম মনে আছে আর আমার কোনো প্রথম মনে নেই। এমন কি যেই মেয়েটা আমাকে সর্বপ্রথম গর্বিত হওয়ার সুযোগ দিয়েছিল তার নামটা এমন কি মুখটাও ভুলে গেছি। আমি বড় ভুলো রে ভাই। সব ভুলে বসে থাকি।
"হাজার বছর যেন বেঁচে আছি এত স্মৃতি জমেছে আমার"
তবুও জমিয়ে রাখি কারুনের মতো
তবুও আক্ষেপ আছে, নেই
প্রথমার মুখ মনে নেই।
একটি না থাকা শুধু এই
অথচ ভুলি না কিছুতেইঃ
নেই!
প্রথমার মুখ মনে নেই।
৩১ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১১:৪৪
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: হিংসা তো আমারও হচ্ছে আপনার প্রতি। এতো সুন্দর এক টুকরো কবিতা লিখে ফেললেন! চমৎকার লাগলো এটি।
ভালো থাকুন।
৩৩| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৬
রাশেদ অনি বলেছেন: খেলাধুলা টা বললেন না কেন ভাইয়া?আমিতো অনেক খেলতাম।
০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:২৪
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আসলে কোন খেলাটা প্রথম খেলেছিলাম মনে নেই খেলাধূলা এমন একটা বিষয় যে কথা বলতে শেখার আগেই বাচ্চারা খেলতে শুরু করে দেয় তাই এটা মনে রাখা সম্ভব না মনে হয়। একেক বয়সে একেক খেলা খুব প্রিয় ছিল। বর্ষায় ঘোর বাদলের দিনে ন্যাংটো হয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে জাম্বুরা দিয়ে বাড়ির উঠোনে বল খেলতাম বাড়ির ছোটোরা এটার চেয়ে বেশি মজার কোনো খেলা ছিল না। এই বলটা জাম্বুরার পরিবর্তে খড়েরও হতো। এরপর বৈশাখের প্রথম বৃষ্টিতে পুকুরডোবা পানিতে ভরে গেলে রাতে সেই পুকুর থাকতো ব্যাঙের দখলে, আর দিনের বেলা আমরা মানবছানারা দল বেঁধে লাফিয়ে পড়তাম আর খেলতাম ডুবসাঁতার, যাকে সেই ‘অশিক্ষিত’ কালে বলতাম ‘হলদিকোটা’ একটু একটু করে বয়স বাড়ে, আর খেলার আপগ্রেডেশন হতে থাকে
রমজানের ১০ বা ৭ তারিখে সর্বশেষ গলফ খেলেছি। আজ একটা বিলিয়ার্ড টুর্নামেন্টের প্রথম রাউন্ডে এক নভিসকে হারাতে অনেক বেগ পেতে হলো
আমারটা অনেক বলে ফেললাম, অথচ আপনারটা কিছুই জানা হলো না
ধন্যবাদ রাশেদ অনি। এবং আমার ব্লগে স্বাগত আপনাকে।
৩৪| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:০২
কাজলরেখা-০১ বলেছেন: আমার ভীষননননননননননননননন ভালো লেগেছে।
২৪ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৪০
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ। দুঃখিত এত পরে রিপ্লাই দেয়ার জন্য।
©somewhere in net ltd.
১| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৪:৩৭
বোকামন বলেছেন:
প্রিয় লেখক,
একবার পড়লুম। বারবার পড়তে ইচ্ছে করছে। এবং সময় পেলে আবারো “যা কিছু আমার” -এ নিজের কিছু খুঁজে পেতে চেষ্টা করবো !
আচ্ছা আপনার এই লেখাটি বারবার পড়ার ইচ্ছেকে কি বলা যায় !