নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শব্দকবিতা : শব্দেই দৃশ্য, শব্দেই অনুভূতি [email protected]

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই

দুঃখের কবিতাই শ্রেষ্ঠ কবিতা। ভালোবাসা হলো দুঃখ, এক ঘরে কবিতা ও নারী।

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

এক অদ্ভুত জাদুকরের কথা

২১ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১২:০৩

প্রিন্সেস নূরজাহানের রঙ্গনৃত্যের রেশ বহুদিন অব্দি বালক কুটিমিয়ার মনে অতৃপ্ত সুখের স্বাদ ছড়িয়েছিল যেমন, উষার পূর্বলগ্নে বটবৃক্ষের অন্ধকারে কল্পিত জন্তুর পদপ্রক্ষেপণ, অতঃপর রূপবতী দুঃখিনী গৃহবধূর ফাঁসিতে ঝুলে অপমৃত্যুর রহস্যোন্মোচন তার মনে এক গভীর বেদনাভাবেরও জন্ম দিয়েছিল। তার এতটুকু জীবনে কত সাধ— যা কিছু অদেখা, অদৃশ্য, অশরীরী, সবই তার কাছে বিপুল রহস্যে ভরা, তাকে দুর্নিবার আকর্ষণে টানে। পার্থিব ভোগবিলাসের বস্তুনিচয়ের চেয়ে অপার্থিব ও আধ্যাত্মিক জগতের রহস্য তাকে খুব বেশি ভাবায়।

এক রাতে সে প্রস্রাব করতে বাইরে বেরিয়েছিল। সে ছোটো বলে তার মা ছিল সাথে। আকাশে সেদিন ধবধবে পূর্ণিমা, দিনের আলোর মতো চারদিকে জোছনা খলখল করছিল। কার্তিকের সেই রাতে বাড়ির উত্তরে আমন ধানের নাড়ার সমুদ্রে তাকিয়ে কিশোর কুটিমিয়ার মন মুহূর্তে চঞ্চল হয়ে উঠলো— এত্ত আলো! হঠাৎ সে অবাক হয়ে দেখে— সেই ধবল জোছনায় কে এক বৃদ্ধা ধানক্ষেতের আলের কাছে পশ্চিমমুখি হয়ে নামাজে দাঁড়িয়ে। তার পরনের শাড়িটিও জোছনার মতো ধবল ও ফরসা— সামনে সামান্য কুঁজো হয়ে, বুকের ওপর দু হাত জোড়াবন্ধ, স্বল্প ঘোমটা টেনে, কোনোমতে বোঝা যায় পাশের বাড়ির জনার মা বুড়ির মুখটা। কিন্তু জনার মা ওখানে কেন? তার ভাঙ্গা ঘর খালি পড়ে আছে। এত রাতে কেউ চকে যায়? শুধু তাই নয়, চকে গিয়ে সে নামাজে দাঁড়িয়ে। রহস্য কী? নিষ্পলক তাকিয়ে থেকে কুটিমিয়া মাকে বলে ওঠে, ‘মা দ্যাক, জনার মা বুড়ি। ক্ষেতের মইধ্যে নামাজ পড়বার লাগছে!’ হঠাৎ তার মা এসে উঁকি দেয় এবং একপলক দেখেই ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ বলে কুটিমিয়ার হাত ধরে ছোঁ মেরে ঘরে নিয়ে যায়— কালিমা পড়ে কুটিমিয়ার বুকে থুথু ঘষে দেয়, মুখে ফুঁ দিয়ে দেয়।
বালক অবাক হয়। তার মনে কোনো ভয় নেই, তবু সে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে ফিসফিসিয়ে বলে, ‘মা, জনার মা বুড়ি এত রাইত্রে চকে ক্যানরে?’
মা তাকে আরো শক্ত করে বুকে জড়িয়ে বলে, ‘আল্লাহ তুই পানা দে, বালা মুসিবত দূর কর আল্লা।’
কুটিমিয়া মাথা সোজা করে মায়ের মুখের দিকে মুখ করে বলে, ‘কী অইছে মা?’
‘কিছছু না সুনা। ঘুমা। দিনে কমুনে।’
দিনের বেলা মা তাকে কিছুই বললো না, কুটিমিয়ারও সে-কথা মনে পড়ে নি। কিন্তু দিনের পর রাতের বেলা সহসা মনে পড়ে যায়, আর মুহূর্তেই ভয়ে তার সর্ব-শরীরে জাড়কাটা দিয়ে ওঠে— গত রাতে যাকে চকে নামাজ পড়তে দেখেছিল, আসলে সে জনার মা বুড়ি নয়— জনার মা সেই কবে মারা গেছে, গ্রামের গোরস্থানে তাকে কবর দেয়া হয়েছে— সে আসবে কোথা থেকে? ওটা জনার মা’র ছল ধরে অন্য কেউ এসেছিল।

কোথায় যেন পরীর রাজ্য, জিনের রাজ্য! কেউ বলে তা অনেক দূরের আসমান পেরিয়ে। পরীদের গায়ে রূপ ঝলমল করে। অন্ধকার আকাশ জুড়ে যখন অগুনতি তারার ফুল ফোটে, রূপের পরীরা তখন আকাশময় উড়ে বেড়ায়, ছুটে বেড়ায়। নিজ্‌ঝুম নিশীথে বনবনানির চূড়ায় চূড়ায়, গাছগাছালির শাখায় শাখায় জোছনা ঢেউ খেলে যায়, ফুলের গন্ধে ফুলের সুষমায় তামাম পৃথিবী আনন্দোদ্‌বেলিত হয়ে উঠলে পরীরা মর্ত্যে নেমে আসে। তারা ফুল কুড়িয়ে অঙ্গে সৌরভ মাখে, ফুলবিছানো পথে নরম পায়ে হাঁটে। হাত ধরাধরি করে নাচে। খলখল করে হাসে— মানুষের গন্ধ পাওয়া মাত্র বাতাসে মিলিয়ে যায়। কুটিমিয়া ভাবতো, যদি তার দুটি ডানা থাকতো, পাখিদের মতো সে যদি উড়তে পারতো, যদি থাকতো একটি পঙ্খিরাজ ঘোড়া— ইচ্ছে হলেই পঙ্খিরাজে ভর করে উড়ে যেতো আসমানের পর আসমান ভেঙ্গে দূরের পরীর রাজ্যে। তার হাতে যদি এমন একটি সোনার কাঠি থাকতো— সেই কাঠিটা একটা তারার দিকে তুলে ধরলে তারাটি খসে বাঁশপাতার মতো চক্রাকারে ঘুরতে ঘুরতে মাটিতে নেমে আসে— একটা ফণাতোলা ধারাস সাপের দিকে তাক করলে মুহূর্তে ওটা একটা লতাগুল্ম হয়ে যায়— আরো কত কী! ঐ কাঠিটি হাতে নিয়ে সে পাষাণ ফকিরের মতো পানির ওপর দিয়ে পায়ে হেঁটে নদী-মহাসমুদ্র পার হয়ে চলে যেতে পারতো অজানা সন্ন্যাসে।

একবার এক শীতের দুপুরে সে আর নুরু শিমের মাচানে ছোট্ট এক বাসা থেকে টুনটুনির ডিম পাড়ছিল। হঠাৎ দেখে অল্প দূরে এক রক্তচোষা তক্ষক ঘাড় উঁচিয়ে গলগল করে রক্ত খাচ্ছে। তার সমস্ত গণ্ডদেশ রক্তে বিকটবর্ণ। নুরুকে ইশারা করতেই সে একটা ঢিল উঠিয়ে ছুঁড়ে মারে তক্ষকটার গায়ে— ওটা মাটিতে পড়ে কিছুক্ষণ ছটফট করে মারা যায়। দুজনে ঝুঁকে পড়ে চোখের সামনে তক্ষকের মরে যাওয়া দেখে। কিন্তু আশ্চর্য, তক্ষকটার মুখ থেকে একফোঁটাও এতক্ষণ ধরে চুষে নেয়া রক্ত ঝরলো না। এ ঘটনা তার মনে দাগ কেটেছিল। তক্ষকরা মানুষ দেখলেই দূর থেকে অলক্ষে নাভির গোড়ায় দীর্ঘ ও অদৃশ্য শুঁড় বসিয়ে রক্ত চুষতে শুরু করে। তক্ষকটাকে কেউ যদি না দেখে, ঐ মানুষটি আর বাঁচে না। কুটিমিয়ার ভাগ্য ভালো, তক্ষকটাকে দেখতে পেয়েছিল।
কুটিমিয়া ভাবতো, এমন একটা সোনার কাঠি যদি তার হতো, কোনোদিন কোনো তক্ষক তার শরীরের রক্ত চুষতে পারতো না।
দাদির কাছে সে গল্প শোনে— কোনো এক অতীতকালে কোনো এক মাছ ইউনুছ নবীকে গিলে খেয়েছিল। কুটিমিয়ার মন ভীষণ চঞ্চল হয়ে ওঠে বাসনায়। মহানবীর ইশারায় রাতের পূর্ণ চাঁদ দু ভাগ হয়ে গিয়েছিল— সেই অলৌকিক রহস্য তার মনকে প্রচণ্ড দোলা দিয়ে যায়। বাবার মুখে সে আনাল হকের গল্প শুনেছে। কী এক আশ্চর্য খোদাপাগল ধ্যানী মহামানব সেই আনাল হক ছিলেন— তাঁকে কাঠের আগুনে পুড়িয়ে ছাই করা হলো— সেই ছাই নদীতে ফেলা হলো— আনাল হকের শরীরের প্রতিটি ভাসমান ছাইকণা সমস্বরে সুরধ্বনি তুললো— ‘আনাল হক! আনাল হক! আনাল হক!’ কী করে বড়ো পীর হযরত আব্দুল কাদের জিলানি (রাঃ) মাতৃগর্ভে থেকেই আঠার পারা কোরআন মজিদ মুখস্থ করে ভূপৃষ্ঠে পদার্পণ করেছিলেন! কেয়ামতের দিন পাহাড়গুলো তুলোর মতো উড়তে থাকবে। সূর্য নেমে আসবে মাথার ওপরে। বালক কুটিমিয়া এসব শোনে আর সতত গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে পড়ে।
তার আর কিছু ভালো লাগে না— মনে হয় যা কিছু সে দেখে, তা অতি সাধারণ; সাদামাটা; স্বাদগন্ধ-রহস্যহীন কোনো কিছুতেই তার মন ভরে না।
কুটিমিয়ার বাবা প্রায়ই এক জাদুকরের গল্প বলেন। ভীষণ আজব সেই জাদুকর, আর তার জাদু। মাটির ওপর সটান শুইয়ে দেয়া হয় দশ-বার বছরের এক বালককে, তারপর গায়ের ওপর বিশাল এক চাদর বিছিয়ে ঢেকে দেয়া হয় তার পুরো শরীর। জমকালো এক বাক্স থেকে বের করা হয় ঝলসানো এক তরবারি; হাতের বিচিত্র কৌশলে বাতাসে সাঁই সাঁই করে কয়েকবার সেই তরবারি ঘোরায়, তারপর চাদরের কোনা উঁচু করে জাদুকর ঢুকে যায় ভিতরে। উপস্থিত দর্শকগণের উদ্দেশে অনবরত তার জবান চলতে থাকে— ‘কেওই নড়বেন না, ঝিম ধইরা দাঁড়াইয়া থাকেন। পায়ের আঙ্গুল গাইড়া দাঁড়াইয়া থাকেন। একচুল নড়লে অমঙ্গল ঘইডা যাইব। এই পুলাডা আর কুনোদিন উঠবো না।’ এসব বলতে বলতে জাদুকরের গলা ধরে আসে, তারপর আল্লাহু আকবর বলে শুয়ে থাকা বালকের গলার ওপর চালিয়ে দেয় তরবারি। সঙ্গে সঙ্গে হৃদয়বিদারক চিৎকারে বালক মাটি কাঁপিয়ে তোলে, দু হাতে দড়াম দড়াম করে নিজের বুকের ওপর ঘুষি ঝাড়তে থাকে, পা আছড়ে ছটফট করতে থাকে। এরপর গলার ঘর্ঘর শব্দ শোনা যেতে থাকে। ধড় থেকে একটানে মুণ্ডুটি সরিয়ে নিয়ে যায় চাদরের আরেক কোনায়, বিচ্ছিন্ন মাথা থেকে অনর্গল মা-মা আর্তস্বর বের হতে থাকে। ধীরে ধীরে জাদুকর চাদরের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসে, তার সর্বাঙ্গ প্লাবিত, হাতের চকচকে সাদা তরবারিখানা রক্তে জবজবে। মানুষ মানুষের রক্ত সহ্য করতে পারে না। জাদুকরের শরীরে ও তরবারিতে রক্ত দেখে অনেকে সংজ্ঞা হারায়। অনেকে চাতুর্যের আশ্রয় নিয়ে হাত-পা নাড়ায়, এবং মুহূর্তেই ভূপতিত হয়। খেলা দেখানোর শেষ পর্বে জাদুকর আবার চাদরের ভিতরে ঢোকে, সবেগে মন্ত্রপাঠ করতে থাকে, বিচ্ছিন্ন মাথাটাকে ধড়ের কাছে এনে জোড়া লাগিয়ে দেয়, বেরিয়ে এসে একটানে চাদরটি সরিয়ে ফেলে। মানুষ তখন অবাক হয়ে দেখে ক্লান্ত অবসন্ন দেহে ছেলেটি আধমড়ার মতো মাটির ওপর চিৎ হয়ে শুয়ে আছে, তার গলার কাছে রক্তের নদী। গলার রক্ত মুছে দিয়ে দুর্বলশরীর ছেলেটিকে জাদুকর আস্তে হাতে দাঁড় করায়, নিজের বাহুতে জড়িয়ে চারদিকে ঘুরে দর্শকগণকে তার গলা দেখায়, সেখানে একটি সরু রেখা, যে-রেখা বরাবর তার মাথাটিকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল।
এ ছেলেটি জাদুকরের নিজের লোক হতে পারে— হতে পারে তার ছোটো ভাই বা আপন পুত্র। দর্শকসারি থেকেও উৎসাহী কাউকে ডেকে এ সাহসী জাদুটি দেখানো হতে পারে। কিন্তু কুটিমিয়া কিছুতেই মিলাতে পারে না— চাদরের ভিতরে গরু জবাইয়ের মতো জোরে ছেলেটির গলা চেপে ধরে নির্মমভাবে তরবারি চালায় কসাই জাদুকর— তারপর দেহ থেকে মস্তক আলাদা করে ফেলে। সেই খণ্ডিত মস্তক কীভাবে জোড়া লাগায় তাই ভেবে অস্থির হয়ে ওঠে কুটিমিয়া।
কুটিমিয়া তার বাবার কাছ থেকে শুনেছে, এই জাদুকরের একটা লোমহর্ষক কাহিনি আছে, যার সাথে জড়িয়ে আছে এক সাহসী ছেলের করুণ পরিণতি। গালিমপুরের সিদ্ধী পীর সাহেবের ওরস মোবারকে একবার এই জাদুকর তার অলৌকিক জাদু দেখিয়ে মানুষকে তাক লাগিয়ে দিল। দর্শকগণকে বড্ড এক প্রলোভন দেখিয়ে সে বলেছিল, যদি কোনো সাহসী যুবক তার তরবারির নীচে মাথা পাততে রাজি হয়, জাদুকর তাকেই তার যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে সমস্ত জাদুবিদ্যা দান করবে।
দুপুরের ঝাঁঝালো রোদে মানুষ নিরুত্তর ও নির্বাক দাঁড়িয়ে রইলো। জাদুকর আবারো তার বরের ঘোষণা করলো— তখনই ভিড় ঠেলে সামনে এগিয়ে এলো এক সুঠামদেহী তেজী তরুণ। তার অসীম সাহসিকতায় মুগ্ধ জাদুকর।
সে এক অত্যাদ্ভুত জাদু প্রদর্শনী ছিল। চাদরের নীচে শায়িত অমিত সাহসী তরুণ যুবা জাদুকরের তরবারিতে দ্বিখণ্ডিত হবার প্রাক্কালে গগনভেদী চিৎকারে চতুর্দিক প্রকম্পিত করলো। তার দেহটি জবাই করা গরুর মতো ছটফট করতে থাকলো— অবশেষে ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে পড়লো। দেহ থেকে মাথা সরিয়ে চাদরের নীচ থেকে জাদুকর বেরিয়ে আসে। বিধ্বস্ত তার চেহারা, ঘর্মাক্ত সর্বশরীর, দুর্বোধ্য তার মুখাবয়ব, রক্তাক্ত তরবারি ও শরীর। বিরক্তির সাথে তরবারিখানা পাশে ছুঁড়ে ফেলে। মানুষের চোখেমুখে বিস্ময়। জাদুকর তার কোঁচড় খুলে কী যেন বের করে— একটা সুতার গুটি; গুটি খুলে সুতার মাথা শাহাদাৎ আঙুলে জড়ায়, তারপর উর্ধ্ব আকাশের দিকে গুটিটি ছুঁড়ে মারে— সুরসুর করে সুতা খুলতে খুলতে গুটি ওপরের দিকে উঠে যেতে থাকে, বিস্ময়ে মানুষ বাকরুদ্ধ, তারা জানে না ঠিক কী ঘটতে যাচ্ছে পরের মুহূর্তে। অত্যাশ্চর্য ঘটনাটি সহসাই ঘটে গেলো। সুতার মাথা ধরে ঝুলতে ঝুলতে জাদুকর আকাশের দিকে উড়ে গেলো, উড়ে গেলো...বহুদূর আকাশে যাবার পর জাদুকর অদৃশ্যে মিলিয়ে গেলো। তখনই মানুষের চৈতন্যোদয় হলো— চাদর সরিয়ে সবাই আর্তনাদ করে ওঠে— হায়, এ কী দেখছে চোখের সামনে— এক ধারে দেহবিচ্ছিন্ন শির, অন্য ধারে নিস্তেজ শরীর। চোখের সামনে এমন একটা তরতাজা খুন হয়ে গেলো? কেন হলো এমন খুন? জাদুকরের মন্ত্রে কি তাহলে ভুল ছিল? ভুল হয়েছিল? সেই খুনের রহস্য আজও জানা যায় নি।

এমন একজন জাদুকর হওয়ার বাসনায় কিশোর কুটিমিয়া মাঝে মাঝেই বুঁদ হয়ে থাকে। মন্ত্র পড়ে একটা কুকুরের গায়ে ফুঁ দিয়ে ওটাকে একটা পাথর বানিয়ে ফেলা যেতো যদি, এক ফুঁয়ে একটা নদী যদি ধু-ধু মরুভূমি হয়ে যেতো! বাতাসকে যদি নিজের বশে আনা যেতো, আকাশের মেঘ, চাঁদসূর্যকে যদি বশ করা যেতো, এক মন্ত্রে ঝাঁঝাঁ দুপুরে সূর্য ডুবে অন্ধকার রাত্রি হতো যদি, আরেক মন্ত্রে থালার মতো গোল একটি চাঁদ আকাশে ঝলমল জোছনা ছড়াতো!
মাছেরা কীভাবে পানির নীচে বেঁচে থাকে— কুটিমিয়ারও এমন করে বাঁচতে সাধ হয়। পাখির মতো দু পায়ে মাটি ধাক্কা দিয়ে ভূমি থেকে আকাশে উড়াল দেবে, বাতাসে সাঁতার কেটে শূন্যে ভেসে বেড়াবে— কুটিমিয়ার সাধ হয়। কখনো কখনো স্বপ্নের ভিতর একটা দুরন্ত কালো ষাঁড় তার দিকে তেড়ে আসে— নাগালে পাবার আগেই এক লাফে সে শূন্যে উঠে যায়, তারপর পাখিদের মতো মনের আনন্দে উড়তে থাকে। ঘুম ভাঙবার পর তার মন বেদনায় কাতর হয়ে ওঠে।
সোনার কাঠি বা জাদুর কাঠি কোনোদিন পাবে না সে জানতো। তবু খুব ইচ্ছে হতো— যদি এতটুকুন ক্ষমতা পেতো— তার গামছার চার কোনায় চারটি গিঁঠুতে চারটি জিনকে বন্দি করতে পারে, তাতেই অনেক মোজেযা তার হাতের কব্জায় চলে আসতো। জিনরাও নাকি দেখতে মানুষের মতোই। তবে আশ্চর্য হলো, তারাও নাকি মানুষকে দেখতে পায় না। মানুষ যেমন জিনকে ভয় পায়, জিনও তেমনি ভয় পায় মানুষকে। মানুষ যেমন জিনকে বন্দি করতে চায়, জিনও মানুষকে। মানুষের ঘরদোরই জিনদের ঘরদোর। কিন্তু তারাও ভাবে মানুষেরা জিনদের ঘরেই বসবাস করে। মহান আউলিয়া পীর-দরবেশ হলেই তবে জিনকে কবজ করা যায়। তখন জিনকে যা-যা আদেশ করা হয়, তারা মুহূর্তেই তাই করে ফেলে।

লোকে বলে, গালিমপুরের সিদ্ধী পীর সাহেবের কবজে আছে হাজার হাজার জিন। প্রতি বৎসর কার্তিকের শেষ শুক্রবারে ওরস শুরু হয়, চলে একটানা সাতদিন। মানুষ রূপধারী মুরিদ জিনেরা দিনরাত পীর সাহেবের ভক্তি-খেদমতে আত্মনিমগ্ন হয়— মানুষের মতোই তারা জিকির করে, বাবার পদসেবা করে, হাঁটাচলা করে, খাওয়া-দাওয়া করে; কেবল পীর সাহেবই চিনেন কারা মানুষ আর কারা মানুষের রূপধারী জিন। যে কাজ মানুষের অসাধ্য, পীর সাহেব অনায়াসে জিনদের দিয়ে সে-কাজ সমাধা করেন। কী বিপুল সেই ওরসের আয়োজন— সব কাজই জিনদের দিয়ে করানো হয়।

সেবার কুটিমিয়ার খুব সাধ হয়েছিল সিদ্ধী পীর সাহেবের ওরস দেখার। ওরস শুরু হবার অনেক আগে থেকেই প্রাণের দোস্ত জসীম, আবুলের সাথে এ নিয়ে বুদ্ধি পরামর্শ শুরু করলো। দিন যেন যায় না, এমন অস্থির ভাবে ওরসের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো।
একদিন সেই সাধের ওরসের দিনটি এসে হাজির হলো। দিনের শেষভাগে গ্রামের চক-পাতর, গাছগাছালি, বন-বাদাড় এক মায়াবী ধোঁয়াশা হলুদ রঙে ছেয়ে গেছে। বুকের ভেতর টগবগে উত্তেজনা নিয়ে বন্ধুরা বাড়ি থেকে বের হলো।
আড়িয়াল বিলের হাঁটুপানি পার হয়ে দীর্ঘ ৮ মাইল পথ পায়ে হেঁটে সিদ্ধী পীরের ওরসে যখন পৌঁছুলো তারা, তখন সন্ধ্যা পার হয়ে গেছে। হেজেক লাইট, হারিকেন, বড়ো বড়ো কুপিবাতি, মোমবাতির আলোয় মেলার চারদিক ঝলমল করছে; মানুষের কোলাহল, সার্কাস, পুতুলনাচের বাদ্যবাজনা, মাইকের আওয়াজ- সব মিলিয়ে এক বিচিত্র ছন্দোময়তার সৃষ্টি করেছে, যা কুটিমিয়ার ভিতরটাকে অনেক বেশি চঞ্চল করে তুলছে। সেই কবে নুরুল্লাপুর শানাল ফকিরের ওরসে গিয়েছিল, তারপর আর এতবড়ো ওরসে যাওয়া হয় নি কুটিমিয়ার। বন্ধুদের সাথে দল বেঁধে তারা এক মাথা থেকে আরেক মাথায় যায়, ঘুরে ঘুরে নানারকম দোকানপাট দেখে, কোথাও মানুষ গোল হয়ে জুয়া খেলছে, ওখানে যেয়ে উঁকিঝুঁকি দিয়ে সেই জুয়াখেলা দেখে।
এরপর সার্কাস, পুতুলনাচ, সাপের খেলা, জাদু ইত্যাদি দেখতে দেখতে রাত গভীর হলো। ঘুরতে ঘুরতে এক জায়গায় একটা জটলা দেখতে পায়। ওরা সেখানে গিয়ে দাঁড়ায়। মানুষের ভিড় ঠেলে সামনে গিয়েই খুব অবাক হয়ে কুটিমিয়া দেখলো, সেই যে অনেক বছর আগে পদ্মার উত্তাল ঢেউয়ে এক অদ্ভুত পাগল ভেসে গিয়েছিল— যাকে প্রথম দিন দেখে হ্যামিলনের বাঁশিঅলা মনে হয়েছিল, যাকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য তার ভিতরে অফুরন্ত আকুলতা ছিল— সেই পাগল চিৎকার করে তার সেই পুরোনো ধুয়া তুলছে— ‘এই দুনিয়া ফানা হবে কিছুই রবে নারে...।’ পথের এক পাশে একটা মনোহারী দোকান ছিল— সেই দোকানে বেড়ায় টাঙানো ছিল নানান রঙের ছবি আর পোস্টার; রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, মায়ের কোলে শিশু, আকাশে উড়াল দেয়া পঙ্খিরাজ ঘোড়া, ইত্যাদি ছবি ছিল। ছিল শেখ ফরিদ ও রামকৃষ্ণের ছবি এবং ছিল ইমাম মাহাদীর হাতের তালুর ছবি। এই পাগল সেখানে দাঁড়িয়ে অনর্গল কথা বলছে; তার কথা শোনার জন্য উন্মাদের মতো মানুষ এসে জড়ো হচ্ছে। পাগলের মুখে যেন কথার খই ফুটছে— সুগভীর আধ্যাত্মিক কথা, যা কুটিমিয়ার কচি মগজে ঢোকে না। হঠাৎ হঠাৎ সে চিৎকার দিয়ে উঠছে— ‘এই দুনিয়া ফানা হবে, কিছুই রবে নারে, কিছুই রবে না।’
মহাআশ্চর্য ঘটনাটি হঠাৎ করেই ঘটলো। পাগল তার মাথার পাগড়ি খুলে ফেললো। মাথায় পাতলা কিছু চুল রুক্ষ হয়ে আছে, সে হাতের তালু দু’বার মাথায় চেপে চুলগুলো পেছনে নিল। মুখের গুচ্ছ গোঁফ আর কালো শ্মশ্রুতে নরম করে হাত বুলিয়ে চিৎকার করে বলে উঠলো— ‘দেখ আমারে, আমারে দেখ— আর দেখ ঐ ছবি।’ বলে সে তার হাতের লাঠি রামকৃষ্ণের ছবির দিকে নির্দেশ করে। মানুষ হতবাক। এ অসম্ভব। এ এক নিছক পাগল, কোনো জাদুকর নয়। মানুষ অবাক হয়ে দেখলো, ছবির রামকৃষ্ণ ঠিক ছবির পাশে দাঁড়িয়ে, তামাম মানুষের সামনে।
আশ্চর্যের শেষ নেই। পাগল এবার বলে— ‘তোরা খেয়াল কইরা দেখ, যদি আমার মুখে চাপদাঁড়ির বদলে শেখ ফরিদের মতো খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি থাকতো, আমার মুখ দেখতে কেমন লাগতো?’ কেবল অবাক হবার পালা। মানুষ বিস্ময়ে মূক হয়ে দেখতে লাগলো, সামনে দণ্ডায়মান পাগল রামকৃষ্ণের মুখের চাপদাঁড়ির আড়ালে যে-মুখটা বোঝা যায়, সেটি আর কেউ নয়, স্বয়ং শেখ ফরিদের মুখ। মানুষ স্তব্ধ, হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো।
পাগলের গল্প চলতে থাকে। দুনিয়ার সকল পয়-পয়গম্বরের কাহিনি তার ঠোঁটে অনর্গল বের হয়ে আসছে। মানুষ যা প্রশ্ন করে, সব উত্তরই এ পাগলের জানা। দুনিয়ায় কবে রোজ কেয়ামত হবে, সব হিসাব তার জানা। দাজ্জাল কবে কোথায় মাটি ফুঁড়ে উঠে দাঁড়াবে, হযরত ঈসা কবে পুনরাবির্ভূত হবেন— সব, সবকিছু সে বলে যাচ্ছে। কোনো কোনো পয়গম্বরের উপর তার প্রচণ্ড ক্ষোভও প্রকাশ পাচ্ছে।
পথেঘাটে, হাটেবাজারে পাগলেরা মানুষের কাছে চেয়ে-চিন্তে খেয়ে বেঁচে থাকে। এ পাগল কী খায়, কোথা থেকে খায়, তা জানার আগ্রহ হয়েছিল কুটিমিয়ার। পাগলেরা মানুষের কাছ থেকে টাকাপয়সাও ভিক্ষা করে থাকে, কেউ কেউ জোরজবরদস্তিও করে। কিন্তু, এ পাগল কারো কাছে কিছুই চাইছে না। কত মানুষ তার কাছ ঘেঁষে কত প্রশ্ন করছে! কেউ কেউ তাকে টাকা সাধছে, কিন্তু সে নিচ্ছে না। সে কখনো গলা ছেড়ে প্রাণখোলা হাসি হাসছে, কখনো তার কথায় রাগও ঝরে পড়ছে। কখনো সে জলদ-গম্ভীর সৌম্য পুরুষ।
কুটিমিয়া ঐ অবুঝ বালক বয়সেই বুঝতে পেরেছিল, এ পাগল কোনো সাধারণ পাগল নয়, নিশ্চয়ই সে এক মহাসাধক, যাকে মানুষ চিনতে পারছে না। কুটিমিয়ার মনে এক বরের বাসনা ছিল বহুদিনের। সে ভাবলো, এ সাধকের কাছে সে তার বরের কথাটা বলবে। কুটিমিয়া অনেক চেষ্টা তদবিরের পর পাগলের খুব কাছে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল- হুজুর, আপনে আমার এই টাকা দুইটা নেন। আমার মনের আশাটা জানি পুরা হয়, এই দোয়া কইরেন। কুটিমিয়া খুব আপ্লুত হয়েছিল, যখন পাগল তার হাত থেকে টাকা দুটো নিয়ে তার দিকে একপলক গভীর চোখে তাকিয়েছিল।
যাওয়ার আগে পাগল তার বাম হাত উঁচু করে বলে— ‘এ হাতের রেখাগুলান দেখ— এবার দেখ ইমাম মাহাদীর হাতের তালু।’ মানুষ দুটি তালুতে তাকিয়ে এবারও তাজ্জব হয়ে দেখে— পাগলের হাতটাই যেন ফটো করে ওখানে টাঙিয়ে রাখা হয়েছে।

কুটিমিয়ার দৃঢ় ধারণা, সে কোনো জাদুকর নয়। উপস্থিত মানুষেরাও কেউ বলে নি, লোকটা জাদুকর। আর যদি কোনো জাদুকর হয়েই থাকে, কুটিমিয়া ভাবে, তাহলে সে একজন অলৌকিক জাদুকর, যার বৃত্তান্ত কোনো মানুষের জানা নেই।

সেই পাগলের সন্ধানে কুটিময়া আজও ঘুরে বেড়ায়। পদ্মার পানিতে ঝাঁপ দিয়ে যে-পাগল প্রায় আধঘণ্টা পরে মাঝ নদীতে ভেসে উঠেছিল, তারপর ভাসতে ভাসতে সন্ধ্যার আঁধারে স্রোতের পানিতে হারিয়ে গিয়েছিল, সেই পাগল এতদিন পরে কোথা থেকে সিদ্ধি পীরের ওরসে এসে আবির্ভুত হয়েছিল! এ রহস্য তার কোনোদিন জানা হয় নি, জানা হবে না।

সেই যে চলে গেলো পাগল, আর এলো না, তার দেখা মিললো না ইহজনমেও।



বাল্যকাল কখনো শেষ হয় না
তাই গল্পও চলতে থাকে ...

রচনাকাল : ২০০৬

উৎসর্গ : ্মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান তমাল, আল্ট্রা জিনিয়াস রাইটার

মন্তব্য ৩০ টি রেটিং +১০/-০

মন্তব্য (৩০) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১২:২৪

রাজীব নুর বলেছেন: ওরস বিষয়টা কি? এর কি কোনো ভিডিও আছে আপনার কাছে? ধর্মীয় গান হয়? নাচ হয়? খাওয়া দাওয়া হয়? জিকির হয়? ওরস নিয়ে একটা পোষ্ট দিবেন। আমার জানার ইচ্ছা আছে।

২১ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১২:৩১

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ওরস হলো মেলার পীর-ফকিরীয় ভার্সন। গ্রামাঞ্চলে যতো মেলা হতো আগে, তার অনেক মেলাই ওরস বা কোনো না কোনো পীরফকিরদের বার্ষিক অনুষ্ঠানের অংশ। সেখানে ফকিরদের নির্দিষ্ট কিছু অনুষ্ঠানাদি সম্পন্ন করা হয়, যাতে ভক্ত বা মুরিদরা জমায়েত হন। সেখানে পীর বাবাদের নানা মাসায়েল থাকে। সেটাই ওরস। সেই সাথে আয়োজন করা হয় মেলার, সাধারণ ভাবে মেলা যেরকম হয়। সেখানে সার্কাস, যাত্রাপালা, পুতুল নাচ ইত্যাদিও থাকতে পারে। দোহারের নুরুল্লাপুরে শানাল ফকির ও অন্যান্য ফকিরদের ওরস হয়। গালিমপুরে সিদ্ধী পীরের বাড়িতেও ওরস হয়।

২| ২১ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১২:২৬

রাজীব নুর বলেছেন: যেটার লিংক দিয়েছেন সেটা আগে পড়েছি।
হ্যা এটা পড়েছি আগে।

২১ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১২:৩৩

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ওরসের বড়ো উদাহরণ দিতেই ভুলে গেছি। বিশ্ব জাকের মঞ্জিল।

৩| ২১ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১:০২

নেওয়াজ আলি বলেছেন: চিটাং হলো পীর আউলিয়ার রাজধানী । বার আউলিয়া হতে শুরু মোছন আউলিয়া পর্যন্ত হাজার হাজার মাজার রাস্তাঘাটে। মোছন আউলিয়া মাজারে ওরসে লাখ লাখ মানুষ হয় সব চিটাং এর বাহিরের।

২১ শে এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ২:০০

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: হ্যাঁ ঠিক বলেছেন নেওয়াজ আলি ভাই। তবে, চিটাগাং অনেকদিন থাকা হলেও কোনো ওরস বা মাজার দেখার সুযোগ হয় নি (বায়েজিজ বোস্তামী ছাড়া)। কারণ, ওরস দেখার ক্রেজ যেমন কমে গেছে, কাজের ব্যস্ততাও আরেকটা বড়ো ফ্যাক্টর ছিল।

ধন্যবাদ নেওয়াজ আলি ভাই।

৪| ২১ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১:২৪

শায়মা বলেছেন: সে মনে হয় যাদুকর ছিলো না। খুনি ছিলো। খুন করে উড়াল দিয়েছে।

২১ শে এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৩:২০

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: সে খুনি জাদুকর ছিল

৫| ২১ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১:৪৩

ওমেরা বলেছেন: যাদুকর খুন করে উড়ে গেল — ভয় পেলাম খুব এটু পড়ে।

২১ শে এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১:৫৮

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: এরকম এক জাদুকরের গল্প আমার বাবার মুখে শুনেছিলাম ছোটোবেলায়। যতবার শুনেছি, ততবারই ভয় পেয়েছি। তবে, আমার অতৃপ্তি হলো, অনেক গল্পই যেভাবে শুনেছি, ঠিক ততখানি ফুটিয়ে তুলতে পারি নি। অবশ্য, যতবার পড়ি, ততবারই একটু একটু করে ইমপ্রুভ করার চেষ্টা করি।

পড়ারব জন্য ধন্যবাদ আপু। শুভেচ্ছা নিয়েন।

৬| ২১ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ২:০০

মা.হাসান বলেছেন: বাল্যকাল কখনো শেষ হয় না
তাই গল্পও চলতে থাকে ...


বাল্যকাল যেনো শেষ না হয়। গল্প চলতে থাক। তবে এখন গল্প গুলো পাল্টে যাচ্ছে। এখনকার বাল্যকালের গল্প ইউটিউব, গেমিং কনসোল, টিকটক এসবে ভরা।

গলায় চাকু চালিয়ে রক্ত বের করে দেয়ার খেলাটা আমি দেখেছি। সাথে মামাতো বড় ভাই ছিলেন। উনি বলেছিলেন- ছেলে ধরারা ছেলেপুলে ধরে নিয়ে যেয়ে বিভিন্ন কুফরি কালামের মাধ্যমে এই যাদু করে। তখন বয়স আট-দশ। অনেক দিন এই বিশ্বাস ছিলো। অল্প কিছু দিন আগে এই যাদুর রহস্যটা জানতে পারলাম। এই যাদু কিন্তু আমাদের দেশেই আছে এমন না, পৃথিবীর অনেক দেশেই আছে, অনেক পুরাতন যাদু।

যেহেতু আপনি ইউটিউবে অনেক পরিভ্রমন করেন, সময় থাকলে পেন অ্যান্ড টেলার শো-টা দেখতে পারেন।

মোস্তাফিজুর রহমান ব্লগে সাম্প্রতিক সময়ে ব্লগে আসা, আমার জানা, সবচেয়ে ঋদ্ধ পাঠক/লেখকের মাঝে একজন। ওনাকে উৎসর্গের জন্য আলাদা ভালো লাগা।

২১ শে এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১:৩৫

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন:
বাল্যকাল যেনো শেষ না হয়। গল্প চলতে থাক। ২০০৫। আমার 'সবুজ অঙ্গন' লিটল ম্যাগ ছাপানোর নেশা তখন তুঙ্গে। ঠিক ঐ সময়ে, বা ২০০৪-এর শেষের দিকে ছোটোকালে শোনা বিভিন্ন অলৌকিক গল্প নিয়ে একটা উপন্যাস লেখার ইচ্ছেও তুঙ্গে উঠলো। এসব লিখি, লিটল ম্যাগেও মাঝে মাঝে দু-একটা করে ছাপি। পাঠকপ্রিয়তাও খুবই আশাব্যঞ্জক। ফলে, আমি এটা লিখতে আরো বেশি অনুপ্রাণিত হতে থাকি। যেভাবে প্লটটা গড়ে তুলি, তাতে গল্পগুলোর মধ্যে একটা ধোঁয়াশা রেখে দিই। গল্প পড়ে মনে হয়, এটা অলৌকিক, শেষের দিকে যেয়ে বোঝা যায়, না এটা পুরোটাই প্রাকৃতিক বা লৌকিক ঘটনা। আবার, কিছু ঘটনা পাঠকের বিবেচনার জন্য ফেলে রাখি- পাঠক বের করুক, এটা লৌকিক, নাকি অলৌকিক।

মনে মনে যেভাবে গল্পটা সাজাই, তাতে এর কলেবর অনেক বড়ো হয়ে যায়। কিন্তু ২০০৬-এর পর পারিবারিক ও কর্মজীবনে অনেক ব্যস্ত হয়ে পড়ায় গল্প লেখায় ছেদ পড়ে যায়। এভাবেই চলে আসছিল। সেই গল্প আর শেষ করার মতো অবস্থায়/ধৈর্য্য এখন আর নাই। এই পোস্টের নীচের অংশ - গালিম পুরের ওরসে যাওয়া, এ অংশটা লিখেছি এই ব্লগেই, সম্ভবত ২০১৪/১৫'র দিকে, ব্লগার ডেভিডের সাথে কমেন্ট বিনিময়ের সময়ে।

লেখাটা যেহেতু শেষ করার সুযোগ খুব কম, তাই ই-বুকে এ কথাটা জুড়ে দিতে হয়েছে - বাল্যকাল কখনো শেষ হয় না
তাই গল্পও চলতে থাকে ...


এটা একটা উপন্যাস। তবে, প্রতিটা পর্ব আবার আলাদা গল্পের স্বাদ দিবে। লেখাও হয়েছে এটা মনে রেখেই।


তবে এখন গল্প গুলো পাল্টে যাচ্ছে। এখনকার বাল্যকালের গল্প ইউটিউব, গেমিং কনসোল, টিকটক এসবে ভরা। সবার শৈশবটাই আনন্দে ভরপুর, যখন আমরা শৈশবকে পেছনে ফেলে যাই। আমার বাচ্চারাও শৈশবের কথা বলে- কীভাবে, কবে ওয়ান্ডার ল্যান্ড গেল, থ্রি-ডি সিনেমা দেখলো :) (যা এখন দুধভাত)। ছোটোবেলায় কী ধরনের আইসক্রিম খেত, কোথায় পাওয়া যেত, ইত্যাদি। ছোটোবেলায় কী কী গেইমস ছিল, এখন কী কী গেইমস আছে, সেগুলো :) আমার বাবা গল্প বলতো, ছোটোবেলায় সে কীভাবে বাড়ির এক কোণার এক আমগাছে উঠে ডাল বেয়ে বেয়ে প্রতিটা আমগাছে ঘুরে ঘুরে আম খেয়ে অন্য গাছ দিয়ে নীচে নামতো :) যারা টিকটকার, তারা বিয়ে করার পর বউয়ের কাছে এসব গল্প পাড়বে :)

গল্পায় ছুরি চালিয়ে জাদুর ব্যাপারে যা বললেন, আমিও হুবহু একই গল্প শুনেছি ছোটোবেলায়। ছেলেধরা আতঙ্ক ছোটোবেলায়ও ছিল। গ্রামে কোনো অপরিচিত লোক আসলে আতঙ্কটা দ্রুত ছড়িয়ে পড়তো।

তবে, দেহ থেকে মাথা আলাদা করার জাদুরহস্য আমি জানি। গল্পের সাসপেন্স ধরে রাখার জন্য আমি প্রকাশ করলাম না। জাদি দেখা আমার অন্যতম তীব্র শখের একটা। ইউটিউবে জাদু রহসয় আনভিল করার ভিডিও দেখে দেখে একসময় আমার রাত কেটে যেত। ওগুলো জানা হয়েভ যাওয়ায় কোনো জাদুতে এখন আর মজা পাই না :)

পেন অ্যান্ড টেলার শো অবশ্যই দেখবো। আগে দেখি নি কখনো।

তমাল ভাইয়ের ব্যাপারে যা বললেন, শতভাগ একমত আপনার সাথে। তার উজ্জ্বল ও সাফল্যমণ্ডিত লেখক জীবন কামনা করছি।

বিশ্লেষণমূলক মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ হাসান ভাই। শুভেচ্ছা নিয়েন।

৭| ২১ শে এপ্রিল, ২০২১ ভোর ৬:৪৯

জুল ভার্ন বলেছেন: গল্পে ভিন্নমাত্রা ভালো লেগেছে।

২১ শে এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১:১০

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: প্রিয় জুল ভার্ন ভাই, ভিন্ন মাত্রার এ দীর্ঘ পোস্টটি পড়েছেন দেখে ভালো লাগলো। অনেক অনেক ধন্যবাদ ও শুভ কামনা থাকলো।

৮| ২১ শে এপ্রিল, ২০২১ সকাল ১০:৪৫

মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল বলেছেন: এই গল্পটা আগেও একবার পড়েছিলাম। এখন আবার আগের মতো মুগ্ধতা নিয়েই পড়লাম। 'লৌকিক রহস্য; অথবা অলৌকিক' গ্রন্থের শেষ অধ্যায় এটা। একজন শিশুর দৃষ্টিকোণ থেকে শিশুমনের কল্পনা ও অতিলৌকিক রহস্যজনক ঘটনার বর্ণনা করা হয়েছে। এগুলো পড়তে পড়তে নিজের শৈশবেই চলে গিয়েছিলাম। গল্পের অনেক ধ্যান ধারণাই বলতে গেলে দেশের সর্বত্রই প্রচলিত। বিলের মধ্যে, ক্ষেতের মধ্যে, নদীর পাড়ে কিংবা নির্জন রাস্তায় সাদা শাড়ি পরা মানবী, যারা আবার পরিচিত মানুষের রূপ ধরে আসে, এদের ভয় দেখিয়ে আমাদেরকে নির্জন দুপুরে আর সন্ধ্যার পর বাইরে যাওয়া হতে নিবৃত্ত করা হতো। এখানে যে জাদুকরের কথা বলা হয়েছে আমি তার কাহিনি শুনেছি। দেখিনি কখনো। এদেরকে আমাদের এখানে গলাকাটা বলা হয়। আমাদের মনে একটা ভয় ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছিলো, এই গলাকাটারা ছোট বাচ্চাদের ধরে নিয়ে গলা কেটে দেয়। এলাকায় নতুন পাগল এলে সবার মনেই একটা কৌতুহল দেখা দেয়। শিশুদের কৌতুহল সবচেয়ে বেশি থাকে। পাগলেরা অনেকটা শিশুদের মতোই আচরণ করে। সেই পদ্মার পাগল আর পিরের দরগার পাগল হয়তো আলাদা দুজন লোক। কিন্তু আচরণ আর কথাবার্তায় মিল থাকায় কুটিমিয়া পার্থক্য ধরতে পারে নি।
পুরোটা গল্প পড়ার পর শেষে এসে যা দেখলাম তাতে আমিও কুটিমিয়ার মতো অভিভূত হয়ে তাকিয়ে রইলাম। গল্পটি আমাকে উৎসর্গ করায় আপনাকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই। গল্পটি উৎসর্গ করে এবং প্রশংসামূলক বাক্য ব্যবহার করে আপনি যেভাবে আমাকে সম্মানিত করলেন তাতে আমি আপনার প্রতি চিরকৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। আপনার শারীরিক সুস্থতা কামনা করছি। আপনার লেখা অনন্তকালব্যাপী চলতে থাকুক। আপনার জন্য শুভকামনা রইলো।

২১ শে এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১:০৯

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: তমাল ভাই, আপনি অত্যন্ত মনোযোগী এবং মেধাবী পাঠক। যে কোনো লেখার সারবত্তা আপনি খুব সহজেই বের করে আনেন। এমনকি, যে লেখার বিষয়বস্তু নিয়ে স্বয়ং লেখকও নিশ্চিত নন, আপনি সেখানেও সুন্দর মন্তব্য করেন, যাতে লেখকের চোখ খুলে যায়। আমার 'লৌকিক রহস্য; বা অলৌকিক' ই-বুক যেভাবে পড়ে শেষ করেছেন, শুধু তাই নয়, একটা গঠনমূলক পর্যালোচনাও আমাকে মেইলে পাঠিয়েছেন, তা পড়ে সত্যিই হতবাক ও অভিভূত হয়েছি আপনার পাঠাভ্যাস, ধৈর্য ও পাঠের গভীরে যাওয়ার দক্ষতা দেখে। এটা সবার পক্ষে সম্ভব না; আমি নিজে আমার অদক্ষতার কথা অকপটে স্বীকার করছি। এই যে এত মনোযোগ দিয়ে পড়া, এর প্রতিদান বা প্রতিফলন দেখা যায় আপনার প্রতিটা পোস্ট ও কমেন্ট থেকে। এই ব্লগে খুব অল্প কয়েকজন ব্লগারই আছেন এরকম মেধা সম্পন্ন। আর যেহেতু পুরো ই-বুকটা আপনি আগেই পড়ে শেষ করে ফেলেছেন, আর এ পোস্টটা যেহেতু আপাতত শেষ সিকোয়েল, তাই আপনাকে এ পোস্টটি উৎসর্গ করে আপনার প্রতি আমার ঋণ কিছুটা হলেও শোধ করলাম। সেই সাথে ভালোবাসাও।

আপনার দুর্দান্ত ও গৌরবময় লেখক জীবন কামনা করছি।

৯| ২১ শে এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১২:২৫

রাজীব নুর বলেছেন: ১। ওরস কি এক অঞ্চলে বছরে একবারই হয়?
২। এর খরচ কি মুরিদরা দেয়?
৩। ইসলাম কি ওরস এর পক্ষে?

তিনটা প্রশ্নের উত্তর দিলে খুশি হবো।

২১ শে এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১২:৫৯

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ১। ওরস সচরাচর নির্দিষ্ট পীর/ফকিরের জন্ম বা মৃত্যুদিবসকে ঘিরে আয়োজিত হতে দেখেছি, অঞ্চল ভিত্তিক নয়। আমাদের এলাকায় একজন পীরের বাড়িতে ফাল্গুন মাসের ১৭ তারিখে, আরেক বাড়িতে ফাল্গুনের ২০ তারিখে। অন্য এক গ্রামে কার্তিক মাসের ২৫ তারিখে (সম্ভবত)। গালিমপুরেও মনে হয় কার্তিকের ০৮ তারিখে শুরু হয়। বিশ্ব জাকের মঞ্জিল বা আটরশির পীরের বাড়িতেও বছরের একটা নির্দিষ্ট সময়ে হয়। আবার, নুরুল্লাপুরে মাঘ মাসের পূর্ণিমার রাতে ধামাইল হয়। ছোটোকালের কথা যতটুকু স্মরণে আছে, বললাম।

২। এর খরচ মুরিদরাই দিয়ে থাকে, আমার জানা মতে। মুরিদরা যেসব মানত বা উপহার সামগ্রী নিয়ে আসেন, তাতে খরচের পরও বাড়তি থেকে যায় বলে আমি জানি।

৩। এসব কালচার যে সমাজে প্রচলিত, তারা সবাই ইসলাম ধর্মেরই মানুষ। যারা ওরস করেন, তাদের মতে পীর ছাড়া গতি নাই। তারা পীর ফকিরির রাস্তায় আছেন। অন্য একটা দল হলো এর ঘোর বিরোধী, তাদের মতে এটা শিরক ছাড়া আর কিছু নয়। তাদের মতে এগুলো ইসলামে নিষিদ্ধ বা হারাম। আমরা সাধারণ জনতা ওরসে যাই গান বাজনা, সার্কাস, পুতুল নাচ দেখতে, রসগোল্লা খেতে আর আনন্দ পেতে। আল্লাহ আমাদের কপালে কী লিখে রেখেছেন আল্লাহ ভালো জানেন।

১০| ২১ শে এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ২:৪৩

মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল বলেছেন: আপনার এই আন্তরিকতা এবং অকপটতায় আমি বরাবরই মুগ্ধ। আপনি বিভিন্ন সময়ে আমার লেখায় মন্তব্য করে লেখার উন্নতিতে সাহায্য করেছেন, সব সময় অনুপ্রেরণা দান করেছেন। এজন্য আমি আপনার নিকট ঋণী। আপনি যে ঋণের কথা বললেন সেটা আমার জন্য অনেক বেশি সম্মানের । বইটা পড়তে পড়তে মোহমুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম, একবারেই একটানা পড়ে শেষ করেছিলাম। আমি শুধু একজন পাঠক হিসেবে আপনার লেখা আমার কাছে কেমন লেগেছে সেটাই জানিয়েছিলাম। এর বেশি কিছু না। আপনি আমার এই ফিডব্যাককে যেভাবে মূল্যায়ন করেছেন সেটাই আমার জন্য অনেক কিছু। শুভেচ্ছা নেবেন ভাই।

@ব্লগার রাজীব নুর ভাই, একেকজন পীরের ওরস একেক দিনে হয়। একজন পীরের ওরস বছরে একবারই হয়। এসবের খরচ মুরিদরাই দেয়। তবে টাকা পয়সার চেয়ে অন্য জিনিস বেশি দেয়া হয় গ্রামাঞ্চলে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিন্নির চাল তোলা হয়। কেউ চালের সাথে আলু,পেয়াজ, কুমড়া, পেঁপেঁ এসবও দেয়। যারা অবস্থাসম্পন্ন তাদের মধ্যে দুএকজন গরু বা ছাগলও দেয়। ওরসের দিন এসব দিয়ে খিচুড়ি রান্না করা হয়। এরপর গানবাজনা হয়। মসজিদের প্রায় সব ঈমামকেই এসব ওরসকে বিদ আত বলতে শুনেছি। এখানে আবেগের বশে কিছু কিছু ভক্ত শিরক করে থাকে। আমার কাছে ওরসের খিচুড়ি খুব সুস্বাদু লাগে। আমরা বন্ধুরা গিয়ে প্রাতই খিচুড়ি খেয়ে চলে আসি। গানবাজনার সময়ে থাকি না।

২১ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১০:১৯

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আপনার আরেকবার ফিরে এসে বিনয়ী কমেন্ট করায় আপ্লুত হলাম। অনেক অনেক অনেক ধন্যবাদ এই ঔদার্য আর মাহাত্ম্যের জন্য।

ওরস সম্পর্কেও আপনার জ্ঞান অনেক ভালো। আমিও নতুন করে জানলাম অনেক কিছু।

১১| ২১ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১০:০৬

ঢুকিচেপা বলেছেন: ছোটবেলার ভাবনাগুলো পড়ে ভালো লাগলো।
তক্ষকরা মানুষ দেখলেই রক্ত চুষে নেয় এমন ধারনা আমাদের এখানেও ছিল। বিষয়টা বহুদিন পর মনে হলো।
মানুষ ২ টুকরা করা বা মাটির মধ্যে পুঁতে রাখা এমন যাদু দেখেছি। তবে পাগলের বিষয়টা অদ্ভুত।

মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল ভাইয়ের প্রতি শুভেচ্ছা রইল।

২১ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১০:৩৫

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: তক্ষকরা মানুষ দেখলেই রক্ত চুষে নেয়। এই কথাটা খুবই প্রচলিত ছিল। মা-চাচিরাও আমাদের বার বার সাবধান করতো এটার ব্যাপারে। আসলে আমরা কখনো তক্ষক দেখি নি সেই সময়ে। গিরগিটিকে তক্ষক বলতো সবাই। গিরগিটির গলার দিকটা রঙিন থাকে। কোনো কোনো গিরগিটির গলার রঙ টুকটুকে লাল। এগুলোর অভ্যাস হলো ঘাড় উঁচু করে একধ্যানে ঢকঢক করে শ্বাস নেয়া, দম ফেলা। বা এটাই ওদের বৈশিষ্ট্য। ঐ অবস্থা দেখে যে-কেউ ভয় পেয়ে বলে ফেলে, ঐ যে আমার নাভি থেকে রক্ত চুষে খাচ্ছে। আর এজন্য এটাকে অনেকে রক্তচোষা বলেও ডাকতো।

এই জিনিসগুলো গ্রামে এখনো আছে কিনা জানি না। তবে, ঘইরল বা গুঁইসাপ আছে প্রচুর।

তক্ষক দেখেছি অনেক পরে। ২০০৭/৮ সালের দিকে, পার্বত্য চট্টগ্রামে। গভীর রাতে ঘরের গোপন কোনা থেকে তক্ষক ডেকে উঠলে যে কেউ ভয়ে হার্টফেল করতে পারে :)

হ্যাঁ, পাগলের ব্যাপারটা সত্যি। এই রহস্যের কোনো কূল কিনারা আমি এখনো পাই নি। অনেকের কাছে জিজ্ঞাসা করেছি। কেউ বলে আমি ভুল দেখেছি, কেউ বলে লোকটা জাদুকর ছিল। এক বিজ্ঞ লোক বলেছিলেন, লোকটা কুফরি করেছিল। আসলে যে কী হয়েছিল, আমি আজও উত্তর খুঁজছি।

কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ ঢুকিচেপা।

১২| ২১ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১০:১৮

সোহানী বলেছেন: অদ্ভুত এক জগতে নিজেই হারিয়ে গেলাম। মনে হলো আমিই কুটি মিয়া। সবকিছুই যে ঘটছে আমার সামনে। তারপর নিজের অজান্তেই নিজের কুটিকালের কাহিনীগুলো জোড়া লাগাতে চেস্টা করলাম। হায় কিছু লাগলো আর কিছু কুটি মিয়ার রহস্যের সাথে হারিয়ে গেল।

অনেক অনেক ভালোলাগা প্রিয় লেখক। উৎসর্গ ও যথাযথ।

২১ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১১:০৫

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: মনে হলো আমিই কুটি মিয়া। আপনি নিজেও একজন চৌকস লেখক। তাই জানেন, এরকম কমেন্ট একজন লেখকের জন্য কত বড়ো প্রণোদনা। নিজের লেখায় যখন পাঠক ডুবে যায়, সেই অভিব্যক্তির কথা জানলে তৃপ্তি ও আনন্দে বুক ভরে যায়।

আপনি, সম্ভবত কুটিমিয়া সিরিজের কোনো গল্পই বাদ দেন নি। কোনো কোনো পোস্ট একাধিকবার পড়েছেন। পড়া শেষে প্রশ্ন করতে ভোলেন নি - এটা কি আগেও পড়েছি? :) আপনার প্রশ্নে আমিও অবাক হতাম আপনার স্মৃতিশক্তির প্রখরতা দেখে।

কুটিমিয়ার কাহিনি খুব দীর্ঘ। পোস্টগুলোও পাবলিশ করা হয়েছে দীর্ঘ ইন্টারভেল দিয়ে দিয়ে। ২০০৯/১০ থেকেই এ সিরিজি পোস্ট করি। কিছুকাল পর পর সবগুলো গল্প এডিট করেছি। এডিট করার পর আবার ব্লগে পোস্ট করেছি। তাই, কোনো কোনো গল্প দুইবারেরও বেশি সংখ্যক বার পোস্ট করা হয়েছে। এ সিরিজিটা আগে যারা প্রায় নিয়মিত পড়তেন, তাদের মধ্যে সবার আগে আসে ডেভিডের নাম। ডেভিডের কমেন্ট থেকেও কিছু উপাদান গল্পে ঢোকানো হয়েছে। এরপর ছিলেন শারমিন রেজোয়ানা, নাসরিন পনি, ভারসাম্য, জুলিয়ান সিদ্দিকী। শেষ ধাপে পোস্ট করার পর আপনাকেই বোধ হয় প্রতিটা পোস্টে পেয়েছি। আর তমাল ভাই তো এক বসায়ই পুরোটা পড়ে ফেললেন।

একটা গল্প লেখার সাথে সাথেই আমি ব্লগে পোস্ট করি। যতবার পড়ি, ততবারই কিছু নতুন সংযোজন বা বিয়োজন করি। এতে লেখাটা উন্নত হয়। প্লাস, পাঠকের কমেন্ট থেকেও ক্লু পেয়ে, কিংবা পরামর্শ পেয়ে পরিমার্জন করি।

এ সিরিজে আপনাকে প্রতিবার পেয়েছি, এজন্য আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

১৩| ২১ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১০:৪৭

করুণাধারা বলেছেন: কুটিমিয়ার কাহিনী বরাবরের মতোই আগ্রহ নিয়ে পড়লাম। জনার মা বুড়ি, পরীর রাজ্য, জিনের রাজ্য, দাদীর বলা গল্প, বাবার বলা জাদুকরের গল্প, জাদুকরের হাওয়ায় মিলিয়ে যাবার গল্প, সিদ্ধী পীর সাহেব, ওরস, মেলা... পড়তে পড়তে সব কিছু ছবি হয়ে চোখে ভাসছিল। কিন্তু পদ্মার ঢেউয়ে ভেসে যাওয়া পাগলকে দেখে হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা বলে কুটিমিয়ার মনে হয়েছিল- এটা পড়তে গিয়েই সব ছবি তালগোল পাকিয়ে গেল... অনেকটা রূপকথার গল্প পড়তে পড়তে রাজকন্যাকে পন্ডস ক্রিম মাখতে দেখলে যেমন তাল কেটে যায়...

কুটিমিয়ার গল্প আনন্দময় পাঠ!! খুবই ভালো লেগেছে।

২১ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১১:১৬

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: প্রতিটা খণ্ড খণ্ড ক্ষুদ্র গল্পের কথা যেভাবে তুলে ধরলেন, তাতে মুগ্ধ হওয়া ছাড়া শুধু মূক হওয়া যায়। আমি অভিভূত আপু।

আপু, এটা হলো ধারাবাহিক ছোটোগল্প সিরিজ বা উপন্যাসের শেষ পর্ব। এখানে একটা সমাপ্তি বা পরিণতি টানা দরকার। আর, এই অদ্ভুত পাগলের উপস্থিতি ছিল আগের কোনো এক পর্বে। সেই পর্বেও তার সম্মোহনী ক্ষমতা দিয়ে মানুষকে বিভোর করেছিল। তারপর সারাদিনের শেষে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে পড়েছিল। অনেকক্ষণ পানির নীচে থাকার পর অনেক দূরে সে ভেসে ওঠে। তারপর ভাসতে ভাসতে কোথায় চলে। সেই পাগলের দেখা মেলে অনেক দিন পর এই সিদ্ধী পীর সাহেবের ওরসে। এটাই কুটিমিয়াকে অবাক করেছে, এতদিন এ পাগল কই ছিল? এখনই বা কই থেকে এলো?

আশা করি বোঝাতে পেরেছি কিছুটা।

সাথে ছিলেন, এজন্য কৃতজ্ঞতা। আমি আনন্দিত।

ভালো থাকবেন আপু।

১৪| ২২ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১২:০৪

রাজীব নুর বলেছেন: আমার তিনটা প্রশ্নের খুব সুন্দর উত্তর দিয়েছেন। সহজ করে উত্তর দিয়েছেন। আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। আপনি মানুষ ভালো।

২২ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১২:০৭

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: উত্তরগুলো বোধগম্য হয়েছে দেখে আমিও তৃপ্তি পাচ্ছি। লাস্ট কথাটার জন্য অনেক ধন্যবাদ রাজীব নুর ভাই।

১৫| ২২ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১২:০৬

রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্টে সবার মন্তব্য গুলো খুব মন দিয়ে পড়েছি।

২২ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১২:০৯

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আপনার মতো আমিও সবার মন্তব্যগুলো খুব মন দিয়ে পড়েছি রাজীব নুর ভাই। সবগুলো কমেন্টই খুব ভালো লেগেছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.