নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দুঃখের কবিতাই শ্রেষ্ঠ কবিতা। ভালোবাসা হলো দুঃখ, এক ঘরে কবিতা ও নারী।
আমাদের ছোটোবেলায় পদ্মা নদী খুব উত্তাল, বিশাল ও ভয়াবহ ছিল। নদীর তীরে দাঁড়িয়ে বাবাকে জিজ্ঞাসা করতাম, ‘বাবা, গাঙের কি ঐ-পার নাই?’ বাবা হেসে জবাব দিতেন, ‘আছে। অনেক দূরে। দেহা যায় না।’
আমি তখন গাঙের বুকে পালতোলা নাওয়ের দিকে চেয়ে চেয়ে ভাবতাম, আহা, একদিন যদি ঐ-পারে যাইবার পারতাম!
কলেজবেলায় গ্রামে গিয়ে মাঝে মাঝে পদ্মার পাড়ে যেতাম বন্ধুদের সাথে বেড়াতে। পদ্মা ডুবে গেছে চরের বালুতে। কলাপাতায় সবুজের ঢেউ দেখি, আর শুকনো তটে দাঁড়িয়ে দেখি পদ্মার বুকে সাদা বালু খাঁ-খাঁ করছে। চিকন খালের মতো মরা নদী বুড়ির মতো ধুঁকে ধুঁকে হেঁটে যাচ্ছে।
অনেকদিন পর।
গুলিস্তান থেকে শুরু। বাবুবাজার ব্রিজ কিংবা পোস্তগোলার চীনমৈত্রী সেতু পার হয়ে ঢাকা-মাওয়া সড়ক ধরে চলতে থাকুন।
শ্রীনগর।
সদর পার হয়ে কামারগাঁও ছাড়িয়ে শাইনপুকুর।
দোহার উপজেলা শুরু।
কিছুদূর গিয়ে নারিশা। ছোটোবেলায় এখানে অনেক এসেছি। ছোটো চোখে নদীর ঐ-পার ধু-ধু করতো। কলেজবেলায় এখানে ধু-ধু বালুচর।
আজ।
নারিশা গ্রাম ভেঙে ডুবে যাচ্ছে নদীগর্ভে। গ্রামবাসীর প্রাণান্ত চেষ্টা তা প্রতিরোধে।
গাড়ি থামিয়ে নেমে পড়ি। পাড়ে দাঁড়িয়ে দেখি ও-পাড়ে সূর্য পাটের উপরে, স্রোতোময়ী পদ্মার শরীরে ঢেউয়ের ভাঁজে ভেঙে পড়া রোদ চিকচিক করছে।
এই পথে, একটু দূরে প্রমীলাদের বাড়ি। স্কুলজীবনে শুধু প্রমীলার সাথে কাকতালে দেখা হবার সম্ভাব্যতায় এখানে ঘোরাঘুরি করতাম। আর আছে সায়ন্তনীদের বাসা। ওর মতো সুন্দরী মেয়ে আমার চোখে আজও আর একটাও পড়ে নি। মিনাদের বাড়ি আর ইমরানদের বাড়ি পাশাপাশি। মিনার সাথে মাঝে মাঝে কথা হয়। ইমরান বাবা হয়েছে বছর দুই আগে, ও এ-খবর দিয়ে হাওয়া হয়ে গেছে।
আর সোহানা?
রাতুলের চাচাত বোন সোহানা। স্কুলজীবনের পর ওর সাথে আর দেখাই হলো না। প্রমীলা বলে, ‘সোহানার দিনে দিনে বয়স কমে।’ শামীম ওর সাথে প্রেম করতো। ওদের দু পরিবারে অহি-নকুল পরিস্থিতি সারাজীবন। ও-বাড়ির মেয়ে এ-বাড়িতে? এ-বাড়ির ছেলে ও-বাড়িতে? পৃথিবী উলটে গেলেও না।
এসএসসির পর পর ওর বিয়ে হলো এক গণিতজ্ঞের সাথে। রাতুলের সাথে দেখা করতে গেছি; এগিয়ে এলো ভুবনমোহিনী সোহানা ওর হৃদয়হরা হাসির ঝিলিক ছড়িয়ে।
‘তুই না খুব চিকন আছিলি? মাত্র কয় মাসেই এত মোটা হইয়া গেছস?’ আমার কথা শেষ হবার আগেই ‘স্টুপিড!’ বলে এক ঝামটায় আমার গাল টেনে দিয়ে পৃথিবীকাঁপানো একটা হাসি হেসে ঘাড় বাঁকিয়ে বেণি দুলিয়ে চলে গেলো সোহানা। ওর সেই হাসি চোখের সামনে ভাসে, ওর কথা মনে হলে, বা না হলেও। আমাকে ভর্ৎসনা করে রাতুল বলেছিল, ‘তুমি এত বোকা কেন? ও প্রেগন্যান্ট হইছে বোঝো না?’
আরো অনেকে। শাপলা। ঝিনুক।
একেকটা মেয়ে একেকটা অনবদ্য কবিতা, ভিন্ন ভিন্ন রস ও স্বাদের। এই দেখুন, কোনো ছেলের নামই আমার মাথায় আসছে না এখন। আমরা মেয়েদের কথা বেশি মনে রাখি; ওরা আমাদের নিয়ে কী ভাবে তা জানতে খুউব খুউব সাধ হয়। আমার মতো সবগুলো ছেলেই হয়ত এমন করেই সবগুলো মেয়ের কথা ভাবে। আর মেয়েগুলো? ওরা মনে হয় আমাদের আর মনে রাখে না। আমরা যেমন বউয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে আর তার বুকের উপর শুয়ে একবার হলেও ওদের প্রত্যেকের কথা ভাবি, ওরা কি স্বামীর বুকে মাথা রেখে একটি মুহূর্তের জন্যও মনে করেছে আমাদের কথা? আমার কথা? ওরা খুব স্বার্থপর। ওরা স্বামীদের সাথে বেইমানি করে না, আমরা যেমন বউদের সাথে করি। ওরা নয় প্রেমিকা, নয় বান্ধবী। ওরা আমাদের কেউ না।
একদিন আমাকে অবাক করে দিয়ে প্রমীলা বলেছিল, ‘তোরা এত নিষ্ঠুর কেন রে? তোদের কথা ভেবে ভেবে মরি... ।’ তারপর ওর কণ্ঠ গলে যেতে থাকে, করুণ ফিসফিসে স্বরে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে, ‘তোর কথা কত ভাবতাম... খুব নিষ্ঠুর রে তুই!’
আমি যখন পদ্মার গভীর থেকে স্কুলবান্ধবীদের ছিনিয়ে নিয়ে আসছিলাম, দেখি আমার সরলা বউ আর সন্তানেরা উজ্জ্বল ঢেউয়ের দিকে তাকিয়ে আনন্দে ঝলমল করছে।
এখানে একটা কবিতার ভাব জাগে। সর্বপ্রথম যে শব্দটা মাথায় টোকা বা উঁকি দিল, সেটা হলো— ‘দিধিষু’। কবে কোথায় এই শব্দটা পড়েছিলাম মনে নেই। অর্থটাও তত পরিষ্কার নয়। কিন্তু ‘দিধিষু’ দিয়েই কবিতা শুরু করি।
দিধিষু শরীর নদীর বিভায় ঘুমিয়ে পড়ে পাখিদের অগোচরে। জলের জোনাকিরা কোমল বাতাসে ভেঙে ভেঙে মাছের সারিতে মিশে যায়।
এই হলো কবিতা। এর কী অর্থ দাঁড়ায় তা জানি না। আদতে এর কোনো অর্থ নেইও। সব কবিতার অর্থ থাকে না।
অহনার সাথে যদি আবার আরেকদিন, কালের স্রোতে ভাসতে ভাসতে কোনো এক চরের কন্দলীবনের হরিৎ ছায়ায় অলৌকিকভাবে দেখা হয়ে যায়, এ দু চরণ কবিতা ওকে শোনাবো। এ কবিতা শুনে সে যারপরনাই খুশি হবে; খুশির ঘোরে বহুক্ষণ কেটে যাবে, তারপর যথাস্বভাবে বলবে, ‘এবার এর অর্থটা আমাকে বুঝিয়ে বল, সোনাপাখি।’
আমি অহনাকে অতি চমৎকারভাবে কবিতাটার অর্থ বুঝিয়ে দেব। সে বিস্ময়ে ডগমগ হয়ে শুধু এ কথাটাই বলবে, ‘তোর মতো কবি হয় না রে পাগল; তুই একদিন অনেক বড়ো কবি হবি!’
২৩ এপ্রিল ২০০৯
১৯ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১০:৪৮
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: পড়ে আপনার ভালো লাগায় আমি আনন্দিত। অনেক ধন্যবাদ সুজন ভাই, পড়ার জন্য। শুভেচ্ছা।
২| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১০:১৭
ডঃ এম এ আলী বলেছেন:
সত্যিই অনেক বড় কবি হয়েছেন ।
অভিনন্দন রইল ।
ছেলে ও মেয়েড়ের মনের কথা টেনে
এনে পদ্মার বুকে ও পাড়ে জমে থাকা
অনেক কথার ইতিহাস আউরে সুন্দর
একটি কবিতার জন্ম দিয়েছেন ।
শুভেচ্ছা রইল
১৯ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১১:০৭
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন:
সত্যিই অনেক বড় কবি হয়েছেন ।
অভিনন্দন রইল ।
গল্পের নায়কের জন্য এটা একটা উইশ ছিল যদিও আপনি আমাকেই মিন করেছেম; সেইক্ষেত্রে কম্পিমেন্টটা অনেক ভারী হইয়া গেলেও বুক পেতে নিতে খুব আনন্দ হচ্ছে, দ্যট টুউউ আপনার ক্মপ্লিমেন্ট।
কমেন্টে অনেক ভালো লাগা প্রিয় আলী ভাই। শুভেচ্ছা।
৩| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১০:২০
ডঃ এম এ আলী বলেছেন:
মেয়েড়ের < < মেয়েদের
মেয়েড়ের হবে মেয়েদের
১৯ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১১:০৮
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আবারও ধন্যবাদ আলী ভাই।
৪| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১০:২৭
শায়মা বলেছেন: সেই অহনার কবিতাই সবচেয়ে সেরা ভাইয়া।
১৯ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১১:০৯
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: অহনারা বেঁচে থাক কবিতায়।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ আপু।
৫| ২০ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১২:০৮
সোবুজ বলেছেন: সেই ছোট বেলায় কতবার যে পদ্মা পাড়ি দিতে হয়েছে তার ইয়াত্তা নাই।আমাদের বাড়ী ছিল পদ্মার মুন্সিগঞ্জের দিকে আর ফুফুর বাড়ী ছিল পদ্মার ঐ পাড়ে।বহু দিন পদ্মায় ইলিশ মাছ ধরেছি।সেই ছোট বেলার স্মৃতি মনে পড়ে গেল।৭১ এর পর আরিচা ছাড়া আর নদী দেখা হয় নাই।এমন কি মুন্সি গঞ্জেই যাওয়া হয় নাই।আপনার পোষ্ট পড়ে মনে পড়লো এক সময় পদ্মার পাড়ে আমাদের বাড়ী ছিল।
২১ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১২:১৫
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আপনি তো তাহলে পদ্মাপারের মানুষ!!! জেনে ভালো লাগলো।
আমার বাবা, চাচা, অনেক প্রতিবেশী, এবং আমার স্ত্রীর কাছে শুনলাম, আমার শ্বশুরও পদ্মায় ইলিশ ধরেছেন। আমরা অবশ্য বড়শি দিয়া ইলিশ মাছ ধরেছি পদ্মা নদী থেকে।
ছোটোবেলায় ছোটো চোখে প্রথম পদ্মা দেখে যে অনুভূতি আমার হয়েছিল, তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। এ গল্পের শুরুতে অবশ্য সেটা প্রকাশ করার চেষ্টা করেছি। এরপর পদ্মার বুকে অনেক যাতায়াত হয়েছে। পদ্মা শুকিয়ে গেছে, আগের মতো আর ভয়াল রূপে নেই। যদি ভয়াল সর্বানাশিনী পদ্মা অনেক জনপদ গিলে খেয়ে অনেক মানুষকে সর্বশান্ত করেছে। সে খুব করুণ কাহিনি।
আপনার বয়স আন্দাজ করতে পেরে ভালো লাগছে। বয়সে আপনি আমার চাইতে জ্যেষ্ঠ।
পোস্ট পড়ার জন্য ধন্যবাদ সোবুজ ভাই।
৬| ২০ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১:৩১
জোবাইর বলেছেন:
হাজার বছর ধরে বয়ে চলা স্রোতস্বিনী পদ্মার সাথে জড়িয়ে আছে দু' পাড়ের লক্ষ লক্ষ মানুষের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনার অনেক স্মৃতি ও কাহিনী। নদীর উপরের নৈসর্গিক রূপ দেখে বিমোহিত পথিক কখনো জানতে পারে না নদীর গভীরে পলির স্তরে স্তরে তলিয়ে থাকা মানুষের স্মৃতি বিজড়িত এসব কাহিনী।
পদ্মা নদীর গভীর থেকে তুলে আনা সোনাপাখির স্কুলজীবনের রোমান্টিক স্মৃতি চমৎকার হয়েছে । অনেক অনেক ধন্যবাদ। প্রমীলা, মিনা, সোহানা, অহনা - ওরা যে যেখানেই থাকুক ওদের সুখ, শান্তি ও সাফল্য কামনা করি।
২১ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১২:২০
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন:
হাজার বছর ধরে বয়ে চলা স্রোতস্বিনী পদ্মার সাথে জড়িয়ে আছে দু' পাড়ের লক্ষ লক্ষ মানুষের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনার অনেক স্মৃতি ও কাহিনী। নদীর উপরের নৈসর্গিক রূপ দেখে বিমোহিত পথিক কখনো জানতে পারে না নদীর গভীরে পলির স্তরে স্তরে তলিয়ে থাকা মানুষের স্মৃতি বিজড়িত এসব কাহিনী। কথাগুলো পড়ে একদিকে খুব নস্টালজিক হলাম, আবার মনটা খুব বিষণ্ণও হয়ে গেল। পদ্মার থাবায় এখনো আমাদের অনেক জনপদ বিলীন হচ্ছে। পদ্মাপারে কত মানুষের করুণ কান্না আর হাহাকার ভেসে বেড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত। সেসব খুবই কষ্টের কাহিনি।
বাকি কথাগুলোর জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ জোবাইর ভাই। ভালো থাকবেন। শুভেচ্ছা।
৭| ২০ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১:৫৬
জটিল ভাই বলেছেন:
কবিতার ভাব ভাষা সেই সময়ের পদ্মার মতোই বিশাল.......
ভালো লাগলো প্রিয় সোনাভাই। জটিলবাদ
২১ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১২:২৬
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: কবিতার ভাব ভাষা সেই সময়ের পদ্মার মতোই বিশাল....... বিরাট কমপ্লিমেন্ট। অনেক ধন্যবাদ জটিল ভাই।
৮| ২০ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ৩:৫২
নেওয়াজ আলি বলেছেন: প্রমীলা, সায়ন্তনী,মিনা ও সোহানা এক একটা কবিতা। মিনা নামের একটা হলুদ পাখিকে আমি ধরতে গিয়ে মুহুরী নদীতে ডুবে গিয়েছি।
২১ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১২:২৭
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন:
মিনা নামের একটা হলুদ পাখিকে আমি ধরতে গিয়ে মুহুরী নদীতে ডুবে গিয়েছি। মিনা নামের হলুদ পাখিটার জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা। শুভ কামনা আপনার জন্যও।
©somewhere in net ltd.
১| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১০:১৪
মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: এযে বিশাল কবিতার পট তাও সেই কবেকার। পড়ে ভালো লাগল।