![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দুঃখের কবিতাই শ্রেষ্ঠ কবিতা। ভালোবাসা হলো দুঃখ, এক ঘরে কবিতা ও নারী।
এলোমেলো পায়ে উদাসীন যাচ্ছিলাম হেঁটে, একটু এগোলেই করিমদের বাসা। দুপুরের ছায়াঢাকা পথে কী জানি কী ভাবছিলাম, মন তো ছিল না এই মনে। আমিও ছিলাম না সে-পথে, হঠাৎ 'টুং' শব্দে রিকশার ঘণ্টা বাজলো, সম্বিতে চেয়ে দেখি রাজকীয় ভঙ্গিমায় বসে আছো তুমি, চোখেমুখে বিরাট বিস্ময় – কী করে অমন সময়ে ওখানে আমি! তখনো বাতাসে বৃষ্টির গন্ধ, আকাশে মেঘেরা উড়ছে দিগ্বিদিক, পথের বুক জুড়ে ছায়াদের নাচানাচি।
‘কেমন আছেন?’ মোহনীয় কিন্নর স্বরে জানতে চেয়ে গাঢ় চোখে তাকিয়ে থাকলে চোখে।
আজও আমি সেই চোখ দেখি, আজও দেখি তেমনি তাকিয়ে আছো তুমি। আমিও স্থির তাকিয়ে তোমার চোখেই একই বিন্দুতে, নিস্পলক। অথচ কতযুগ পেরিয়ে গেল মাঝখানে!
আমি জানি না, কী তোমার বলার ছিল, কিংবা আদৌ কিছু বলার ছিল কিনা। সত্যি বলতে কী, আজও আমি সুনিশ্চিত জানি না, আমাদের মধ্যে প্রেম ছিল কিনা। কেন আমি প্রতিটা নিবিড় বেলায় তোমাকে আজও ভাবি, জানি না; তুমিও এমন করেই আমাকে ভাবো কি কখনো? কিংবা কখনো জানতে চেয়েছ কি, কোথায় আছি, আছি কিনা বেঁচে?
সুজানা, আমাকে মার্জনা করো, আমি তোমার নামটাও ভুলে গেছি, তুমি জানো - 'সুজানা' তোমার নাম নয়, তোমাকে মানুষ ডাকতো ভুল নামে; আর দেখো, কত নিষ্ঠুর তুমি, কত নিষ্ঠুর তব ভালোবাসা, আমার অন্তরে তোমার নামটিও রাখো নি।
সুজানা, এই পৃথিবী ভরে আছে প্রেম-না-পাওয়া, প্রেম-হারানো প্রেমিকদের হাহাকার আর দীর্ঘশ্বাসে। এই পৃথিবীর আলো-জল-বাতাস জুড়ে কান্নার্ত বিষণ্ণতা। চারদিকে উড়ে যায় বক্ষ-বিদীর্ণ করা সকরুণ সুর। অলস দুপুরে, ক্লান্ত বিকেলে, সন্ধ্যায়, গভীর নিশীথে বিরহী প্রেমিকেরা সার বেঁধে বসে পড়ে পাড়ভাঙা নদীর তীরে অবশ দেহ বিছিয়ে, চরাচরের বুক চিরে দূরে, অনেক অনেক দূরে ছড়িয়ে পড়ে তাদের বুকফাটা কান্নার সুর। কী করুণ সেই সুর, আমি একেবারে মিশে যাই, হারিয়ে যাই সেই বিরহী সংঘের সভ্যদের রোদন-ভরা সুরের গহিনে।
ও সুজানা, তুমি এখন কোথায় আছো
এই পৃথিবীর কোন প্রান্তে
কোন লোকালয় কোন নগরে
আমি তা কিছু জানি না
আমি কিছুই জানি না
আজও দেখি শূন্যে ভেসে সামনে এসে দাঁড়ালে
হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দিলে তুমি আমাকে
এরপর ঘুমিয়ে গিয়েছি, কতটা বছর, জানি না
আমি জানি না
আমি কিছুই জানি না
ও সুজানা
তুমি যে তারপর কোথায় হারিয়ে গেলে
পাই নি খুঁজে ঠিকানা তোমার
আমি আজও দাঁড়িয়ে আছি সেখানে
হয়ত একদিন আসবে ফিরে
হাত বাড়িয়ে আমাকে ছুঁয়ে দেবে
ও সুজানা
ও সুজানা, তুমি এখন কোথায় আছো
এই পৃথিবীর কোন প্রান্তে
তুমি এখন কোথায় আছো
এই পৃথিবীতে, নাকি অন্য কোথাও
আমি তা কিছু জানি না
আমি কিছুই জানি না
ও সুজানা
ও সুজানা …
মুখ রচনা ও মুখ-এর সুর সৃষ্টির তারিখ :২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩
অন্তরা রচনা ও অন্তরার সুর সৃষ্টির তারিখ : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
কথা, সুর ও মূল কণ্ঠ : খলিল মাহ্মুদ
এ-আই কভার : সোনারু
গানের লিংক : প্লিজ এখানে ক্লিক করুন - ও সুজানা, তুমি এখন কোথায় আছো?
অথবা নীচের লিংকে ক্লিক করুন।
আমার কণ্ঠে মূল গানটি : প্লিজ এখানে ক্লিক করুন - ও সুজানা, তুমি এখন কোথায় আছো?
অথবা নীচের লিংকে ক্লিক করুন।
ফুটনোট :
আমার স্কুলজীবনের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু আবুল কালাম শের খান, এসএসসি পরীক্ষার সময় যার সাথে আমি এক রুমে থাকতাম, যে জুঁই-সম্পর্কিত ঘটনাবলি পূর্বাপর জানতো, ২২ এপ্রিল ২০২৪ তারিখে আমার বাসায় এসেছিল। সম্ভবত ২০০৭ সালের পর এই প্রথম ওর সাথে দেখা। অন্তর থেকে অনেক কথা অগ্নিলাভার মতো টগবগিয়ে উঠে এলো, এতদিনের জমানো কথাগুলো খইয়ের মতো ফুটছিল দুজনের মুখে। কথায় কথায় হঠাৎ শের খান উচ্চারণ করলো ‘রানু’। আরো দু’বার – ‘রানু’। ‘রানু’। আমি জিজ্ঞাসা করি, রানু কে? শের খান অবাক হয়ে উলটো প্রশ্ন করে, ‘তুই ভুলে গেছিস?’ কয়েকটা সেকেন্ড, তারপর টাশ করে স্মৃতিতে তুমুল ভাস্বর হয়ে উঠলো নামটি। এ নামটি আমি কত খুঁজেছি, অর্থাৎ, এ নামটি আমি কত সহস্রভার, কতভাবে মনে করার চেষ্টা করেছি, কিন্তু মনে করতে পারি নি। শেষ বার কবে এ ‘রানু’ নামটি আমার মনের কুঠরিতে স্থিত ছিল, তারপর কবে তা হারিয়ে গিয়েছিল, আমি বিলকুল টের পাই নি। ২০০৩/৪ সালে আমি ‘অন্তরবাসিনী’ লিখতে শুরু করি; ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসের মূল চরিত্র বা নায়িকাটিই হলো রানু। কিন্তু ঐ সময়ে আমি এ নাম মনে করতে পারি নি। লজ্জার কারণে করিম বা আর কাউকে জিজ্ঞাসাও করি নি। অবশ্য, অন্য কারো মনে যে এ ঘটনা গেঁথে থাকতে পারে, তাও আমি ভাবি নি তখন। আর, দৈবাৎ যদি ‘রানু’ নামটি মনে পড়তোও, নিশ্চিতভাবেই উপন্যাসে এ প্রকৃত নামটি দেয়া হতো না।
রানুকে নিয়ে আমি উপন্যাস লিখেছি ঠিকই, যদিও রানুই গল্পের মূল চরিত্র, কিন্তু বাস্তবে রানুর প্রতি আমার কোনো প্রেম গড়ে ওঠে নি। ঐ ঘটনাটাকে একটা গল্পের প্লট হিসাবেই ব্যবহার করেছি মাত্র।
ওর প্রতি আমার কোনো মোহ বা টান জন্মায় নি বলেই ওর কোনো খোঁজখবরও নেয়া হয় নি কোনোদিন। পথে যেতে যেতে কত মানুষকে পাশ কাটিয়ে যাই, কতজন চলে যায় পাশ দিয়ে, দিন শেষে কারো কথাই মনে থাকে না। রানু হয়ত এমনই একজন পথচারিণী ছিল।
শের খান জানালো, রানু আর বেঁচে নেই। কয়েক বছর আগে মারা গেছে। ক্যান্সার হয়েছিল। আমি ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারি নি, আমার এ গল্পটির মতোই রানু পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেছে।
ফুটনোট লেখার তারিখ : ২২ এপ্রিল ২০২৪
ফুটনোটের মূল লিংক : একদিন আমার 'অন্তরবাসিনী' উপন্যাসের নায়িকাকে দেখতে গেলাম
আগের পোস্ট : সুজানা, তুমি এখন কোথায়?
২| ২০ শে মে, ২০২৫ সকাল ১১:৪৭
অপু তানভীর বলেছেন: আপনার আগের লেখাটা আমি আগেই পড়েছিলাম। আপনার বন্ধু আসলেই ঠিক বলেছিলো। তার সাথে দেখা না হয়ে ভালই হয়েছে। আপনার সেই ১৬ বছরের বালক বয়সের প্রেমিকাকে আপনি যদি ২৭ বছর দেখতেন তাহলে নিশ্চিত হতাশ হতেন। বুকের ভেতরে যে প্রেম লুকিয়ে ছিল তার জন্য সেটা হয়তো নষ্ট হয়ে যেত। দেখা না হওয়ার কারণে এই প্রেম এখনও টিকে থাকার কথা। যদি সেদিন সত্যিই দেখা হত তাহলে হয়তো তাকে নিয়ে আর কোন লেখাও হত না।
তবে একই সাথে এটা ভেবেও আমার মন খারাপ হল যে তাকে নিয়ে লেখা বইটা সে হাতে পেল না। জানতেই পারল না তাকে নিয়ে কেউ বই লিখেছে।
এখানে একটা মুভির কথা মনে পড়ল। বিফোর সান রাইজ নামে একটা ইংরেজি মুভি আছে। এই মুভির ডাইরেক্টর তার নিজের জীবনের কাহিনী থেকে এইমুভিটা বানিয়েছিল। এক রাতে তার দেখা হয় এক মেয়ের সাথে তারপর রাতভর ঘুরে বেরায়। তারপর আলাদা হয়ে যায়। আর কখনো সেই মেয়েটির সাথে তার দেখা হয় নি। এই একই কাহিনী নিয়ে ডাইরেক্টর এই মুভিটা বানায় এই আশায় যে যদি মেয়েটি এই মুভিটা দেখে সেদিনের রাতের কথা মনে করে তার সাথে দেখা করে। কিন্তু পরে জানা যায় যে সেই এই মুভির রিলিজের চার বছর আগেই মেয়েটি একটা সড়ক দূর্ঘনায় মারা গেছে। মেয়েটি কোন দিন জানতেই পারে নি যে তাকে একজন আস্তো একটা মুভি বানিয়ে ফেলেছে।
২১ শে মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৫
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: বিস্তৃত ও চমৎকার কমেন্টের জন্য আগেই ধন্যবাদ নিন প্রিয় অপু তানভীর ভাই।
ফুটনোটের মূল লিংকটা আসলে পুরোটাই একটা গল্প, কোনো সত্য ঘটনা নয়; অর্থাৎ আমি কোনোদিন অযুতিকে বই দিতে তার বাড়িতেও যাই নি, বই দেয়ার কোনো ইচ্ছা পোষণও করি নি। এটা নিয়ে যে একটা গল্প হয়, সেই চেষ্টা আর কী। মূল থিমটা আপনি ঠিকই তুলে ধরেছেন। ১৬ বছর বয়সে দেখা মেয়েটি এখনো আমার চোখে সেই চঞ্চলা মেয়েটিই রয়ে গেছে, এ সত্যটাই আমি ধরে রাখার চেষ্টা করেছি, সেই সাথে গল্পে দুটো রেফারেন্সও টেনেছি - (১) এক প্রেমিকের তার প্রেমিকাকে দেখতে যাওয়ার গল্প (২) সুচিত্রা সেনের আত্মগোপনে থাকার কথা।
এতদিন গল্পটা খুবই সাদামাটা গল্প হিসাবেই ছিল আমার কাছে। কিন্তু গল্পটা তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে আমার জনৈক ক্লাসমেট যখন আমার বাসায় আসে, এবং কথা প্রসঙ্গে যখন জানতে পারি 'রানু' নাম্নী মেয়েটা মারা গেছে ক্যান্সারে। আমার গল্পের শেষেও দেখানো হয়েছে যে, রানু মারা গেছে। গল্পের মতোই বাস্তবেও যে মেয়েটা মারা গেছে, এটাই আমাকে ব্যথিত করেছে।
শুভেচ্ছা থাকলো অপু তানভীর ভাই।
৩| ২০ শে মে, ২০২৫ দুপুর ১২:০১
আহমেদ রুহুল আমিন বলেছেন: নিঃসন্দেহে আপনার রোমান্টিসিজমে আপনার বয়সীদেরকে এক ধরনের নস্টালজিয়ায় নিয়ে যান । আমিও এর ব্যতিক্রম নই । সময় নিয়ে আপনার দেয়া লিঙ্কগুলো ঘেঁটে পড়ার আগ্রহ রইল । ধন্যবাদ ।
২১ শে মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৭
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আপনার কমেন্টে উজ্জীবিত হলাম। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। শুভেচ্ছা।
©somewhere in net ltd.
১|
২০ শে মে, ২০২৫ সকাল ৯:০৮
রাজীব নুর বলেছেন: রানু, আবুল কালাম আর সুজানা।
আপনার অন্তরবাসিনী উপন্যাস টি আমি পড়িনি।
এক কপি দিবেন আমাকে?