নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হাওড়ার শেষ লোকাল যখন মেদিনীপুরে পৌঁছল তখন বেশ রাত হয়ে গেছে। হরিবন্ধুবাবু জানেন এত রাতে অটো-টোটো কিছু পাওয়া যাবে না। হেঁটে হেঁটেই বাড়ি ফিরতে হবে। রিকশা যদি দু-একটা থাকেও তো বেদম টাকা হাঁকবে।
কিন্তু স্টেশন থেকে বেরিয়েই তিনি অবাক হয়ে গেলেন। একটা অটো দাঁড়িয়ে আছে। উরি ব্বাস! এ তো লটারি পাওয়া! মনে হল যেন তার জন্যই অপেক্ষা করছিল। যেই বললেন,"ছোটবাজার যাবে?" উত্তর এল,"উঠে পড়ুন।"
হরিবন্ধুবাবু জানেন,এরা রুটে চলে। অটোতে চড়তে গেলে এদের সঙ্গে আগেই দরদাম করে নেওয়া ভাল। নইলে পৌঁছে দিয়ে এমন টাকা চাইবে যে মাথা ঘুরে যাবে।
--"কত নেবে?"
--"আপনার যা ইচ্ছা দেবেন।"
উত্তর শুনে প্রাণ জুড়িয়ে গেল হরিবন্ধুবাবুর। উঠে পড়লেন।
.
এত জোরে কেউ অটো চালায়?
ছেলেটাকে বললেন,"এত জোরে চালিও না তো বাপু। তাড়া কিছু নেই। একটু আস্তে চালাও।"
অটোচালক যুবক বলল,"আস্তে? আর কয়েক মিনিট তো মাত্র। তারপরেই তো দুজনে ওপরে চলে যাব। ভয় কিসের?"
হরিবন্ধুবাবু চোখ বড় করে বললেন,"কী বলছ হে ছোকরা, দুজনে কোথায় চলে যাব?"
--" বললাম তো ওপরে। সুইসাইড করার জন্য স্টেশনে এসেছিলাম। কিন্তু ট্রেনের সামনে ঝাঁপাতে গিয়েও ঝাঁপাতে পারলাম না। কেমন ভয় ভয় লাগল। তারপর ভাবলাম, বড় রাস্তায় গিয়ে সোজা অটো নিয়ে ট্রাকের তলায় চলে যাব। তাও মনে জোর পাচ্ছিলাম না। তখন ভাবলাম আর একজন যদি থাকে তাহলে বেশ হয়। ভয়টা আর থাকে না। তাই আপনি বেরতেই আপনাকে তুলে নিলাম।"
হরিবন্ধুবাবুর শরীর অবশ হয়ে গেল। ঘাম দিতে শুরু করল। চেঁচিয়ে উঠলেন,"থামাও থামাও বলছি।"
উত্তর এল,"থামাব থামাব। একটা লরি আসুক। ধাক্কা খেয়ে এমনিই থেমে যাবে।"
.
হরিবন্ধু বুঝলেন খুব বড় বিপদ। এখন মাথা গরম করলে চলবে না।
নরম গলায় বললেন,"বাবা কেন তুমি সুইসাইড করতে চাইছ? কী সুন্দর চেহারা তোমার। মনে তো হচ্ছে ভদ্র বাড়ির ছেলে। অটো চালিয়ে সৎ পথে রোজগার করছ। তা মরবে কেন তুমি?"
ছেলেটা বলল,"আপনি বুঝছেন কিন্তু আমি একজনের সঙ্গে প্রেম করি। তার বাবা বুঝছে না। মেয়ের বিয়ে অটোওয়ালার সঙ্গে দেবে না। অন্য ছেলে ঠিক করেছে বিয়ে দেবে বলে।"
হরিবন্ধুবাবু রেগে গেলেন,"এ তো মেয়ের বাপের ভারি অন্যায়। অটো চালায় বলে বিয়ে দেবে না? বেশ ভাল চেহারা তোমার। অপছন্দের তো কিছু নেই। আমি নিজে যাব কাল। মেয়ের বাপের সঙ্গে কথা বলব। তুমি একটা দিন অপেক্ষা করো। তারপর নয়.."
ছেলেটা আরও স্পিড বাড়িয়ে দিয়ে বলল,"না না যা হবে আজই। আজই আমি নিজেকে শেষ করে দেব। আমি সামনে আছি আমি সিওর মরব। আপনি পেছনে আছেন,খুব লাকি হলে হয়তো বেঁচে গেলেও যেতে পারেন।
হরিবন্ধুবাবু কাঁদ কাঁদ গলায় বললেন,"না বাবা একটুও লাকি নয়। এত লটারির টিকিট কেটেছি কোনওদিন দশ টাকাও উঠেনি। আমি কথা দিচ্ছি আমি তোমার ওই প্রেমিকার বাপকে রাজি করাব।"
তারপর নিজের মনেই হাত জড়ো করে জোরে জোরে বললেন,"মা রক্ষাকালী, রক্ষা করো মা।"
ছেলেটা বলল,"আপনি তো রক্ষাকালীর ভক্ত। তাঁর নামে শপথ করে বলুন আমার প্রেমিকার বাবাকে রাজি করাবেন। তবে ভেবে দেখব মরাটা একদিন পেছনো যায় কিনা।"
--"হ্যাঁ হ্যাঁ মা রক্ষাকালীর দিব্যি। আমি মেয়ের বাপকে ঠিক রাজি করাব। আচ্ছা মেয়ের বাপের নামটা বলো আর বাড়ির ঠিকানাটা দাও আমি কালই যাব।"
ছেলেটা বলল,"না এখনই। আপনাকে এখনই গিয়ে মেয়ের বাবাকে রাজি করাতে হবে।।
--"এই রাতে?"
ছেলেটা স্পিড আরও একটু বাড়িয়ে দিল।
হরিবন্ধুবাবু বললেন,"ঠিক আছে ঠিক আছে। এখনই যাব। তা মেয়ের বাপের কী নাম?"
--"শ্রী হরিবন্ধু সমাদ্দার।"
হরিবন্ধুবাবু একটু টলে গেলেন,"এতো.. এতো আমারই নাম!"
--"হ্যাঁ আমি আপনার মেয়ে চন্দ্রার সঙ্গেই প্রেম করি। আপনি রাজি নন আমার সঙ্গে আপনার মেয়ের বিয়ে দিতে। এখন আপনি রাজি হয়ে গেলেই আমি আর সুইসাইড করব না।"
.
মাথায় আগুন জ্বলে গেল হরিবন্ধুবাবুর। বিরাট চক্রান্তের শিকার তিনি। এ তো পুরো ব্ল্যাকমেলিং। তাঁর স্ত্রীর কাছে শুনেছেন, মেয়ে নাকি এক অটোওয়ালার সঙ্গে প্রেম করছে। তিনি যে বেঁচে থাকতে এ বিয়ে দেবেন না তা পরিষ্কার ভাবে জানিয়ে দিয়েছিলেন।
.
হঠাৎ হাসতে শুরু করলেন হরিবন্ধুবাবু। অটোর আওয়াজকে ছাপিয়ে গেল তাঁর হাসি।
হরিবন্ধুবাবু হাসতে হাসতেই বললেন,"উফফ্ এমন ভয় আমি জীবনে পাইনি। এমন প্যাঁচেও কেউ কখনও ফেলতে পারেনি আমায়। তোমার মাথা আছে। চেহারা-পত্তরও খারাপ নয়। ঠিক আছে কথা যখন দিয়েই ফেলেছি তখন আমার মেয়ের সঙ্গে তোমার বিয়ে দেব .."
ছেলেটা রাস্তা থেকে নামিয়ে একদম নর্দমা ঘেঁষে অটো দাঁড় করাল। তারপর পেছনে গিয়ে হরিবন্ধুবাবুর পা ছুঁয়ে প্রণাম করল। হরিবন্ধুবাবু বিড়বিড় করে বললেন,"দীর্ঘজীবী হও.."
(আমার প্রথমদিকের লেখা, প্রায় ৩ বছর আগের।)
৩১ শে মে, ২০১৯ বিকাল ৪:২১
গেছো দাদা বলেছেন: ধন্যবাদ দাদা ।
২| ৩০ শে মে, ২০১৯ ভোর ৪:৪০
মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: বাহ্ চমৎকাৎ লিখেছিলেন।
৩১ শে মে, ২০১৯ বিকাল ৪:২১
গেছো দাদা বলেছেন: ধন্যবাদ ।
৩| ৩০ শে মে, ২০১৯ ভোর ৬:০১
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
সাধু, সাধু,সাধু!!
অনেক চমৎকার লেখা। পড়ে ব্যাপক বিনোদিত হলেম।
৩১ শে মে, ২০১৯ বিকাল ৪:২২
গেছো দাদা বলেছেন: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ।
৪| ৩০ শে মে, ২০১৯ সকাল ৭:১৫
রাজীব নুর বলেছেন: আপনার লেখা পড়ে আরাম পাওয়া যায়।
৩১ শে মে, ২০১৯ বিকাল ৪:২৩
গেছো দাদা বলেছেন: আপনার মন্তব্য পেলে আমারও খুব ভালো লাগে দাদা ।
৫| ৩০ শে মে, ২০১৯ দুপুর ১২:১৪
তারেক_মাহমুদ বলেছেন: বাহ মজা পেলাম,ভাল লিখেছেন।
৬| ৩০ শে মে, ২০১৯ দুপুর ১২:২১
আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: জোসস.... একচোট হাসলাম
৭| ৩০ শে মে, ২০১৯ দুপুর ১:১৬
মনিরা সুলতানা বলেছেন: হাহাহাহাহা
এ ছেলে নিশ্চয়ই এতদিনে এম পি মন্ত্রী হয়ে গেছে।
৮| ৩০ শে মে, ২০১৯ দুপুর ২:৩৪
টারজান০০০০৭ বলেছেন: ধুর ! এতো ভ্যাজাল করা লাগে নাকি ! মাইয়ারে লইয়া ভাইগ্যা গেলেইতো হয় !
তয় ভালো লাগছে !
৯| ৩০ শে মে, ২০১৯ দুপুর ২:৫৮
ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: ভালো রম্য, শুরু বেশ ছিলো
১০| ৩০ শে মে, ২০১৯ বিকাল ৫:০৫
জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: হা হা... বেশ মজা পেয়েছি।
©somewhere in net ltd.
১| ৩০ শে মে, ২০১৯ ভোর ৪:৩৭
জাহিদ অনিক বলেছেন:
হা হা হা হা ! ভালো লিখেছেন।
ছেলেটার বুদ্ধি আছে মাইরি!