নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একটা সময় "দাদা/দিদির বিয়ে" প্রায় একটা উৎসব ছিল যে কোন যৌবনে পা রাখা তরুণ, তরুণীর জন্য। বিশেষ করে গ্রামে বা মফঃস্বলে। আর সেই উৎসব "মহোৎসবে" পরিণত হত যদি দাদার একটি সুন্দরী "ছোট শালি" কিংবা দিদির একটি "তরুণ দেওর" থাকত।
তাহলে তো দাদা বা দিদিটির বিয়ের দিনই আরেকটি বিবাহের বীজ বপন হয়ে যেত। একই বাড়িতে দুই "জা" দুই "বোন", এই গল্প আগে আকছার দেখা যেত। সে সময় অনেকটা গেছে। এখন তো দাদা/দিদির বিয়েতে এমবিএর সেমিস্টারের চাপে থাকা ভাই/বোনটি ছুটিও পায় না। যদিও বা পায়, বেশিরভাগের ততদিনে আড়াইটা প্রেম আর তিনটে ব্রেকআপ হয়ে গেছে। ফলে মন্ডপে কনেপক্ষর সাইডে চেয়ার আলো করে বসে থাকা "দাদার শালি"টিকে দেখে সেই ঘোরলাগা ব্যাপারটা আসে না অনেকক্ষেত্রেই।
শেষ একটা বিয়েবাড়িতে গিয়ে এক প্রায় সমবয়স্ক ভদ্রমহিলার থেকে অ্যাপ্রোচ পেয়েছিলাম "লেটস ডু ইট নাউ অর নেভার"। কলকাতায় আমার এক বন্ধুর দাদার বিয়েতে আমন্ত্রিত ছিলাম মাস ছ'য়েক আগে। লজে বিয়ে হচ্ছিল। নীচের ফ্লোরে আগুনের সামনে যখন বন্ধুটির দাদা ও বৌদি হাতে হাত রাখছিল, ঠিক তখনই লজের খালি ছাদে লিপস্টিকের স্বাদ তেতো না মিষ্টি সেই গবেষণায় গভীরভাবে রত ছিল বন্ধুটি। বৌদির যে বান্ধবীটি ওকে নিজের লিপস্টিক খেতে দিয়ে সাহায্য করছিল গতকাল ফেসবুকে দেখলাম তার বিয়ে হয়ে গেল! বন্ধুকে বললাম আরে সেই মেয়েটা না? বিয়ে করে নিল যে?
উত্তরে বন্ধুটি জানাল - সি ইজ অ্যা গুড কিসার...
তো এই "রাত গয়ি বাত গয়ি"র জমানা ছেড়ে একটু পেছনে হাঁটলে, মনের অনেকটা জায়গা জুড়ে থাকে আমাদের শৈশবের সেই বিয়েবাড়িগুলো। যেখানে ছোটকাকুদের দেখে এসেছি মেজকাকুর শালির জন্য দিওয়ানা হয়ে কবিতা লিখতে। কিংবা দেখে এসেছি পিসিমণিদের রাধা হয়ে যাওয়া...
ফেলে আসা সেই সময়ে বিশেষ করে গ্রামের দিকে যেখানে দুমদাম করে প্রেমে পড়া যেত না। যেখানে দাদার জন্য পাত্রী দেখতে গিয়ে বাড়ির ছোট ছেলেটি নিজের কিছু একটা হারিয়ে আসত হবু বৌদির বাড়িতে। দরজার সামনে হবুবৌদির গলা জড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকা দুটো ছটফটে নূপুর পায়ে, কিংবা কাজল চোখে। ওখান থেকে ফিরে এসে দাদারই মতো তারও দিন গোনা শুরু হত, ২২শে অঘ্রাণ কিংবা ১৪ই ফাগুনের জন্য!
বিয়ের দিন আসত। ছেলেটি দাদার থেকেও বেশি মাঞ্জা দিয়ে বরযাত্রীদের সবার প্রথমে বিজয়ী বীরের মতো হবুবৌদির বাড়িতে পা রাখত। গাড়িতে আসতে আসতে বৌদিরা মজা করত,
-দেখছো বাবুর মাঞ্জা, যেন উনি বিয়ে করবেন।
পাশ থেকে বোন বা দিদি হাসতে হাসতে উত্তর দিত,
- বুঝছো না বৌদি, নতুন বৌদির বোনের জন্যই এই সব।
ছেলেটি মনে মনে রাঙা হয়ে গেলেও গম্ভীর থাকার চেষ্টা করত। বরযাত্রী হয়ে নতুন বৌদির বাড়িতে পা রেখেই ব্যস্ততা দেখাতে শুরু করত। যেন কাজ করার জন্যই বরযাত্রী আসা। যেন বাড়িতে সবচেয়ে কাজের একমাত্র ও। যে ছেলে জল গড়িয়ে খায় না তার হঠাৎ কাজের বহর দেখে হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকত সবাই । আর ছেলেটি? তার চোখ উতলা হয়ে খুঁজে যেত সেই কাজল চোখ দুটোকে...
এরপর কী? এরপর বিয়েতে সবার চোখ ধাঁধিয়ে দিয়ে আসরে অবতীর্ণ হতেন "দাদার শ্যালিকা"! ছেলের যেটুক বাকি ছিল ওখানেই সম্পন্ন। তারপর বিভিন্নভাবে সারারাত ধরে একে অপরকে টিজ। দাদার জুতো চুরি, সেই জুতো উদ্ধারে রামভক্ত হনুমান হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া। প্রথমে প্রচুর ঝগড়া, তারপর দুজনেরই ক্লান্ত হয়ে গিয়ে বন্ধু হয়ে যাওয়া। ঘনিষ্ঠতা বলতে মেয়েটির হাতের কব্জি চেপে ধরা।
উত্তরে ,
-আহ, লাগছে তো! ছাড়ো, তুমি অসুর নাকি!
- হ্যাঁ অসুর, তো?
মেয়েটি হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার কপট চেষ্টা চালাতে থাকত। একটা সময় ছেলেটি হাত ছেড়ে দিত।
বিয়ে শেষ হয়। বরযাত্রী(অপভ্রংশে বজ্জাতি) ফিরে আসে, আসার সময় অনেক চেষ্টা করেও একা দাঁড়িয়ে দুজনে কোনও কথা বলতে পারে না। oppo সেলফি এক্সপার্ট তখন না থাকায় মেয়েটির সঙ্গে ছবি তোলা হয় না। বাড়ি ফিরে এসে আবার অপেক্ষা, তবে এবার হয়ত দু-তরফে। যারা এই অপেক্ষাটুকু করেছে তারা বুক ঠুঁকে বলতেই পারেন, "এক এক দিন অপেক্ষার তুমি কী বুঝবে চাঁদু? তুমি তো মেসেঞ্জারে পিং করে প্রেমে পড়ো। প্রতিটি প্রেমিক প্রেমিকার হৃদয়ের আভ্যন্তরীণ পূর্ণ প্রতিফলন হল এই এক এক দিনের অপেক্ষা।"
সেই খাট ভাঙ্গতে শিখে তাতে ডুবে থাকা নতুন বৌদিটি, যে তখন প্রায় ভুলতেই বসেছে জগৎসংসার, তাকে বারবার মনে করিয়ে দেওয়া "তার একটি বোনও আছে" এবং তার জন্য বৌদির মন খারাপ হওয়া উচিৎ। এক রকম দেওরের ঠেলায় পড়েই নতুন বৌদি মেনে নেয় "সে বোনকে মিস করছে"। কথাটি সেই রাতেই দাদার কানে যায়। ব্যস কেল্লাফতে। সকালেই ভাইয়ের উপর দায়িত্ব পড়ে শ্যালিকাকে নিয়ে আসার।
এরপর কালিদাসের মেঘদূতের মেঘ হয়ে দাদার শ্বশুরবাড়ি ছুটে যাওয়া। চোখের সামনে নিজের প্রেমিকাকে দেখতে পাওয়া। ফেরার পথে ইচ্ছে করে ঘুর পথে বাইক নিয়ে আসা..
প্রথমবার একটি অল্প চেনা ছেলের সঙ্গে দিদির বাড়ির পথে বাইক সওয়ার হয়ে কী বলবে মেয়েটি?ছেলেটিই বা তার উত্তরে মধ্যে কীভাবে মিশিয়ে দেবে প্রেম? সেই প্রেমে পড়া দুটি তরুণ তরুণীর কথোপকথন যদি গানের রূপ পায় তাহলে?
"-কৌন দিসা মে লেকে চলা রে বটুহিয়া/ ঠেহর ঠেহর, ইয়ে সুহানি সি ডগর, যরা দেখন দে, দেখন দে../
-মন ভরমায়ে নেয়না বাঁধে ইয়ে ডগরিয়া, কঁহি গয়ে যো ঠেহর, দিন যায়েগা গুজর/ গাড়ি হাঁকন দে../
-পহলিবার হম নিকলে হ্যায় ঘরসে কিসি অনজানে কে সঙ্গ হো
-অনজানে সে পহচান বড়েগি তো মেহক উঠেগি তেরা অঙ্গ হো
-মহক সে তু কহি বহেক না জানা, না করনা মোহে তঙ্গ...
-তঙ্গ করনে কা তোসে নাতা হ্যায় গুজরিয়া
-কিতনি দূর, অব কিতনি দূর হ্যায়, এ চন্দন তোরা গাঁও হো?
-কিতনা অপনা লগনে লাগে যব কোই বুলায়ে লেকে নাম হো।
-নাম না লে তো কেয়া কহকে বুলায়ে, কয়সে চালায়ে কাম হো?
-সাথী, মিতওবা ইয়া আনাড়ি কহো গোরিয়া..."
(গানটিতে ব্যবহৃত ভোজপুরী শব্দগুলির মানে:
বটুহিয়া - চালক, ঠেহর - দাঁড়াও, সুহানি সি ডগর - রাস্তার সৌন্দর্য্য, যরা দেখন দে - একটু দেখতে দাও, গাড়ি হাঁকন দে - গাড়ি চালাতে দাও, মন ভরমায়ে - আকৃষ্ট করে, নেয়না বাঁধে - চোখ আটকায়,
ডগরিয়া - রাস্তা, অনজানআ- অচেনা, মেহক - সুগন্ধ, তঙ্গ - দুষ্টুমি, গুজরিয়া - আইবুড়ো মেয়ে)
উপরের ভোজপুরী গানটি "নদীয়াকে পার" সিনেমার।
প্রকাশ সাল- ১৯৮২
মহিলা কণ্ঠ - ১৯৭০ এর অসাধারণ এক সঙ্গীত শিল্পী হেমলতা।
পুরুষ কণ্ঠ - জসপাল সিং
সুরকার - রবীন্দ্র জৈন।
সিনেমার গল্প - কেশব প্রসাদ মিশ্রর লেখা "কোহবর কি শরত" উপন্যাস।
অভিনয় - শচীন পিনগাঁওকর, সাধনা সিং।
গানটির লিঙ্ক : https://youtu.be/D61BvxAOxm0
এই সিনেমার আর একটি গান হল,
যব তক পুরে না হো ফেরে সাত, তব তক দুলহিন নেহি দুলহা কী/ করনি হোগি তপস্যা সারি রাত, তব তক দুলহিন নেহি দুলহা কী।
অর্থ - বিয়ের সাতপাক পূর্ণ না হওয়া অবধি প্রেমিকা তোমার নয়। প্রেমিকাকে সম্পূর্ণ রূপে পাওয়ার জন্য আজ সারারাত তোমাকে তপস্যা করতে হবে।
ডিসক্লেমার - নারীবাদীরা রে-রে করে তেড়ে আসবেন না। গানটির ভিডিও দেখুন, কোন সময়ে এই গানটি গাওয়া হচ্ছে এবং কে গাইছে। একটা সময় যখন বিয়েবাড়িতে ডিজের অত্যাচার বা গ্যাংনাম স্টাইল ছিল না। একটি গ্রাম্য বিবাহতে বিয়ের আসরে শালি এবং তার বান্ধবীরা জামাইবাবুর সঙ্গে রসিকতার ছলে এই গান গাইছে। আমি আদ্যোপান্ত গ্রামের ছেলে। আমার শৈশবে কাকু, দাদা, দিদি ও পরিচিতদের যে সব বিয়ে দেখেছি তা অনেকটাই এই গানটি মনে করিয়ে দেয়। সেই সময় বাড়ির শ্যালিকাস্থানীয় মেয়েরা বিয়ে করতে আসা জামাইবাবুর সঙ্গে গানের লড়াই খেলত। বাসরজাগা বলে একটি বিষয় হত, সেখানেও চলত গান বাজনা।
এই গানটিও ঠিক সেরকমই একটি ছবি তুলে ধরে।
এই গানটিও রবীন্দ্র জৈনের সুরে গেয়েছেন শিল্পী হেমলতা।
গানটির লিঙ্ক : https://youtu.be/C5yIJsC4nXg
১৩ ই অক্টোবর, ২০১৯ সকাল ৯:৩২
গেছো দাদা বলেছেন: ধন্যবাদ। ভালো থাকুন সতত: ।
২| ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৯ সকাল ১১:০৯
খায়রুল আহসান বলেছেন: উপভোগ্য রম্য, সেই সাথে স্মৃতি জাগানিয়াও বটে!
১৩ ই অক্টোবর, ২০১৯ দুপুর ২:০৫
গেছো দাদা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ দাদা। সত্যিই এগুলো এখন স্মৃতিই হয়ে গেছে আমাদের।
৩| ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৯ দুপুর ১২:১২
রাজীব নুর বলেছেন: বিয়ে সাদি ব্যাপার গুলোখুব বোরিং। আমার বিরক্ত লাগে।
১৩ ই অক্টোবর, ২০১৯ দুপুর ২:০৮
গেছো দাদা বলেছেন: দাদা যদি অভয় দেন ,তাহলে আপনাকে একটা পরামর্শ দিতে পারি।
৪| ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:২৮
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: ওইসব স্মৃতিকথা মনে পড়লে রোমাঞ্চিত হই।
১৪ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১২:৩৩
গেছো দাদা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ দাদা। স্মৃতি সততই সুখের।
©somewhere in net ltd.
১| ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৯ সকাল ৯:২০
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: সুন্দর পোস্ট।