নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সবার জন্য ভালোবাসা।

গেছো দাদা

গেছো দাদা › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক গল্প।(বাবরি মসজিদ রায়ের সাথে এর কোনো মিল নেই।)

১০ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১:০৪

এক গ্রামে দুটো লোক ছিল। একজনের নাম উনো, অন্যজনের নাম ঝুনো। উনোর ফলোয়ার একদল বাঁদর, যারা নিজেদের 'উনোবাদী' বলে৷ আর ঝুনোর ফলোয়ার একদল পাঁঠা, যারা নিজেদের 'ঝুনোবাদী' বলে৷ এই দুই দলই বেশ ইউনিক, কারণ বাঁদরগুলোর পাঁঠামি সর্বজনবিদিত, এবং পাঁঠাগুলো বাঁদরামিতে ডক্টরেট৷

যাই হোক, তো গ্রামে এক জায়গায় তিন একর জমি ছিল। উনোবাদীদের স্থির বিশ্বাস ছিল, ও জমি উনোর। আর ঝুনোবাদীরা নিশ্চিত জানত, জমিটা ঝুনোরই বটে। তারা বহুদিন আগেই প্যাঁচ পয়জার করে সে জমি দখল করে সেখানে ঝুনোর বাড়ি বানিয়ে নিয়েছিল। উনোবাদীরা তখন সংখ্যায় বেশী হলেও নিজেদের মধ্যে ঝগড়াবিবাদে ব্যস্ত ছিল। হঠাৎ ওয়ান ফাইন মর্নিং উনোবাদীদের টনক নড়ল, যে ওই জমি ঝুনোবাদীদের দখলে চলে গেছে। তারা তখন হুড়দাঙ্গা লাগিয়ে জমির ওপর ঝুনোর যে বাড়িটা ছিল সেইটে ভেঙে দিল। কিন্তু মুশকিল হল, দেশে আদালত বলে একটা ব্যাপার থাকায় বাড়ি ভাঙা যত সহজ হয়েছিল, বানানো তত সহজ হচ্ছিল না৷ মানে ঝুনোর বাড়ি ভাঙা হয়ে গিয়ে থাকলেও একই স্পটে উনোর বাড়ি বানানোর জন্য আদালতের পার্মিশন লাগত৷ আর আদালত উনো বা ঝুনোবাদীদের বিশেষ পাত্তা দেয় না। আদালত একমাত্র গ্রামের মোড়লের কথা আমলে আনে খানিকটা হলেও।

তৎকালীন গ্রামের যে মোড়ল, তার নাম কিংকর্তব্যবিমূঢ়৷ সে আবার ঝুনোবাদীদের সাপোর্ট ছাড়া টিকে থাকতে পারে না বেশীদিন। তাই ওই জমিতে উনোর বাড়ি বানানোর পার্মিশন দেওয়ার কোনো প্রশ্নই উঠছিল না। বরং উল্টে উনোবাদীদের হুড়দাঙ্গাবাজীকে 'ফ্যাসিস্ট' বলে বকে দেওয়া হয়েছিল। উনোবাদীরা এতে চরম রেগে উঠলেও তাদের বিশেষ কিছুই করার ছিল না। কিন্তু ওই, চিরদিন কাহারো সমান নাহি যায়। উনোবাদীরা এই এত্ত রাগ নিয়ে ফ্যা ফ্যা করে ঘুরে বেড়াচ্ছে, এটা নোটিস করে ফেলল একটা লোক, যার নাম প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব৷ সে উনোবাদীদের একত্র করে বোঝাল, যে ওই জমি উনোরই বটে এ নিয়ে কোনো সন্দেহই নেই, এবং ওই জমিতে সে উনোর বাড়ি বানাতে সবরকম সাহায্য করবে যদি তাকে গ্রামের মোড়ল বানাতে পারে উনোবাদীরা। কিংকর্তব্যবিমূঢ়র যেমন ঝুনোবাদীদের সমর্থনের আশ্বাস আছে, তেমনই উনোবাদীদের একত্র সমর্থনের আশ্বাস তাকে দিলেই চলবে।

ব্যাস, আর কী। উনোবাদীরা প্রবল উদ্যম নিয়ে একত্রিত হয়ে স্লোগান-ফোগান দিয়ে একাক্কার করে কিংকর্তব্যবিমূঢ়কে লাথ মেরে প্রত্যুৎপন্নমতিত্বকে গ্রামের মোড়ল বানিয়ে ফেলল। ফেলল তো ফেলল। এবার উনোর বাড়িটা তো বানাতে হবে৷ যে কথা হয়েছিল৷ কিন্তু প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব বেশ ঝানু লোক। সে এটা ভালো করেই বুঝেছিল অনেক আগেই, যে বিনা বাক্যব্যয়ে ওখানে উনোর বাড়ি তুলে দিলে ঝুনোবাদীরা চুপচাপ সেটা মেনে নেবে, এরকমটা খুব পসিবল নয়। ঝুনোবাদীরা সংখ্যায় কম হলেও তাদের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ বিশেষ নেই, এবং তারা খুবই অর্গ্যানাইজড। ফলে এরকম করলে গ্রামে একটা বড়সড় ঝামেলা লাগবে। আদালত তা জানে, ফলে আদালতও কখনোই এর পার্মিশন দেবে না৷ মোড়ল হওয়ার জন্য সে উনোবাদীদের পুড়কি দিয়েছে বটে, কিন্তু ইন রিয়ালিটি তাকে অন্য কায়দা করতে হবে৷

অতঃপর সে গোপনে ঝুনোবাদীদের ডেকে বলল, 'দেখো ভাই, ওই পার্টিক্যুলার জমিতে উনোর বাড়িই হবে, কেউ আটকাতে পারবে না। এখন তো গ্রাম পঞ্চায়েত উনোবাদীদের হাতে, বোঝোই তো। কিন্তু তাতে তোমাদের আ্যকচুয়ালি খচে যাওয়ার তো কারণ নেই কোনো৷ গ্রামের বেশ বর্ধিষ্ণু একটা অঞ্চলে তোমাদের পাঁচ একর জমি দিয়ে দিচ্ছি। ওই জমির চেয়ে দু একর বেশী। ওখানে বেশ বড় করে আবার ঝুনোর বাড়ি বানাও না, আটকাচ্ছে কে? আর ওই জমি নিয়ে ভবিষ্যতে ঝামেলা হওয়ারও স্কোপ রইল না কোনো৷ উনোবাদী পঞ্চায়েতের দেওয়া জমি, আদালতের অনুমোদনে পাচ্ছ। কী, ঠিক আছে তো?' আগেই বলেছি, ঝুনোবাদীরা পাঁঠা হলেও তাদের মধ্যে বাঁদরামি বেশী, পাঁঠামি কম৷ ফলে তারা দেখল, এর চেয়ে লাভজনক প্রস্তাব তারা আর পাবে না। তারা রাজি হয়ে গেল৷

আদালতও রাজি হয়ে গেল এই সবদিক সামলানো প্রস্তাবে৷ ওই তিন একর ডিস্পিউটেড জমি উনোবাদীদের দিয়ে দেওয়া হল, আর ঝুনোবাদীরা পেল পাঁচ একর নতুন জমি। প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব পঞ্চায়েতে সগর্বে ঘোষণা করলেন, 'বলেছিলাম না, বাড়ি ওহি বনায়েঙ্গে? লো বনা লিয়া!' আগেই বলেছি, উনোবাদীরা বাঁদর হলেও তাদের মধ্যে পাঁঠামি বেশী, বাঁদরামি কম। ফলে তারা সুবোধ পাঁঠাদের মতই 'অশ্বত্থামা হত'টুকু শুনে খুর তুলে নাচতে লাগল, 'বনা লিয়া, বনা লিয়া! জয় শ্রী উনো!' 'ইতি গজ' ব্যাপারটা তাদের চিরকালই কনফিউজিং লাগে। আর ঝুনোবাদীরা আগে পাঁচ একরের লোকেশন ইত্যাদি বুঝে নিয়ে তারপর তীব্র ধিক্কার জানিয়ে বলল, 'ছিঃ! ফ্যাসিস্ট উনো মুর্দাবাদ!'

প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব মুচকি হাসলেন। রাজনীতিতে গদি টেঁকসই হয় 'ইতি গজ'র ভরসাতেই, সেটা তাঁর চেয়ে ভালো আর কেই বা জানে।

বিঃ দ্রঃ এই টোটাল কেচ্ছাকেলেংকারী চলাকালীন উনো আর ঝুনো দুজনেই নাক ডেকে ঘুমুচ্ছিল৷ কারণ তাদের কিছুই এসে যায় না এসবে।

(ধর্মের নামে বজ্জাতির তীব্র প্রতিবাদ করছি।)

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ২:৩২

মা.হাসান বলেছেন: 'পুড়কি' শব্দটা এপারে নতুন, আগে ব্যবহার দেখি নি।
ধর্মের কাজ মানুষের সাথে মানুষের মিলন বাড়ানো। এই অঞ্চলের মানুষেরা ধর্ম মানার চেয়ে ধর্মগুরু মানায় বেশি তৎপর বলে সমস্যা। আবহাওয়া খারাপ বলে বাংলাদেশে আজ কোন বড় প্রতিক্রিয়া হয়নি। পুড়কিবাজরা রোববার বা সোমবার গরম বক্তৃতা দেবে বলে মনে হয়।
ধর্মের নামে বজ্জাতি বন্ধ হলে নেতাদের চলে কি করে?

১০ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:১৮

গেছো দাদা বলেছেন: আমাদের পশ্চিমবঙ্গে 'পুড়কি' শব্দটা স্ল্যাং হিসাবে বহুল ব্যবহৃত। আপনার মন্তব্যের জন্য অঅনেক ধন্যবাদ।

২| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:৪০

নীল আকাশ বলেছেন: ধর্ম হলো রাজনীতি এবং ব্যবসার সবচেয়ে ভালোো অস্ত্র!

১০ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:৫২

গেছো দাদা বলেছেন: একদম সত্যি কথা।

৩| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১২:৪৬

ধ্যত্তেরিকাষতড়এএতধ্যত্তেরিকা বলেছেন: স্পর্শকাতর ইস্যূ বলেই রায়টা 'উইন উইন' হলে ভালো হতো। আপনি যেমন সুকৌশলে ব্যালান্স করলেন। কিন্তু ইতিহাসটা বড্ড একপেশে। ঝুনোবাদীদের কান্না কি যৌক্তিক নয়?

১১ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ৮:২১

গেছো দাদা বলেছেন: হ ভাই ... ব্যালান্স টাই আসল কথা !!!

৪| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:১৬

রাজীব নুর বলেছেন: যে কোনো নেশাই খারাপ।
ধর্ম হলো আফিম। এই আফিম থেকে আমাদের মুক্তি নাই।
এই জন্যই আজ এই অবস্থা। মানুষকে আজও আধুনিক হতে দিল না ধর্ম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.