নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পাড়ায় বিয়েবাড়ি। করোনাভাইরাস বিধি মেনে পঞ্চাশ জন নিমন্ত্রিত। ম্যারাপ বেঁধে বাড়িতেই বিয়ে। আমার আর ভজহরিদার ওপর দায়িত্ব পড়েছিল খাবারের জায়গা দেখভালের। মানে সবাই যেন ভরপুর খেতে পারে সেটা দেখা।
.
ব্যাচ বলে কিছু নেই। যে আসছে তাকেই বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে খেতে।
এক মহিলা ব্যাপক সচেতন। মাস্ক নামিয়ে ফিস ফ্রাইয়ে কামড় দিয়েই ফের মাস্ক তুলে দিয়ে ফিস ফ্রাই চিবাচ্ছেন। আবার নামাচ্ছেন আবার তুলছেন। গোলাপি মাস্ক তেল ঝোল মেখে সোনালি হয়ে গেছে।
আবার উল্টো ছবিও আছে। এক খুব বয়স্ক লোক মাস্ক না পরেই এসেছেন। ভজহরিদা তাঁকে জিগ্যেস করলেন, "কী দাদু শরীর ঠিক আছে তো?"
বুড়ো বললেন, "একদম ফাসক্লাস। সান্যাল আমাকে একা নেমন্তন্ন করে খুব ভাল করেছে, বুঝলে? ছেলে-বৌমা থাকলে এখন, 'এটা খেও না ওটা খেও' না করে মটকা গরম করে দিত। অনেক দিন পর শান্তিতে খেতে পারব।"
.
বিয়ে বাড়িতে এক আধজন এমন পাব্লিক থাকবেই, যে কিছু না কিছু নিয়ে অভিযোগ করবে।
এইরকম এক লোক খাওয়া শেষে যেতে যেতে থমকে দাঁড়িয়ে বললেন, "সব আইটেমগুলোই ঠিকঠাক ছিল শুধু পনিরটা খুব একটা গরম ছিল না। এই সময় বুঝতেই পারছেন ঠান্ডা কিছু খাওয়া হেভি রিস্কি। তাই পনিরটা খাইনি।"
ভজহরিদা বললেন, "মিষ্টি? মিষ্টি খেয়েছেন?"
উনি বললেন, "হ্যাঁ তা খেয়েছি খান কতক। ওহ্ কলাকাঁদটা মার্ভেলাস ছিল।"
ভজহরিদা বলল, "বেশ বেশ। মিষ্টিগুলো তাহলে গরমই ছিল!"
লোকটা ভজহরিদার গুগলিতে বোল্ড হয়ে গিয়ে বললেন, "না মানে... মিষ্টি তো ঠান্ডাই ছিল।"
লোকটা চলে যেতে ভজহরিদা বলল, "শালা কবজি ডুবিয়ে খেল আর যাওয়ার সময় ভাবল ঠান্ডা ফান্ডা বলে একটু চুলকে দিয়ে যাই। নিন্দে না করলে কিছু লোকের হজমের প্রবলেম হয়!"
.
নিমন্ত্রিতদের খাওয়া শেষ। বাড়ির লোকেদের সঙ্গে বসে আমরাও খেয়ে নিলাম। খেয়ে নিয়ে বাইরে বেরোলাম। দেখি মলিন পোশাক পরা দুটো ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। বয়স বছর ষোলো-সতেরো হবে।
একটা ছেলে বলল, "কীগো খাবার বাঁচেনি? পাব না কিছু? কদ্দিন ভাল খাবার খাইনি।"
অল্প লোকের জন্য খাবারের আয়োজন। কিছুই তেমন বাঁচেনি।
ভজহরিদা আমাকে বলল, "একটা হাঁড়িতে বিরিয়ানি সরানো ছিল না?"
আমি বললাম, "হ্যাঁ। বাড়ির লোকেরা কাল খাবে বলে আগেই তুলে রেখেছে।"
ভজহরিদা বলল, "দাঁড়া হাঁড়িটা নিয়ে আসি। আজ তো সবাই গলা অবধি খেলো, আর কাল খেয়ে কাজ নেই।"
হাঁড়ি, প্লেট এনে ভজহরিদা এক পাশে জায়গা করে ওদের দুজনকে বসাল। প্লেটে ঢেলে দিল বিরিয়ানি।
.
সান্যালদা, যাঁর মেয়ের বিয়ে, এসে সব দেখে বললেন, "বড় জামাই ভেবেছিল ওই সরিয়ে রাখা বিরিয়ানিটা কাল খাবে। আর তোরা এদের খাইয়ে দিলি?"
ভজহরিদা বলল, "এসে এমন করে চাইল, তাই ভাবলাম খাক। দেখো সবচেয়ে তৃপ্তি করে ওরাই খাচ্ছে কিন্তু!"
বড় জামাইয়ের সরিয়ে রাখা বিরিয়ানি দুই হাভাতেকে খাইয়ে দেওয়ার ফলে বড় জামাইয়ের বাসি বিরিয়ানি খাওয়ার সাধ ঘচাং হয়ে যাওয়ায় সান্যালদা যে খুবই বিরক্ত হয়েছেন সেটা তাঁর আর কোনও কথা না বলে দুম দুম করে চলে যাওয়ায় বোঝা গেল।
আমার খারাপ লাগল। ভজহরিদা নির্বিকার। মুগ্ধ হয়ে ছেলেগুলোর খাওয়া দেখছে আর প্লেট খালি হলেই হাঁড়ি থেকে প্লেটে বিরিয়ানি ঢেলে দিচ্ছে।
.
দুই কিশোর মিলে পরমানন্দে এক হাঁড়ি মানে প্রায় চার-পাঁচজনের বিরিয়ানি সাল্টে দিল।
ওদের খাওয়া আর ওদের খাইয়ে ভজহরিদার উৎফুল্ল মুখটা দেখতে দেখতে আমার মনে হল, পাড়ায় পাড়ায় এখনও আছে ভজহরিদার মতো কিছু বেহায়া, ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো পরোপকারী মানুষ... যারা সমাজকে অবিরত স্যানিটাইজ করে চলেছে স্বার্থপরতা-ভাইরাস থেকে...
৩১ শে আগস্ট, ২০২০ সকাল ১১:১৮
গেছো দাদা বলেছেন: ওকে।ধন্যবাদ।
২| ৩১ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ২:২০
কবিতা পড়ার প্রহর বলেছেন: পরের ধনে পোদ্দারী করেও যদি ভালো কিছু হয় তো ভালো।
৩১ শে আগস্ট, ২০২০ সকাল ১১:১৯
গেছো দাদা বলেছেন: হুমম।
৩| ৩১ শে আগস্ট, ২০২০ সকাল ৮:১৭
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: রম্যের চেয়ে সেটাইজেশন চেতনাটাই ছুঁয়ে গেল
এ সমাজে ভজহরিদাদের বড্ড প্রয়োজন।
স্যানাল সাহেব আর জামাই বাবুরাতো শুধে খেয়েই শান্তিেত নাই। বাসী করে খেতেও সিদ্ধহস্ত!
++++
৩১ শে আগস্ট, ২০২০ দুপুর ২:১৭
গেছো দাদা বলেছেন: //এ সমাজে ভজহরিদাদের বড্ড প্রয়োজন ।// একদম ঠিক কথা।
৪| ৩১ শে আগস্ট, ২০২০ সকাল ১০:০৯
শেরজা তপন বলেছেন: যারা সমাজকে অবিরত স্যানিটাইজ করে চলেছে স্বার্থপরতা-ভাইরাস থেকে...
দারুন লিখেছেন গেছে দাদা। সবখানেই এমন ভজ হরিদ্বার মত মানুষ আছে। তবুও বিলুপ্ত প্রায়
৩১ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৪:০১
গেছো দাদা বলেছেন: আপসোস ..... ভজহরিদের সংখ্যা সত্যিই খুব কম আমাদের সমাজে।
৫| ৩১ শে আগস্ট, ২০২০ সকাল ১১:৩৭
রাজীব নুর বলেছেন: গেছো দাদা শব্দটা কে প্রথম ব্যবহার করেছে বলতে পারেন??
আমি বলে দেই- সুকুমার রায়।
৩১ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৪:০৫
গেছো দাদা বলেছেন: হ্যাঁ, ঐ গেছোদাদা আমার পূর্বপুরুষ ছিলেন।হা হা হা ।
৬| ৩১ শে আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১২:২৩
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
রম্যটি মনপ্রাণ ছুঁয়ে গেল দাদা!!
৩১ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৪:০৯
গেছো দাদা বলেছেন: আপনি আর কবিতা মন্তব্য করেন না কেন? আমার উপর রাগ করেছেন নাকি??
৭| ৩১ শে আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১২:৩৪
নেওয়াজ আলি বলেছেন: সুন্দর উপস্থাপন ।
০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১২:১৬
গেছো দাদা বলেছেন: ধন্যবাদ।
৮| ৩১ শে আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১২:৪৩
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ভজহরিদা চরিত্রটা দারুণ ফুটিয়ে তুলেছেন। সত্যি কথা কী, কিশোর দুটোর উপস্থিতি থেকেই মন খুব কাতর হয়ে গেলো।
লেখাটা ছোট্ট, কিন্তু অসাধারণ।
০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১২:১৮
গেছো দাদা বলেছেন: ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
৯| ৩১ শে আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১২:৪৭
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আরেকটা কথা মেনশন করতে আবার এলাম। লেখাটার স্টাইল ভালো লেগেছে। উত্তম পুরুষে লেখার ক্ষেত্রে লেখকদের দেখা যায় 'আমি'টাকে বড়ো করে দেখাতে, এই রম্যে লেখক 'আমি' খুবই উহ্য বা গৌণ, কিন্তু মহৎ করে তোলা হয়েছে একটা থার্ড পার্সন ভজহরিদাকে, যা লেখকের ঔদার্য বা মাহাত্ম্যকে প্রকাশ করে।
শুভেচ্ছা রইল।
০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১২:২১
গেছো দাদা বলেছেন: আপনার অসাধারন পর্যবেক্ষন ক্ষমতা তারিফযোগ্য। সঠিক ভাবেই ধরতে পেরেছেন।ধন্যবাদ।
১০| ৩১ শে আগস্ট, ২০২০ দুপুর ২:২৬
মা.হাসান বলেছেন: পশ্চিম বাঙলায় কি অনুষ্ঠান করে বিয়ে হচ্ছে এখন?
এদিকের বিয়েতে পনির-কালাকাদ কিছু থাকে না। এপারে বড্ড একঘেয়ে মেনু- পোলাও, মাটন রেজালা, চিকেন রোস্ট-- শেষে ফিরনি বা জর্দা। সাথে বোরহানি আর টিকিয়া। কালে ভদ্রে দু একটা বিয়েছে সব্জি দেখেছি। ওপারে এখনো তাহলে বিয়ের খাওয়াটা ভালো মতোই হয়। শুনেও (পড়েও) শান্তি।
স্যানিটাইজার ভজহরিদাকে প্রনাম।
০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১২:২৫
গেছো দাদা বলেছেন: // পশ্চিম বাঙলায় কি অনুষ্ঠান করে বিয়ে হচ্ছে এখন? //.....অনুষ্ঠান ছাড়া বিয়ে ? এরকম হলে বিয়ের খাওয়াদাওয়া কেমনে সম্ভব ?
১১| ৩১ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৩:৩৮
ৎঁৎঁৎঁ বলেছেন: কী চমৎকার লিখেছেন গেছো দাদা!
ভজহরিদাদের জয় হোক!
০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১২:২৭
গেছো দাদা বলেছেন: // ভজহরিদাদের জয় হোক! // আপনারও জয় হোক মন্তব্য করার জন্য।
১২| ৩১ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৩:৪০
পদ্মপুকুর বলেছেন: সোনাবীজ........ এর সেকেন্ড কমেন্ট পড়ে লজ্জায় নতমুখ হয়ে যাচ্ছি..... আমার সর্বশেষ লেখাটা একটা গল্প এবং সেটা আমিময়!!@@##ঁঁঁঁ
যদিও লিখেছেন রম্য, কিন্তু শেষপর্যন্ত সমাজসচেতনতামূলক হয়ে গেলো। অবশ্য আপনার ইদানিংকার গল্পগুলোতে রম্যকে সাথে নিয়েই শিক্ষামূলক হয়ে যাচ্ছে। সুন্দর লেখায় প্লাস।
০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১২:৩৪
গেছো দাদা বলেছেন: শতফুল বিকশিত হোক। কোনো ফর্ম্যাটের গল্পই খারাপ না। সবটাই পাঠকের ভালবাসার উপর নির্ভর করে।
১৩| ৩১ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৪:৫৮
ইসিয়াক বলেছেন: খুব ভালো লাগলো দাদা।
১৪| ৩১ শে আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৩৫
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: ওহ নো পদ্ম পুকুর, লজ্জার কিছু নেই হে, আমি নিজেও উত্তম পুরুষে লেখা গল্পে নিজেই নায়ক থাকি, আর নায়ককে সুমহান উচ্চতায় নিয়ে যেতে দ্বিধা করি না প্লিজ শেইক হ্যান্ডস
©somewhere in net ltd.
১| ৩১ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১:২০
চাঁদগাজী বলেছেন:
লেখা মোটামুটি ভালো হয়েছে