নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সবার জন্য ভালোবাসা।

গেছো দাদা

গেছো দাদা › বিস্তারিত পোস্টঃ

রম্য : পেঁয়াজী আন্দোলন !!

১০ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ১২:৫৩

বউ শোকে পাথর হয়ে গেছে। আমিও এক রকম তাই।
ঘটনাটা হল এই, সকালে বউ বলল, "তুমি তিন কেজি পেঁয়াজ এনে রাখো। যে ভাবে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে তাতে ঘরে একটু বেশি করে রেখে দেওয়া ভাল।"
.
এখন সত্যি বলতে, পেঁয়াজ কাটার সময়ের থেকেও কেনার সময়ই চোখের জল বেশি পড়ছে। এতই দাম!
কাল আমি আলু আদা-টাদা এনেছি। আজ আবার বাজারে গেলাম পেঁয়াজ আর অন্য কিছু সবজি আনতে।
একটা বড় বাজারের ব্যাগ আছে, সেটাই নিলাম।
বাজারে গিয়ে যার কাছে পেঁয়াজ নিই তাকে তিন কেজি পেঁয়াজ দেওয়ার কথা বললাম।
সে কোনদিন আমাকে বসতে বলে না, আজ একটা টুল এগিয়ে দিয়ে বলল, "বসুন দাদা। খুব ফেরেশ মাল আছে। একদম স্পেশাল মাল।"
আমি তিন কেজি পেঁয়াজ নিয়ে দাম মিটিয়ে দিলাম।
এরপর আমি বাজার থেকে মোচা, হাফ কুমড়ো, ফুলকপি, বাঁধাকপি কিনে ব্যাগ ভরে ফেললাম। তারপর ভারী ব্যাগ নিয়ে ঘরের দিকে হাঁটা দিলাম। কিছুটা যাওয়ার পর আর তেমন ভারী মনে হল না ব্যাগটাকে।
.
বাড়িতে পৌঁছে জামা-কাপড় ছেড়ে, হাত পা ধুচ্ছি, এমন সময় বউ চেঁচাল, "তুমি পেঁয়াজ আনোনি?"
আমি বললাম, "আনিনি মানে? ভাল করে দেখো, ব্যাগের একদম নীচে আছে। তিন কেজি পেঁয়াজ।"
বউ বলল, "তুমি এসে দেখো। বাঁধাকপি মোচা সব আছে কিন্তু একটা পেঁয়াজও নেই।"
দৌড়ে গিয়ে দেখলাম, সত্যিই তাই। ব্যাগে একটাও পেঁয়াজ নেই। আমি ব্যোমকে গেলাম! এত দাম দিয়ে কিনলাম, কিন্তু গেল কোথায়?
ভাল করে দেখতে গিয়ে আবিষ্কার করলাম, ব্যাগের নীচে একটা ফুটো। নিশ্চই ইঁদুরের কাজ। সেই ফুটো দিয়ে সব পেঁয়াজ পড়ে গেছে। বাকি সবজিগুলো সাইজে বড় বলে পড়েনি।
.
বউ ডুকরে উঠল, "এই সময় তিন কেজি পেঁয়াজ রাস্তায় পড়ে গেল? হায় হায় হায়!"
মনটা আমারও খুব খারাপ হয়ে গেল। এই মহার্ঘ পেঁয়াজ পড়ে যাওয়া মানে সকালবেলায় কতগুলো টাকা গচ্চা।
.
কিছুক্ষণ পরে আমার ফোন বেজে উঠল। ভজহরিদা। বলল, "তুই কী করেছিস রে? পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির জন্য রাস্তায় পেঁয়াজ ফেলে প্রতিবাদ জানিয়েছিস? আমাদের লোকাল নিউজ চ্যানেলে দেখাচ্ছে!"
সেকী! আমি প্রতিবাদের জন্য রাস্তায় পেঁয়াজ ফেলেছি!
বললাম, "প্রতিবাদ! আরে আমার ব্যাগটা ছেঁড়া বলে তিন কেজি পেঁয়াজ রাস্তায় পড়ে গেছে কখন, বুঝতেই পারিনি। কতগুলো টাকা লস হল বলে আমার মেজাজ খাট্টা হয়ে আছে আর বলে কীনা প্রতিবাদ?"
ভজহরিদা বলল, "তাহলে সেই সময় কেউ মোবাইলে ছবি তুলে নিউজ চ্যানেলে পাঠিয়ে দিয়েছে।"
আমি স্থানীয় খবরের চ্যানেল খুলে অবাক হয়ে গেলাম।
ওরা ক্যাপশান দিয়েছে, "সাধারণ মানুষ যখন পথে..."
একবার আমার ছবি দেখাচ্ছে, আর একবার রাস্তায় পড়ে থাকা পেঁয়াজের ছবি দেখাচ্ছে। যে পেঁয়াজগুলো আমার ব্যাগ থেকে আমার অজান্তেই পড়ে গেছে। নিউজ অ্যাংকার বলে চলেছে, "সাধারণ মানুষের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেছে। গাঁটের পয়সায় পেঁয়াজ কিনে রাস্তায় ছড়িয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। কোনও ব্যানার নেই, দল নেই। সরকার, আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন???"
খবর দেখে আমার আর বউয়ের মাথা ঘুরতে লাগল।
.
একটু পরে দরজায় জোর ধাক্কা। মাস্ক পরে বাইরে বেরিয়ে দেখি, রীতিমতো ভিড় জমে গেছে আমাদের বাড়ির সামনে। ফটোগ্রাফার, রিপোর্টারে ছয়লাপ।
আমি বেরোতেই সব ক্যামেরা আমার দিকে ঘুরে গেল। প্রশ্নের ঝড় আছড়ে পড়ল।
--"এই ভাবে প্রতিবাদ জানানোর কথাটা কি হঠাৎ করেই আপনার মাথায় এল?"
--"এই প্রতিবাদের পর আপনার কি মনে হয় সরকারের ঘুম ভাঙবে?"
--"আপনি কি ছোটবেলা থেকেই এমন প্রতিবাদী?
--"আপনার আদর্শ কে?"
--"আপনার প্রিয় রঙ কী?"
--"আপনার কি মনে হয় আরও অনেক সাধারণ মানুষ আপানাকে দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে রাস্তায় নামবে?"
--"দেশবাসীর প্রতি আপনি কী মেসেজ দেবেন?"
.
আমার মাথা ঝিম ঝিম করতে লাগল।
পাড়ার সবাই এসে পড়েছে। ভজহরিদা, বগলাকাকু, বুন্টা।
শহরের নাগরিক মঞ্চের কয়েক জন প্রতিনিধি এসেছেন। ভজহরিদা তাঁদের ভিড় কাটিয়ে আমার কাছে নিয়ে এলেন। তাঁরা আমাকে অভিনন্দন জানালেন। একজন বললেন, "আপনি এই শহরের গর্ব। আমরা আপনাকে সংবর্ধনা দিতে চাই। কিন্তু এখন হল'এ সভা করে সংবর্ধনা দেওয়া যাবে না, তাই ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে দেব।"
এই সময় একটা পুলিশের গাড়ি এসে দাঁড়াল। একজন পুলিশ অফিসার নেমে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বললেন, "এই প্যানডেমিকের সময় এক জায়গায় এত ভিড় করবেন না প্লিজ।"
তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, "আপনি রেডি হয়ে নিন, আমাদের সঙ্গে যেতে হবে। জেলাশাসক আপনার সঙ্গে কথা বলবেন।"
হে ভগবান! এবার জেলাশাসক!
.
ডিএম সাহেব আমার সঙ্গে খুবই ভাল ব্যবহার করলেন।
বললেন, "আপনি যেভাবে একাই অহিংস উপায়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন তা অত্যন্ত প্রশংসাযোগ্য। পেঁয়াজের দাম কমানোর জন্য সর্বতোভাবে চেষ্টা চলছে। কেন্দ্র রাজ্য দুই খাদ্য দফতর থেকেই আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে যে অতি শীঘ্র দাম কমে যাবে।"
.
জেলাশাসকের অফিস থেকে বেরিয়ে ভাবলাম, এই সব কিছু হল একটা ইঁদুরের জন্য।
ব্যাগটা না কাটলে...

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ২:০৫

রাজীব নুর বলেছেন: হা হা হা----
সেদিন আমি দুই কেজি কমলা কিনেছিলাম। বাসায় এসে দেখি, ব্যাগের মধ্যে মাত্র চারটা কমলা। বাকি গুলো পড়ে গেছে। পলিথিনের প্যাকেট ছিলো। ভাগ্য খারাপ। পলিথিন ফুটা ছিলো। অবশ্য কোনো নিউজ হয়নি।

১০ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ১১:৪৯

গেছো দাদা বলেছেন: কমলা ? সেতো আরো দামি জিনিস !! আপনে তো অনেক বড়লোক মশাই !! হাহাহা।

২| ১০ ই নভেম্বর, ২০২০ সকাল ৯:৪৩

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: চমৎকার রম্য!

১১ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ১:৩৫

গেছো দাদা বলেছেন: ধন্যবাদ।

৩| ১০ ই নভেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:১২

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: বরাবরের মতোই দারুন রম্য :)

=p~

৪| ১০ ই নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:৪৬

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: অল্পের জন্য বেঁচে গেছেন দাদা।
আয়কর ওয়ালারা ক্যাক করে যে ধরে ফেলেনি তাতেই এই কথা বললাম।
পেঁয়াজ রাস্তায় ছড়ানোর মতো এতো টাকা কোথা থেকে পেলেন সেটার জবাব দিতে পারতেন না। আর ইঁদুরের কথা ওরা বিশ্বাসই করতো না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.