| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মহিউদ্দিন হায়দার
শব্দে আমার আশ্রয়, লেখায় আমার মুক্তি। এখানে আমি লিখি, ভেবে দেখি, আর খুঁজি মানুষের মনের গল্প।

চাঁদাবাজির মুখে অফিসের সম্মান ও সমাজের নিরাপত্তা
দুপুর দুইটা বাজে, লাঞ্চের পর আমি অফিসে আমার চেম্বারে বসে জরুরি একটি ফাইল দেখছিলাম। চারপাশে তখন অফিসের স্বাভাবিক কর্মব্যস্ততা, কেউ কম্পিউটারে কাজ করছে, কেউ ফাইল গুছাচ্ছে। হঠাৎ রিসেপশন দিক থেকে অস্বাভাবিক উচ্চ স্বরে চিৎকার শুনতে পেলাম। প্রথমে ভাবলাম হয়তো কোনো ক্লায়েন্টের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। কিন্তু শব্দে ক্রমশ অস্থিরতা বাড়তে লাগল— তাই নিজেই চেম্বার থেকে বের হয়ে গেলাম।
বেরিয়ে দেখি, আমাদের অফিসের রিসেপশন ডেস্কের সামনে তিনজন হিজরা দাঁড়িয়ে আছে। তারা উচ্চ স্বরে কথা বলছে, মাঝেমধ্যে অশালীন অঙ্গভঙ্গি ও শব্দ উচ্চারণ করছে। তাদের দাবী— অফিস থেকে পনেরো হাজার টাকা দিতে হবে। আমাদের রিসেপশনিস্ট হতবাক অবস্থায় বোঝানোর চেষ্টা করছে যে, অফিস থেকে গত সপ্তাহেই তাদের একটি অনুষ্ঠানের জন্য সাত হাজার টাকা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা সে যুক্তি শুনছে না, বরং আরও ক্ষোভে চেঁচামেচি করছে।
শেষ পর্যন্ত অফিসের কয়েকজন কর্মী মিলে অনেক বুঝিয়ে-সুজিয়ে পাঁচ হাজার টাকায় তাদের “ম্যানেজ” করতে হয়। ঘটনা শেষ হলেও সবার মুখে একটাই প্রশ্ন— “এভাবে আর কতোদিন?”
সত্যি বলতে, আমাদের অফিসপাড়া এখন এই ধরনের হিজরাদের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ। তারা প্রায়ই অফিস, দোকান, এমনকি বাসাবাড়িতেও ঢুকে জোর করে টাকা দাবি করে। তাদের আচরণ এমন যে, কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। কেউ কেউ ভয় পায়, কেউ আবার বিব্রত হয়, কারণ “হিজরাদের সঙ্গে ঝামেলা করা ঠিক নয়” — এমন এক সামাজিক ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি হয়ে গেছে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই অবস্থার সমাধান কোথায়?
আমাদের সমাজে হিজরা সম্প্রদায় বহু বছর ধরে বঞ্চিত ও অবহেলিত। শিক্ষা, কর্মসংস্থান, এমনকি পারিবারিক গ্রহণযোগ্যতাও তাদের ভাগ্যে জোটেনি। ফলে তারা জীবিকার জন্য অনেক সময় রাস্তায় গান-বাজনা বা আশীর্বাদ চেয়ে অর্থ সংগ্রহ করে এসেছে। এটা সমাজের এক ধরনের সহানুভূতির জায়গা থেকে গৃহীত ছিল। কিন্তু এখন সেই জায়গাটা অনেকটাই বদলে গেছে।
আজকের বাস্তবতায় দেখা যাচ্ছে, এই সম্প্রদায়ের একটি অংশ তাদের পরিচয়কে ঢাল বানিয়ে চাঁদাবাজিতে নেমেছে। কেউ কেউ প্রকৃত হিজরা নন, বরং কৃত্রিমভাবে এই বেশ ধারণ করে ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করছে। তাদের আচরণে অশালীনতা, ভয়ভীতি ও সামাজিক বিশৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছে। ফলে মানুষ এখন প্রকৃত হিজরাদের প্রতিও বিরূপ মনোভাব পোষণ করছে।
সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো, প্রশাসনও প্রায়ই এই বিষয়টিতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে অক্ষম বা অনিচ্ছুক। কারণ, হিজরাদের নিয়ে আইন প্রয়োগে একটি অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা কাজ করে— কেউ যেন “মানবাধিকারের বিরুদ্ধে” অবস্থান না নেয়। কিন্তু এই অজুহাতে যদি সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তা, মর্যাদা ও কর্মপরিবেশ বিপন্ন হয়, তাহলে সেটাও তো এক ধরনের অধিকার লঙ্ঘন!
প্রশ্ন হচ্ছে, হিজরাদের অধিকার নিশ্চিত করতে গিয়ে কি আমরা অন্যদের নিরাপত্তা ভুলে যাব?
এই সমস্যার সমাধান শুধুমাত্র সহানুভূতি দিয়ে হবে না। দরকার বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ। হিজরাদের কর্মসংস্থান ও পুনর্বাসনের জন্য সরকার ও এনজিওদের আরও কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। যাদের কাজ করার আগ্রহ আছে, তাদের প্রশিক্ষণ ও কর্মক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। কিন্তু যারা অপরাধমূলক কার্যকলাপে যুক্ত, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে— যেমনটা অন্য যে কোনো নাগরিকের ক্ষেত্রে হয়।
আমাদের অফিসে যে ঘটনাটি ঘটল, সেটি হয়তো ছোট একটি উদাহরণ। কিন্তু এটি সমাজের গভীর একটি অসুস্থ বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি। আজ অফিস, কাল হয়তো স্কুল বা হাসপাতাল— কোথায় নিরাপত্তা? একসময় এই ভয় যদি সাধারণ জীবনের অংশ হয়ে যায়, তাহলে সামাজিক ভারসাম্য ধ্বংস হয়ে যাবে।
আমাদের মনে রাখতে হবে— মানবিকতা মানে দুর্বলতা নয়। হিজরারা যেমন নাগরিক, তেমনি অফিসের কর্মীরাও নাগরিক। এক পক্ষের অধিকার রক্ষায় অন্য পক্ষের মর্যাদা যেন নষ্ট না হয়— এটাই ন্যায়ের মূল কথা।
সমাধান তাই একটাই — সহানুভূতি, দায়িত্ববোধ ও আইনের শাসনের সমন্বয়। হিজরাদের পুনর্বাসন যেমন দরকার, তেমনি চাঁদাবাজির নামে চলমান নৈরাজ্য বন্ধ করাও সমান জরুরি। নইলে এক সময় সমাজের সহানুভূতি হারিয়ে যাবে, আর সেটিই হবে সবচেয়ে বড় ক্ষতি।
২|
২৭ শে অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ১১:৫০
মোগল সম্রাট বলেছেন:
হিজরাদের পুলিশে চাকরি দেয়া হোক । তাইলে তারা ঘুষ খাবেনা। চান্দাবাজিও করবে না। অথবা মেলেটারিতেও নিতে পারে। কোন পিছুটান থাকবে না।
৩|
২৭ শে অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ১১:৫২
নতুন বলেছেন: এটা সমাজের সমস্যা। বর্তমানে অনেকেই হিড়রা সেজে চাদাবাজী করে খায়।
হিজড়াদের কাজ না দিলে তারা কি করে বেচে থাকবে?
হিজড়াদের কাজ দিলেই সমস্যা মিটে যাবে।
তখন যারা চাদাবাজী করতে আসবে তাদের ধরিয়ে দিতে হবে।
৪|
২৭ শে অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ১২:০৭
মেঠোপথ২৩ বলেছেন: আমাদের শৈশব ও তারুন্যে হিজরা আমি বাস্তবে দেখেছি বলে মনেই পড়ে না। কিন্তু এখনতো হিজরা রাস্তা ঘাটে গিজগিজ করছে। এরা কয়জন আসলে হিজরা? চাঁদাবাজি দেশে একটা শিল্পে পরিনত হয়েছে। মানুষ এইসব চাঁদাবাজদের হাতে জিম্মি হয়ে আছে।
৫|
২৭ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ৮:৩২
শেরজা তপন বলেছেন: ওদেরকে সহানুভুতি দেখালে ও ভাল ব্যাবহার করলে ওরা ওনেক নমনীয় হয়। যে দল চাঁদা নিবে তাদের প্রধানের ফোন নম্বর রেখে দিবেন এবং ওয়াদা করিয়ে নিবেন যে, বছরে নির্দিষ্ট একটা চাদার পরিমানের বাইরে দিবেন না। এক এলাকায় সাধারনত একটার বেশী গ্রুপ চাঁদাবাজী করে না। আমার তিনটা উতসবে মানে দুই ঈদ আর নববর্ষে মোট নয় হাজার টাকা দিতে হয়।
©somewhere in net ltd.
১|
২৭ শে অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ১১:১৮
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: এদেরকে কাজ দিতে হবে ।