নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\"জীবন শেখায়, আমি লিখে রাখি। গল্প অনুভূতি আর অভিজ্ঞতার মিশেলে এটাই আমার ছোট্ট জগৎ\" গতানুগতিক সাধারণ মানুষ

মহিউদ্দিন হায়দার

শব্দে আমার আশ্রয়, লেখায় আমার মুক্তি। এখানে আমি লিখি, ভেবে দেখি, আর খুঁজি মানুষের মনের গল্প।

মহিউদ্দিন হায়দার › বিস্তারিত পোস্টঃ

লংউড ফ্লোরিডায় রাত ১:৪২ -- মুনার অস্থিরতার গল্প

১৮ ই নভেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:০৮




লঙউডের রাতটা নরম, ঠান্ডা ব্রিজে ভিজে আছে।
বাড়ির ভেতরে নিঃশব্দ ঘুম।
রাত ১:৪২।

মুনা রান্নাঘরের আলো জ্বেলে বসে আছে। টেবিলের ওপর খোলা নোটবুকে লেখা—
“আগামী ভিডিও: চিকেন পিকাতা - লাইট অথেন্টিক স্টাইল।”
কিন্তু কলম থামছে বারবার।
ভাবনায় ডুবে আছে তার মন।

হঠাৎ ফোনে ম্যাসেজ আসে—ফেসবুকের।
মুনা তাকিয়ে দেখে—
“Are you still awake?”
একজন পরিচিত মানুষ, যাকে সে এড়িয়ে চলে, আবার টানে।

সে মনে মনে বলে—
“আমি কি কখনো ঘুমাই? আমার ভেতর যে ঘুম নেই।”

ফোনটা টেবিলের ওপর উল্টো করে রাখে।

ঠিক তখন পাশের ঘর থেকে তার স্বামীর ঘুমের শব্দ ভেসে আসে।
মুনা ফিসফিস করে—
“তুমি আমার পাশে আছো কিন্তু আমার ভেতর কোথাও নেই।”

তার শৈশবের কথা মনে পড়ে যায়—
বাবার বাড়ি…
অসংখ্য ভাইবোন…
অসংখ্য সম্পর্কের গড়াগড়ি…
গুণী, মেধাবী বাবা—
কিন্তু পরিবার বলতে যা বোঝায়, তা দিতে পারেননি কখনো।

মায়ের কান্না, অশান্ত সন্ধ্যা, অবহেলিত একটা শিশু-মন।
মুনা চাপা স্বরে বলে—
“বাবা, তোমার ভুলের বোঝা আমি আজও বইছি।”

জানালার দিকে তাকায় সে—
লঙউডের রাস্তায় আলো ঝিমিয়ে জ্বলছে।
ঝিঁঝিঁ পোকার মতো জীবনটা, শব্দ আছে—শান্তি নেই।

হঠাৎ মোকাবিলা করা যায় না এমন এক মুহূর্ত আসে।
মুনার মনে হয়, যেন কেউ তাকে পিছন থেকে ডেকে উঠলো—
“তুমি কি সুখী?”

সে নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে—
“আমি কি সত্যিই সুখী?”

তার ভিতর থেকে উত্তর আসে—
“সুখী মানুষ এভাবে রাত জাগে না, মুনা।”

মুনা হাসে—ব্যঙ্গ-হাসি।
“সুখ মানে কী? সঠিক সময়ে রাতের খাবার? দামী গাড়ি? পারিবারিক ছবি?”
না।
তার কাছে সুখ মানে—
কেউ একজন তাকে সত্যিকারের বুঝবে।
তার অভিমান, তার রান্নার নেশা, তার দোটানা, তার ভিতরের খুঁতখুঁতানি—সব বুঝবে।

কিন্তু ঘরের মানুষটা শুধু দায়িত্ব বোঝে।
যত্ন না।
অনুভব না।

হঠাৎ তার স্বামী দরজায় দাঁড়িয়ে বলে—
“এখনো জেগে? আবার ভিডিও বানাবে?”

মুনা শান্ত গলায় বলে—
“হ্যাঁ, কাজ আছো।”

স্বামী আবার বলে—
“তুমি কি একটু বেশিই চিন্তা করো? সব সময় অস্থির লাগে তোমাকে।”

মুনার বুকের ভেতর কাঁপন লাগে।
কিন্তু চুপ থাকে।
কারণ তার স্বামী যেটাকে “অস্থিরতা” বলে,
সেটা আসলে “অপূরণতা।”
এটা সে বোঝে না।

স্বামী ফিরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।
অবহেলা কখনো কখনো দরজার আওয়াজ দিয়েও প্রকাশ পায়।

মুনা আবার জানালার দিকে তাকায়।
দূরে, স্ট্রিটলাইটের নিচে একটা ছায়া।
হয়তো কোনো পথচারী,
হয়তো রাতের সঙ্গী।

সে নিজেকে বলে—
“আমার জীবনও এক ছায়া। কোনো আলো পুরোপুরি আমাকে ছুঁতে পারে না।”

ফোন আবার আলো জ্বালে।
সেই ম্যাসেজ—
“You seem restless tonight.”

মুনা এবার ফোন হাতে তুলে নিয়ে গভীর নিশ্বাস ফেলে।
“হ্যাঁ, আমি অস্থির।
কিন্তু এই অস্থিরতার বিষয়ে কথা বলার মতো মানুষ নেই আমার আশেপাশে।”

সে উত্তর টাইপ করে কিন্তু পাঠায় না।

ঘরের আলো নিভে আসে।
রাত আরও ভারী ঠান্ডা হয়।
মুনা ধীরে ধীরে রান্নাঘরের আলো বন্ধ করে।

হাঁটার সময় তার মন ফিসফিস করে—
“আমি কি কখনো সুখী হবো?”

উত্তর আসে না।
রাতের মতোই নীরব থাকে সবকিছু।

কিন্তু একটাই সত্য থেকে যায়—

মুনার জীবন বাইরে যতটা রঙিন,
ভেতরে ততটাই বিষণ্ণ লঙউডের রাতের মতো—
অন্ধকার, নিঃসঙ্গ, অপূর্ণ।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই নভেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:৩৬

স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: “তুমি আমার পাশে আছো কিন্তু আমার ভেতর কোথাও নেই।”
.....................................................................................
আমার মনের ভিতরে অচিন পাখী
আমি না চিনিলাম
তারে !!!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.