নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শব্দ আমার আশ্রয়, চিন্তা আমার পথ। ইতিহাস, সমাজ আর আত্মপরিচয়ের গভীরে ডুব দিই—সত্যের আলো ছুঁতে। কলমই আমার নিরব প্রতিবাদ, নীরব অভিব্যক্তি।

মুনতাসির রাসেল

আমি তোমাদের মাঝে খুজিয়া ফিরি আমার বিশ্বলোক; নরকে গেলেও হাসিয়া বলিব আমি তোমাদেরই লোক।

মুনতাসির রাসেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

যে আয়না আর প্রতিচ্ছবি রাখে না

২৬ শে মে, ২০২৫ রাত ৮:১৭



আমাদের ভালোবাসা ছিল এক গোপন সন্ধ্যার মতো— জোনাকিরা তখন শব্দহীন কবিতা হয়ে বসত সিঁথির পাশে, হাত ধরলেই হৃদয় জেগে উঠত, বুকের ভেতর গুনগুন করত অনন্ত প্রতিশ্রুতির গান। তুমি তখন আমার দেহে নয়—আমার সত্তার স্পর্শে থেকেছিলে।

সেই ভালোবাসাকে একদিন আমরা ‘অতিরিক্ত’ ভাবলাম, তাকে সময় দিতে গিয়ে মনে হলো, নিজের গুরুত্ব কমিয়ে দিচ্ছি; তোমার অশ্রু তখন আমার কাছে কৌশলের কুহেলিকা, আর তোমার চুপ করে থাকা, এক নির্মম ষড়যন্ত্র!

হঠাৎ করে, না—আস্তে আস্তে, ভালোবাসার জায়গায় এলো হিসাব— কে কতো ভালোবাসল, কে কতো অবহেলা করল, কে ভুল করল, কে আগে ক্ষমা চাইল! ভালোবাসা তখন অঙ্কের খাতায় পরিণত হলো, যেখানে হৃদয়ের তাপমাত্রা মাপা হলো ‘প্রমাণ’ দিয়ে।

সমঝোতার ভাষা হারিয়ে গেল। বাক্যগুলো হলো দাগা, তীর, ক্ষতবিক্ষত তর্ক। তুমি বললে—‘তোমার মতো আমি নিজেকে বিসর্জন দিতে পারি না’, আমি বললাম—‘তুমি কেবল নিজের কথাই ভাবো’। আমরা তখন একে অপরের আয়নায় দাঁড়িয়ে নিজেদের দোষ দেখতাম।

স্বার্থ এসে দাঁড়াল আমাদের মধ্যখানে, যেন নীরব এক দৈত্য, চোখে সিংহের অহংকার, সে কাড়ল আমাদের ক্লান্ত বিকেল, সে গ্রাস করল গভীর রাতের দীর্ঘ আলাপ। তুমি তখন তোমার ফোনে, আমি তখন আমার নীরবতায়।

বিশ্বাস? সে তো নিঃশব্দে চলে গিয়েছিল, একটা বিদায়বেলার শব্দও রেখে যায়নি দরজার কাছে। আমরা ব্যস্ত ছিলাম অভিযোগের অঙ্ক কষতে— কে কতোটা ব্যথা দিয়েছে, কে বেশি ভুল করেছে; সে ফাঁকে বিশ্বাস গলে গিয়েছিল আমাদের মাঝখানের শূন্যে।

তারপর এলো অসম্মান— তুমি আমার কথার ওজন বুঝলে না, আমি তোমার কথাকে ব্যাখ্যা করলাম অবজ্ঞা হিসেবে। ভালোবাসার জায়গায় জমে উঠল অহমিকার পাথর, যেখানে তোমার হাসি হয়ে উঠল দায়, আমার নীরবতা একধরনের প্রতিশোধ।

অযত্ন এসে প্রতিদিনের অভ্যাসে পরিণত হলো— তুমি ভুলে গেলে আমার চোখে কালি জমেছে, আমি জানতে চাইলাম না, তুমি সারাদিন কিছু খেয়েছো কিনা। স্নিগ্ধ স্পর্শের বদলে এলো কাঁটাযুক্ত শব্দ, ভালোবাসার খোঁজে হাঁটতে গিয়ে আমরা হাঁপিয়ে উঠলাম অবহেলায়।

তবু, সম্পর্কটা থেকে গেল অবহেলায়— জমে থাকা ধুলোয় ঢাকা আয়নার মতো, যার প্রতিচ্ছবি একসময় অস্পষ্ট হয়ে পড়ে, তবু কেউ সেটি মুছে ফেলার সাহস করে না।

আমরা আছি, একসাথেই আছি, শুধু ভালোবেসে নেই কাছাকাছি। ভেতরটা শূন্যতার হাহাকার, বাইরে আলো-আঁধারির দোলাচল। আমাদের দুটি শরীর যেন দুইটি দ্বীপ, মাঝখানে অতল এক নদী— যার নাম অনুশোচনা।


মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে মে, ২০২৫ রাত ৮:৩৪

ফেনিক্স বলেছেন:



আপনার পোষ্টগুলোর মাঝে এই কথাগুলো সব সময় বিবিধ বর্ণে ছিলো; আজকে সাদাকালোয় আসল রূপ পেলো।

২৭ শে মে, ২০২৫ বিকাল ৩:১০

মুনতাসির রাসেল বলেছেন: কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা রইল।

২| ২৬ শে মে, ২০২৫ রাত ১০:৫২

জনারণ্যে একজন বলেছেন: @রাসেল, অফলাইনে আপনার এই পোস্টটা পড়ছিলাম। একবার/দু'বার নয় - কয়েকবার। লগইন করার পরেও আবার পড়লাম - মন্ত্রমুগ্ধের মতোই।

কি অদ্ভুত এক সুন্দর এক সূচনা "আমাদের ভালোবাসা ছিল এক গোপন সন্ধ্যার মতো" - এই একটা লাইনই চুম্বকের মতো টেনে নিয়ে গেলো পোস্টের ভিতরে। ভাবনার কতটুকু গভীরতা থাকলে এরকম করে লেখা যায়, জানিনা। প্রতিটা শব্দ, প্রতিটা বাক্য সযত্নে চয়ন করা। বার বার পড়লেও মনে হয় আবারো পড়ি। এবং তা করেছিও।

আপনার জন্য অনেক শুভকামনা থাকলো। অনুরোধ থাকলো, মাঝে মাঝেই এরকম অদ্ভুত সুন্দর কিছু লেখা আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।

২৭ শে মে, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫

মুনতাসির রাসেল বলেছেন: ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা রইল। এত সুন্দর করে বললে কবিতা থেকে বেরুতেই পারব না।

৩| ২৬ শে মে, ২০২৫ রাত ১১:২৩

মেঘবৃষ্টির গল্প বলেছেন: দারুন। গভীরতার ছন্দময় বাক্যবিন্যাস।

২৭ শে মে, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫

মুনতাসির রাসেল বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা রইল!

৪| ২৭ শে মে, ২০২৫ রাত ১২:১৬

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: অসাধারণ লিখেছেন।

২৭ শে মে, ২০২৫ বিকাল ৩:১৬

মুনতাসির রাসেল বলেছেন: কৃতজ্ঞতা ভাই!

৫| ২৭ শে মে, ২০২৫ সকাল ৯:৪৬

রাজীব নুর বলেছেন: দারুন আবেগময়।

৬| ২৭ শে মে, ২০২৫ বিকাল ৩:১৮

মুনতাসির রাসেল বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.