নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
।। ইয়াসপোর নিরন্ন শিবির ।।
................
লেখো এই কথা। লিখে রাখো। সস্তা কালিতে
ততোধিক সস্তা কাগজে: কোনও খাবার দেওয়া হয়নি,
ওরা সবাই মরে গেছে অনাহারে।‘‘সবাই। কতজন মোট?
এটা একটা বিপুল তৃণভূমি। কী পরিমাণ ঘাস বরাদ্দ ছিলো
প্রত্যেকের জন্য?’’ লেখো: আমি জানি না।
ইতিহাস এই কঙ্কালগুলো পূর্ণসংখ্যায় গুনছে।
হাজার একজনকে ধরে নিচ্ছে এক হাজার, যেন
খুচরো একজনের কোনও অস্তিত্বই ছিলো না:
সে একটা কল্পিত ভ্রূণ, ফাঁকা দোলনা,
স্বর-অ... স্বর-আ... ক... খ... গ... না-পড়া কেউ,
যে বাতাসে সে হাসতো, কাঁদতো, বেড়ে উঠতো
ওসব শূন্যতা; যে সিঁড়িপথে সে খেলতে নেমে যেতো বাগানে
সেসবের কোনই মূল্য নেই এই গণনাযজ্ঞে।
আমরা এক তৃণভূমিতে দাঁড়ালাম যেখানে এরা গলিত মাংস
এবং মিথ্যা সাক্ষীর মত নিশ্চুপ হয়ে আছে তৃণভূমি।
রোদ্রৌজ্জ্বল। সবুজ। অদূরেই, একটা বনভূমি
চিবানোর জন্য যাতে আছে কাঠ এবং বাকলের নিচে জল-
যতদূর চোখ যায় দৈনন্দিনের দরকারী খাদ্য-বরাদ্দ
যদি না তুমি অন্ধ হয়ে যাও। মাথার ওপরে, একটা পাখি-
তার প্রাণদায়ী ডানাদ্বয়ের ছায়া
মুছে দিচ্ছে ওদের ঠোঁটগুলো। ওদের চোয়াল খোলা।
দাঁতগুলো কপাটি দিয়েছে আরেক সারি দাঁতের সাথে।
রাত্রিবেলায়, ঝলমলে চাঁদের কাস্তে নেমে এসে
ক্ষেতের গম কাটছে ওদের রুটির জন্য।
ঘন কালো হয়ে ওঠা প্রতিমাগুলো ভেসে উঠছে অগণিত হাত,
আঙুলগুলোয় শূন্য পেয়ালা।
কাঁটাতারের শিকের ওপর দিয়ে
মোড় নিচ্ছে একজন মানুষ।
কন্ঠের সর্বোচ্চ নাদে ওরা গেয়েছিলো পৃথিবীর গান।
‘‘ মোহনীয় সেই গান, কীভাবে যুদ্ধ এসে সরাসরি
তাদের হৃৎপিণ্ডে আঘাত হেনেছিলো।’’ লেখো: কতই না নীরবে।
‘‘হ্যাঁ”।
................
।। তিনটি অনর্থক শব্দ ।।
.................................
যখন ভবিষ্যত কথাটি বলে ফেলি,
উচ্চারণ-কালেই তার প্রথম ধ্বনিটি অতীত হয়ে যায়।
নীরবতা শব্দটি যখন সরবে উচ্চারণ করি,
আমি নীরবতাই ভঙ্গ করি।
কিছুই না এই কথাটি যখন বলা হয়ে যায়,
কিছু একটার জন্ম দিই, না-থাকাটি আর থাকে না।
.................................
।। সম্ভাবনাসমূহ ।।
................
সিনেমাই বেশি পছন্দ আমার।
পছন্দ করি বিড়ালদের।
ভার্তা নদীর দুপারের ওক গাছগুলো।
ডিকেন্সকে দস্তয়ভস্কির চেয়ে বেশি।
মানবতাবাদী নয়
নিজেকে মানবপ্রেমিক বলতে ভালোবাসি।
পছন্দ করি সুইসহ এক কাটিম সুতা থাকুক হাতের কাছেই।
পছন্দ করি সবুজ।
প্রতিটি অঘটনে বুদ্ধিমত্তাকে দায়ী করা উচিতে
এমন দাবী নাকচ করতেই আমার ভালো লাগে।
ব্যতিক্রমগুলোই আমার পছন্দ।
একটু আগে চলে যাওয়াটাই আমার পছন্দের।
ডাক্তারের সাথে অসুখ-বিসুখের বাইরের বিষয়ে
আলাপ করতেই ভালো লাগে বেশি।
পুরনো ধাঁচের অলঙ্করনই আমার পছন্দ।
কবিতা না লিখে হাস্যাষ্পদ হবার চাইতে
লিখে টিটকারীর শিকার হওয়াটাকেই ভালো মনে করি।
প্রতিটি দিবসকে উদযাপনযোগ্যতা দেবো বলে
প্রণয়কালের অস্বস্তিকর দিনগুলোর বার্ষিকী করতে ভালো লাগে।
তেমন নীতিবানকেই অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে থাকি
কোনও প্রতিশ্রুতিই যে দেবে না আমাকে।
ধোঁকা-খাওয়া অদৃষ্ট নয়
হিসাব-নিকাশে স্থিরিকৃত ভবিতব্যই ভালো।
চাঁদ, সূর্য বা তারকা-উদ্ভাসিত রাজপথের পৃথিবীই আমার পৃথিবী।
কোনও একজনের হৃদয়রাজ্য জয় করার চাইতে
পৃথিবীর অগণিত রাজ্য জয়ই আমার অভিপ্রায়।
ক্ষেত্রভেদে আমারও আপত্তি থাকুক এটাই আমি চাই।
শৃঙ্খলার নরক অপেক্ষা বিশৃঙ্খলার জাহান্নামই আমার আরাধ্য।
সংবাদপত্রের পয়লা পাতায় পরীর গল্প আমার ভালো লাগে।
পাতাহীন ফুলের চেয়ে ফুলহীন পাতাই আমার পছন্দ।
অবঙ্কিম লেজের কুকুরগুলোই আমার পছন্দ।
নিজের দুটো ছায়াচ্ছন্ন হলেও উজ্জ্বল চোখই পছন্দ করি।
পছন্দ করি দেরাজগুলো।
এখানে অনুল্লেখিত অন্য অনেক কিছুর চাইতে
ওপরে উল্লেখ করিনি এমন কিছুই আমার অধিতর পছন্দতালিকা।
সংখ্যা হবার জন্য যে ডিজিটগুলো সারিবদ্ধ থাকে
ওগুলোর চেয়ে বিচ্ছিন্ন শূন্যই আমার কাঙ্ক্ষিত।
নক্ষত্রকাল বেঁচে থাকার চেয়ে একটা পতঙ্গের আয়ুষ্কালই আমার কাম্য।
বৃক্ষের কোমলতা নয় কাঠের কাঠিণ্য ছুঁতেই বেশি ভালোবাসি।
আর কতক্ষণ লাগবে? কখন হবে?
এইসব অসহিষ্ণু প্রশ্ন করা থেকে বিরত থাকতে ভালো লাগে।
আমি বরং এমন বিবেচনাই পছন্দশীর্ষে রাখতে চাই যে
প্রতিটি অস্তিত্বের উদ্দিষ্ট থাকবে, কারণ থাকবে।
................
ভিস্লাভা সিম্বোর্স্কা (১৯২৩-২০১২০):
পোল্যান্ডের কবি, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক। ১৯৯৬ সালে কবিতার জন্য সাহিত্যে নোবেল জয়ী।
২| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:৩১
আহসান জামান বলেছেন:
আপনার ইদানিং কাজগুলো আমার খুব ভালো লাগছে; চমৎকার গঠনে তুলে আনছেন এই বাংলা প্রকাশে। অভিনন্দন কবি।
৩| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:৪৫
মোঃ ইসহাক খান বলেছেন: অনুবাদ চমৎকার হয়েছে। অশেষ শুভেচ্ছা জানবেন, সুধী।
©somewhere in net ltd.
১| ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০০
জীবনানন্দদাশের ছায়া বলেছেন: চমৎকার অনুবাদ কবি সম্পর্কে আরো কিছু লিখতেন!