নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শুণ্যতার নিচে পিয়ানো শুনি...

রাজসোহান

প্রিয় অন্ধকার, আমার পুরোনো বন্ধু তুমি...

রাজসোহান › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ আইসোলেটেড হার্ট

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:০৫

আদালতে প্রেমিক - প্রেমিকার মামলা চলছে। কে বাদী পক্ষ আর কে বিবাদী পক্ষ এ নিয়ে আমি নিজেই ধন্ধে আছি। যদিও পুরুষ বলে প্রেমিকের প্রতি আমার সহমর্মিতা আগে থেকেই জন্ম নিয়েছে। আজকে বিচারের শেষদিন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে প্রেমিকা পক্ষই জিতে যাবে। জগতে কীভাবে যেন মেয়েরাই সবচেয়ে বেশী কষ্ট পায় এবং তারাই জিতে যায়।

প্রেমিকা পক্ষের উকিল শেষবারের মতো জেরা করছে প্রেমিককে। পাঠকদের জন্য তাদের জেরাকথন তুলে দিচ্ছি।

উকিল একঃ গত দশ বছরে আপনি রিয়ার সাথে একবারও যোগাযোগ করেছেন?
প্রেমিকঃ না, কিন্তু আমি চেষ্টা করেছি।
উকিল একঃ বাড়তি উত্তর পছন্দ করি না, যা বলছি তার সোজা উত্তর দিবেন, যোগাযোগ করেছেন?
প্রেমিকঃ (বেশ হতাশ কন্ঠে) না!
উকিল একঃ আপনি বলেছেন আপনি যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছেন! কিন্তু সে চেষ্টার ছিটেফোঁটাও কেন রিয়া ম্যাডাম টের পাননি?
প্রেমিকঃ আমি যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি, অনেকবার চেয়েছি, অনেকবার ফোন নাম্বারও নিয়েছি, তার ভার্সিটিতে যাবো বলে মনস্থির করেছি, বাসার সামনে যাবো বলে ভেবেছি।
উকিল একঃ দেখা যাচ্ছে আপনি সবই ভেবেছেন কিন্তু কিছুই করেননি! কেন এটা জানতে পারি?
প্রেমিকঃ দ্বিধায় আর সাহসে কুলায়নি। দুই পরিবার যে নোংরামি নিয়ে আমাদের দুজনের বিচ্ছেদ ঘটিয়েছিলো তার কিছু কিছু আমি জানতাম না, পরে জেনেছি সেও কিছু কিছু জানতোনা। আমার শুধু মনে হচ্ছিলো সে যোগাযোগ করে না, আমি কেন করবো? তবুও আমি অনেকবার যোগাযোগ করার কথা ভেবেছি!
উকিল একঃ মাননীয় আদালত, দেখা যাচ্ছে আমাদের প্রেমিক আসল কথাটা কিছুতেই মুখ ফুটে আনছেন না, উনি অনেকবার ভেবেছেন, ভেবেই আবার ভাবনাটা গিলে খেয়ে ফেলেছেন! কেন? তার কারণ তিনি তখন চুটিয়ে ২/৩ জনের সাথে প্রেম করে যাচ্ছেন! উনি এতোগুলো প্রেম করে যেতে থাকলে কীভাবে রিয়ার কথা মনে থাকবে!

এমন সময় প্রেমিকের উকিল বলে উঠলেন,
উকিল দুইঃ অবজেকশন মাননীয় আদালত,
আদালতঃ অবজেকশন গ্রান্টেড
উকিল দুইঃ আমার মক্কেল ২/৩ জনের সাথে প্রেম চালিয়ে গেলেও তাদের কাওকে তিনি মন থেকে ভালোবাসতে পারেননি, তাঁর মন সেই দশ বছর আগেই রিয়া ম্যাডামের কাছেই পড়েছিলো, তিনি চেষ্টা করেছেন রিয়া ম্যাডামকে ভুলে যেতে কিন্তু পারেননি, আর পারেননি বলেই আজ আবার রিয়া ম্যাডামকে ফিরে পেতে চাইছেন সকল ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে।
উকিল একঃ এখানেই আমার আপত্তি মাননীয় আদালত, তিনি যদি ২/৩ জনের সাথে ভালোবাসার অভিনয় করতে পারেন তাহলে তিনি যে ফের আবার একই অভিনয় রিয়া ম্যাডামের সাথে করবেন না তার গ্যারাণ্টি কোথায়?
উকিল দুইঃ মাননীয় আদালত এখানে আমার বিপরীত পক্ষ একটু বেশীই বুঝে ফেলেছেন, আমার মক্কেল কারও সাথেই অভিনয় করেনি, তিনি চেষ্টা করেছেন কিন্তু পারেননি বলেই তাদের কাছে স্বীকারোক্তি করে ব্রেকাপ ঘটিয়েছেন। আমার মক্কেল যদি অভিনয়ই করতেন তাহলে কি এই ব্রেকাপগুলো ঘটাতেন? আমারতো মনে হয়না আদালত। তিনি যদি অভিনয়ই করতে চাইতেন তাহলে পুরোনো ভালোবাসার কাছে ফিরতে চাইতেন না।

একপর্যায়ে দুই উকিল বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে গেলে আদালত অর্ডার অর্ডার বলে পরিস্থিতি শান্ত করেন। এরপর প্রেমিক পক্ষের উকিল প্রেমিকাকে কিছু প্রশ্ন করার সুযোগ চান। আদালত অনুমতি দেন।

উকিল দুইঃ ম্যাডাম আপনি বলেছেন সাব্বির আপনার সাথে দীর্ঘ দশ বছরে যোগাযোগ করেনি, ঠিক?
রিয়াঃ হ্যাঁ।
উকিল দুইঃ আপনি করেছেন?
রিয়াঃ আমি যতবারই ভেবেছি যোগাযোগ করবো ততবারই সাব্বির একটা না একটা ইন্সিডেন্ট করেছে। একবার যখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছি যোগাযোগ করবো তখনই অর ফেসবুকে ওর গার্লফ্রেণ্ড সম্পর্কিত কিছু একটা দেখে আর যোগাযোগ করিনি।
উকিল দুইঃ তারমানে আপনি বলতে চাচ্ছেন আপনি ভেবেছেন কিন্তু যোগাযোগ করেননি?
রিয়াঃ আমি করতে চেয়েছি কিন্তু পারিনি।
উকিল দুইঃ আমিতো সেটাই বলতে চাচ্ছি যে আপনি যোগাযোগ করেননি, ঠিক?
রিয়াঃ হ্যাঁ।
উকিল দুইঃ আপনি এতোদিন পর্যন্ত সাব্বিরের জন্য অপেক্ষা করছেন কেন? এরমানে কি এই দাঁড়ায় না যে আপনি এখনও তাকে ভালোবাসেন?
রিয়াঃ আমি ওর জন্য অপেক্ষা করছিনা, একটা সময় পর্যন্ত করেছি, এখন আমি নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছি। (কথাগুলো বলার সময় রিয়া খুব স্বাভাবিক। হয়তো দশটি বছরের একাকীত্ব অপেক্ষা তার চারিত্রিক দৃঢ়তা গড়ে দিয়েছে।)
উকিল দুইঃ তারমানে আপনি শীঘ্রই বিয়ে করতে যাচ্ছেন?

এমনসময় প্রেমিকা পক্ষের উকিল অব্জেকশানের আবেদন করে বলে উঠলেন,
- এগুলো খুব ব্যক্তিগত প্রশ্ন হয়ে যাচ্ছে।
উকিল দুই বললেন, "মাননীয় আদালত প্রেম বিষয়টাই ব্যক্তিগত। কিন্তু আদালতে চলে আসলে সেটা আর ব্যক্তিগত থাকেনা।"
আদালত প্রেমিকা পক্ষের উকিলের অবজেকশান বাতিল করে দিলেন।

উকিল দুইঃ তাহলে আপনি শীঘ্রই বিয়ে করতে যাচ্ছেন?
রিয়াঃ এ ব্যাপারে এখনও সিদ্ধান্ত নিইনি। তবে সময় আসুক।
উকিল দুইঃ বিয়েটা কি তাহলে আমার মক্কেলের সাথেই হচ্ছে?
রিয়া রাগ লুকিয়ে বলে উঠলো, "কখনোওই না।"
উকিল দুইঃ কেন নয়?
রিয়াঃ সে যা করেছে, আমি কখনও তাকে ক্ষমা করতে পারবোনা।
উকিল দুইঃ সাব্বির কি আপনার কাছে ক্ষমা চেয়েছে?
রিয়াঃ হ্যাঁ
উকিল দুইঃ কিন্তু আপনি তাকে ক্ষমা করেননি। মাননীয় আদালত আমার জানামতে প্রতিটা মানুষই দ্বিতীয় একটা সুযোগ প্রত্যাশা করে, কিন্তু আমার মক্কেলকে আমার প্রতিপক্ষ কোন সুযোগ দেবার অবকাশ রাখছেন না। যদিও আমার মক্কেল অনেকবারই সুযোগ চেয়েছেন। আমি রিয়া ম্যাডামকে শেষ একটা প্রশ্ন করবো, এরপর আদালত যা বিচার করবে আমি সেটাই মেনে নিবো।

উকিল দুইঃ ম্যাডাম রিয়া, যে প্রশ্নটা দিয়ে আজকের এই বিচার শুরু হয়েছিলো সেটিই আমি শেষবার জিজ্ঞেস করবো একটু ভিন্ন উপায়ে। ভেবে উত্তর দিবেন আশা করি।
রিয়াঃ বলুন।
উকিল দুইঃ গত দশ বছরে আপনি তার সাথে যোগাযোগ করেননি, এবং সাব্বিরও আপনার সাথে যোগাযোগ করেনি ঠিক?
রিয়াঃ হ্যাঁ।
একটু মুচকি হাসি হেসে উকিল দুই বলা শুরু করলেন, "মাননীয় আদালত আমার মক্কেল এবং রিয়া দুই পক্ষই বলেছেন দশ বছরে কেউই পরষ্পরের সাথে যোগাযোগ করেনি। যার দরুণ রিয়ার দৃঢ় ধারণা সাব্বির তাকে পুরোপুরি ভুলে গেছেন। তিনি বারবার সাব্বিরকে দোষারোপ করেছেন যে সে কোনভাবে কোন উপায়ে যোগাযোগ করেনি। তিনি পূর্বের বিচার কার্যদিবসগুলোতে এও বলেছেন, যদি সাব্বির একটাবারের জন্যেও যোগাযোগ করার চেষ্টা করতেন তবে তিনিও ফিরে আসতেন। মাননীয় আদালত এখানেই শুভঙ্করের ফাঁকির সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি। পূর্বের বিচার কার্য দিবসে এটা প্রমাণ হয়েছে যে কিছুদিন আগে কোন একটা সুযোগে সাব্বিরই রিয়ার সাথে সর্বপ্রথম যোগাযোগ করেছে। করেছে কীনা ম্যাডাম? সত্য?
রিয়াঃ হ্যাঁ (পিন পতন আদালতে দীর্ঘশ্বাসটা শোনা গেলো।)
উকিল দুইঃ এই সময়টা কি দশ বছরের মধ্যে ধরা হবেনা? এই সুযোগটুকু রিয়া যদি দশ বছরে সামান্য পরিমাণ দেখাতো তাহলে হয়তো সাব্বির তখনই যোগাযোগ করতো।

দেখুন রিয়া দশ বছরে কেউই যোগাযোগ করেননি কিন্তু এরপরেও সাব্বিরই প্রথম আপনার সাথে যোগাযোগ করেছে, আপনাকে স্যরি বলেছে, একটাবার সুযোগ চেয়েছে সব ঠিক করার জন্য। সাব্বির আপনাকে এও বলেছে, পৃথিবীতে অসম্ভব বলে কিছুই নেই। পূর্ববর্তী দশ বছর আপনারা দুজনেই সাফার করেছেন, চলে যাওয়া দশ বছরের সময়কাল আপনাদের হাতে ছিলোনা। কিন্তু পরবর্তী দশ বছরের সময়কাল আপনাদের হাতে। আপনারা চাইলেই সম্ভব। সাব্বির আপনার কাছে এই সুযোগটুকুই বারবার চাচ্ছে। মানুষ ভুল থেকেই শিক্ষা নেয়, আর যে ভুল থেকে শিক্ষা নিতে পারে ইতিহাস বলে সে খুব ভালো দৃষ্টান্ত রাখতে পারে।

আমি আপনার যুক্তিও মানছি বিপরীতও হতে পারে কিন্তু এই বিপরীতটুকু আপনারা হতে দেবেন কেন? আপনারা দুজনেই যথেষ্ট ম্যাচিউর এখন। একজন ভুল করলে আরেকজন ধরিয়ে দিতে পারবেন, ভালোবাসাতো এভাবেই হয়। অভিমানের দেয়াল তুলে নিজেকে কষ্ট দেবেন আরেকজনকে আবারও ভুল পথে ঠেলে দিবেন এটাতো হয়না। এটা খুব বড় অবিচার হয়ে যায়।

মাননীয় আদালত, আমার আর কিছুই বলার নেই।

আমি আসলে এরপর আদালতের বিচার কি হলো সে অপেক্ষা করতে পারিনি। এমন প্রেমের বিচার কি আদালতে হয়? মেয়েটার ভালোবাসার গভীরতা যেকোন যুবককেই ভেতরে ভেতরে ভেঙে দিবে। দশ বছর অপেক্ষা করেছে সে! এই তীব্র ছুটে চলার যুগে এমন ভালো কয়জন বাসতে পারে?

আর ছেলেটা, এখন সে ফিরতে চাইছে? আজ এতোদিন পর, এতোগুলো বছর পর তাঁর মনে হয়েছে সেই প্রথম প্রেমের কাছে সে বন্দী!

প্রকৃতি মিল মহব্বতের চাইতে ট্র্যাজেডি পছন্দ করে, এই বিচারেও আমি ধরে নিচ্ছি ট্র্যাজেডিই হবে। ছেলেটি মেয়েটির মিলন হবেনা। বাকীটা পাঠক কল্পনা করে নিতে পারেন কেন মিল হবেনা।

অথচ চাইলেই গল্পের সমাপ্তি সুন্দর করা যায়, কিন্তু বাস্তবতা যে গল্পের মতো এতো সুন্দর নয়।

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:১১

প্লিওসিন অথবা গ্লসিয়ার বলেছেন: পুত্তুম প্লাস। B-)

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১:০৪

রাজসোহান বলেছেন: পুত্তুম কমেন্ট :P

২| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:১২

রাফা বলেছেন: বাংলা সিনেমার স্ক্রিপ্ট লেখার শখ আছে নাকি।এই প্রফেসনে কম্পিটিশন এখন নেই বললেই চলে।চেষ্টা করে দেখতে পারেন।ভালো ডিমান্ড আছে কিন্তু সোহান ভাইডি ;)

চলিয়ে যান-ধন্যবাদ,রাজসোহান।

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১:০৫

রাজসোহান বলেছেন: কম্পিটিশনে প্রচুর কাবিল লোকজন আছে ভাই। :P

৩| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১:১১

হাসান মাহবুব বলেছেন: It's u! :O

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১:১৫

রাজসোহান বলেছেন: ;)

৪| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১:২৯

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: বিনোদন

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৩:১৬

রাজসোহান বলেছেন: :| :(

৫| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:২০

বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন: রাফা বলেছেন: বাংলা সিনেমার স্ক্রিপ্ট লেখার শখ আছে নাকি।এই প্রফেসনে কম্পিটিশন এখন নেই বললেই চলে।চেষ্টা করে দেখতে পারেন।ভালো ডিমান্ড আছে কিন্তু সোহান ভাইডি ;)

চলিয়ে যান-ধন্যবাদ,রাজসোহান।

৬| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:১২

দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন: মাননীয় আদালত,

জগতে কীভাবে যেন মেয়েরাই সবচেয়ে বেশী কষ্ট পায় এবং তারাই জিতে যায়।

কীভাবে? :-0

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:১৭

রাজসোহান বলেছেন: জীবন থেকে নেয়া যে!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.