নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফেসবুকে আমি - রিয়াদুল রিয়াদ (শেষ রাতের আঁধার)

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার )

কিছু মানুষ অন্য মানুষকে মুগ্ধ করার অসীম ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়। আর কিছু মানুষের ভিতর এই ক্ষমতা কখনই আসে না। আমি দ্বিতীয় দলের মানুষ। কাউকে মুগ্ধ করার মত কিছু কখনই করতে পারি না। কেউ অনেক সুন্দর গান গায়, আমি শুধু শুনে যাই। কেউ অনেক সুন্দর নাচে, আমি শুধু হাত তালি দিয়ে যাই। কেউ অনেক সুন্দর লেখে, আমি শুধু ভেবে যাই, কী করে এত ভালো লেখে কেউ? আমিও লিখি। তবে তা কাউকে মুগ্ধ করার মত কিছু না। আমার লেখায় আমার ভালোবাসা ছাড়া কিছুই নেই। পড়াশুনা শেষ, বুটেক্স থেকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বের হয়ে চাকরি, বিয়ে, পেশা পরিবর্তন সব হয়েছে। লেখালেখির ধারাবাহিকতায় চারখানা উপন্যাস অমর একুশে বইমেলায় বেরিয়েছে। টুকরো ছায়া টুকরো মায়া (২০১৫) – সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার । একা আলো বাঁকা বিষাদ (২০১৬) – সামাজিক উপন্যাস । মধ্য বৃত্ত (২০১৮) – ডিটেকটিভ সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার । অভিসন্ধি (২০২০) – ক্রাইম থ্রিলার । দেশটাকে ভালোবাসি অনেক। অনেক মায়া কাজ করে। মাঝে মাঝে ভাবি, সব বদলে দিতে পারতাম। স্বপ্নের মত না, বাস্তবের মত একটা দেশ গড়তে পারতাম …………………………

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগল্পঃসব কিছু

০৬ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৯:০৮

- তোর এতো কুরকুরি কেন রে? ঐ মেয়ে যেই জায়গায় খুশি যাক।

- কি সব শব্দ বলিস? কুরকুরি কি জিনিস?

- কুরকুরি মানে ইচ্ছা। অনেক বেশী ইচ্ছা। তুই খারাপ ভাবিস কেন?

- তো কি ভাবব? তুই একটা খারাপ।

- হ্যাঁ আমি তো খারাপই। সব ভাল তোর ঐ টিউ টিউ।

- আবার তুই পিউ কে টিউ টিউ বলতেছিস?

- একশ বার বলব।

- তোর সাথে কথা বলব না আমি।

- তো কার সাথে বলবি? টিউ টিউ এর সাথে?

- আবার? থাম না বৃষ্টি। আমার কষ্ট হচ্ছে।

- কিসের কষ্ট? ঐ মেয়ের মধ্যে আছে কি? এতো কষ্ট পাবার নাই কিছু। বাদাম খাব। বাদাম খাওয়া।

- কিনে খা।

- শয়তান, কিনে খেলে তোর সাথে আসছি কেন?

- চলে যা।

- দিয়ে আয়।

- পারব না।

- না পারলে আমি এখানেই থাকব। তোর কি?





সাইফ একটু ভ্রু কুঁচকে বৃষ্টির দিকে তাকাল। সারাদিন এই মেয়েটা জ্বালায়। সারাক্ষণ পাশে থাকে। এই মেয়ের জন্যই, পিউ এর সাথে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেল। ছাড়াছাড়ি না ঠিক। ছাড়াছাড়ি হয় জামাই বউ এর। ওদের হয়েছে ব্রেক আপ। সেদিন রাতে ফোন দিয়ে কাঁদো কাঁদো গলায় বলে বৃষ্টি, একটু কথা বলবি আজ আমার সাথে? ঘণ্টা দুয়েক?

- দুই ঘণ্টা ধরে তুই কি বলবি?

- আমার আজ অনেক কষ্ট হচ্ছে রে।তোর কথা মনে পড়ছে খুব। তোর সাথে অনেক কথা বলতে ইচ্ছে করছে।

- আমার সাথে না তিন দিন আগেই দেখা হল।

- তাও মনে পড়ছে। বল, ২ ঘণ্টার মধ্যে ফোন রেখে দিবি না? প্লিজ, আমি তোর একমাত্র দোস্ত। আমার কথা রাখবি না?

- আচ্ছা কথা বলব। কিন্তু পিউ যদি কল করে?

- টিউ টিউ কে বলবি, আমার সাথে কথা বলছিলি। মেয়েটা ভাল অনেক। ঠিক বুঝবে।

- আচ্ছা।





কথা বলে অনেকক্ষণ সেদিন। মাঝে পিউ কল করে, ধরে না সাইফ। আসলে রাখতে দেয় না কল বৃষ্টি। বলে, বল না আর কিছুক্ষণ কথা। আমার কষ্ট লাগা যায় নি।





টানা আড়াই ঘণ্টা কথা বলে। এরপর কল করে পিউ কে। পিউ ধরেই জিজ্ঞেস করে, কার সাথে কথা বলছিলে?

- বৃষ্টির সাথে। ওর নাকি খুব কষ্ট হচ্ছিল।

- ওওও তাই? কষ্ট হচ্ছিল। আর সঙ্গ দিলে? তোমাকে বলছি না ঐ মেয়ের সাথে কোন কথা বলবা না? তারপরও কোন সাহসে বলছ? তোমাকে নিয়ে তো আমার সন্দেহ হয়, লুকিয়ে লুকিয়ে দেখাও কর কিনা।

- বৃষ্টি আমার বন্ধু।

- হ্যাঁ তাই বন্ধুর দাম বেশী আমার থেকে তোমার কাছে, তাই না?

- আমি কখন সেটা বললাম?

- সেটা বল নাই। বুঝাইছ। আমাকে আড়াই ঘণ্টা ওয়েটিং এ রেখে, তার সাথে কি বল আমি বুঝি না?

- উল্টাপাল্টা কথা বলবা না।

-ও আচ্ছা। আমার কথা এখন উল্টাপাল্টা লাগছে? আচ্ছা যাও, মিষ্টি মিষ্টি কথা শুন, বৃষ্টির থেকে। কথার ভিতর মধু আছে, খাও গিয়ে তা। আমার সাথে আর যোগাযোগ করবা না। তোমার মত, বাজে ছেলের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। স্টুপিড।





রেখে দেয় পিউ। আর কল ধরে না। একটার পর একটা মেসেজ করে যায়, রিপ্লাই করে না। চার দিনের মধ্যে একবারও কোন খোঁজ নেয় না। রাগ ভাঙানোর চেষ্টায় নানা মেসেজ দেয় সাইফ। কাজ হয় না। প্রতিটা প্রহর, কষ্টের প্রতিটা প্রহর অনন্ত কাল মনে হয়। মনে হয়, বুকের ভিতর বোজা, অনেক ভারী একটা বোজা। এই বোজা বয়ে বেড়ানো সত্যি কষ্টের। সাইফের কষ্ট হচ্ছে, অনেক কষ্ট। পিউ কে হারাতে চায় না সাইফ। সাইফ এর কষ্টে কই বৃষ্টি কষ্ট পাবে। তা না, উল্টা ফাজলামি করতেছে। মন মরা বৃষ্টি হঠাৎ করেই অনেক, হাসি খুশি হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে প্রাণ ফিরে পেয়েছে, অনেক দিনের পর। সাইফ কষ্টে মরে, আর বৃষ্টি বাদাম খাবার আবদার ধরছে।

- বাদাম খাওয়াবি না?

- না।

- আচ্ছা , চল তাহলে আমি তোকে ফুচকা খাওয়াই। নাকি তাও খাবি না?

- খাব না।

- আরে বাবা, একটা মেয়ের জন্য তুই সন্ন্যাসী হয়ে যাবি? তুই কি রাস্তার পোলা, যে অন্য কোন মেয়ে তোর জীবনে আসবে না? উঠ।





সাইফ নিঃশব্দে উঠে দাঁড়াল। বৃষ্টি একটু মুচকি হেসে বলল, চল।





একটা ফুচকার দোকানে সামনা সামনি বসে ফুচকা খাচ্ছে, দুজন। সাইফ আর বৃষ্টি। বার বার কান্না পাচ্ছে সাইফের। পিউ এর জন্য। পিউ এর কথা ভেবে। ফুচকার মধ্যে আস্তে আস্তে কামড় দিয়ে খাচ্ছে। আর পিছনের কথা গুলো ভাবছে। সেই সারারাত কথা বলা, রিকশায় ঘুরে বেড়ানো, হলের সামনে ঘণ্টার পর, ঘণ্টা দাড়িয়ে কথা বলা, ইডেনের সামনে সন্ধ্যার পর হালকা আলোতে পাশাপাশি বসে গল্প করা, কখনও হাতের মাঝে হাত লুকিয়ে ফেলা। কখনও যাত্রী ছাউনিতে দাড়িয়ে বৃষ্টি দেখা। সময় গুলো ভুলবার না। একদম না।

- ঐ খাস না কেন?





বৃষ্টির কথায় তাকাল সাইফ। মেয়েটার ফুচকা খাওয়া অর্ধেক প্লেট শেষ। আর সাইফ মাত্র একটা খেয়েছে।

- খাচ্ছি তো।

- হ্যাঁ খা। আমার সামনে খা।





সাইফ একটা ফুচকা নিয়ে, কামড় দিয়ে অর্ধেক খেল। আর অর্ধেক হাঁতে। বৃষ্টি চিৎকার করে বলে উঠল, ঐ।

- কি হইছে?

- ফুচকা এভাবে খায়?

- কিভাবে?

- ফুচকা খেতে হয়, একেবারে। একবারে একটা মুখে দিবি। নয়ত ফুচকার টেস্ট পাওয়া যায় না।

- আমার মুখে একবারে যায় না। আমি এভাবেই খাই?

- কেন? আমি তোমার গার্লফ্রেন্ড লাগি? লজ্জা পাও আমার সামনে খেতে সোনা?

- কি বলিস এসব, পচা কথা।

- হ্যাঁ আমি বললেই পচা কথা। টিউ টিউ এর সাথে রাত জেগে জেগে কি বলতা, ভাব আমি বুঝি না? রাত বাড়ার সাথে সাথে কথা কোন দিকে যায় জানি আমি। আর আমি কিছু বললেই দোষ।

- ওহ, তুই এতো পচা কথা বলিস কেন? থাম।

- আরও পারি পচা কথা। শুনবি?

- না শুনব না। চুপ কর।

- তাইলে খা ফুচকা খা, আমার সামনে।





সাইফ অনেক কষ্টে মুখ হাঁ করে, পুরোটা মুখের ভিতর ঢুকাল ফুচকা। মুখে দিয়ে, মুখের একটা অদ্ভুত ভঙ্গী করল। তাই দেখে, হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ল বৃষ্টি। আশে পাশে এতো মানুষ সেদিকে খেয়াল নেই। হেসেই যাচ্ছে। আর সাইফ মুখের ভিতর পুরো ফুচকা নিয়ে, বোকার মত তাকিয়ে আছে। হাসি দেখছে, বৃষ্টির হাসি। একটা অবুঝ রকম হাসি। হাসি থামিয়ে বৃষ্টি ঘুরে তাকাল সাইফের দিকে। বলল, পরেরটা খা।

আবারও কষ্ট করে মুখে নিয়ে পুরোটা একবারে খেল সাইফ। আবার হাসল বৃষ্টি। হাসি যেন থামছে না। সাইফেরও বেশ লাগছে, বন্ধুটার হাসি দেখতে। সবচেয়ে কাছের বন্ধুটার হাসি দেখতে।

টাকা দিয়ে ফুচকার দোকানে বৃষ্টি সাইফকে বলল, চল।

সাইফ হাঁটছে বৃষ্টির পাশে। কেন যেন হালকা লাগছে অনেক। সাইফের মনের কষ্ট গুলো একটু একটু করে হারিয়ে যাচ্ছে। সাইফ বলল, তোকে অনেক দিন পর হাঁসতে দেখলাম।

- কারণ আমি অনেক দিন পর খুশি।

- এতো খুশি কেন?

- কারণ জানিনা। তবে খুশি।

- ও।





কারণ জানে বৃষ্টি। ঠিক কারণ জানে। পিউ মেয়েটাকে সহ্য হয় না বৃষ্টির। পিউ আসার পর থেকে বৃষ্টিকে আগের মত সময় দেয় না সাইফ, কথা বলে না, হাসে না, দেখা করে না, কথা শুনে না। কাছের বন্ধুটা অনেক দূরের কেউ হয়ে হয়েছিল। পিউ নেই এখন সাইফের জীবনে, এখন সবটুকু অধিকার সাইফের উপর শুধু বৃষ্টির। ভালবাসার অধিকার, বন্ধুত্বের অধিকার, রাগ অভিমানের অধিকার সব।

- আমাকে একটা বেলি ফুলের মালা কিনে দিবি?

- কি করবি?

- ভাল লাগে।

- দিব না।

- আমি তোকে ফুচকা খাওয়ালাম। পেটুকের মত খেতে পারলি তখন। এখন আমাকে বেলি ফুলের মালা কিনে দিবি। না দিলে এখন যা খাইছিস সব বের করবি। বের কর পেট থেকে।





বলেই পেটের ভিতর একটা গুতা দেয় বৃষ্টি। হেসে উঠে সাইফ।

- আচ্ছা কিনে দিচ্ছি।





এক বাচ্চা মেয়ে বেলি ফুলের মালা বিক্রি করছে। ওর কাছে থেকে কিনেই বৃষ্টির হাঁতে দিল। বৃষ্টি বেশ খুশি, অনেক বেশী খুশি। লেকের পাড়ের রাস্তা ধরে হাঁটছে সাইফ আর বৃষ্টি। পাশের লেকের পানি তেমন একটা পরিষ্কার না। তবুও বাতাসে যে ঢেউ গুলো বইছে, দেখতে বেশ লাগছে। সাইফ ঢেউ দেখছে, লেকের পানির ছোট ছোট ঢেউ। আর বৃষ্টি দেখছে সাইফকে। বুকের ভিতর কেমন যেন লাগছে। আলতো করে বৃষ্টি সাইফের হাত ধরল। সাইফ মুখ ফিরিয়ে বলল, কি হল রে?

- একটা কথা।

- কি? বল।





বৃষ্টি দুই তিন বার ভাবল। কথাটা বলবে কিনা। সাইফের সাথে দেখা করতে আসার আগে, আয়নার সামনে দাড়িয়ে কয়েকবার প্রাকটিস করেছে কথাটা বলার। আয়নার সামনে দাড়িয়ে, বেশ কয়েক বার বলেছে, সাইফ, তুই আমার সব কিছু হবি?

এই কথাটাই বলবে। তবে মুখ দিয়ে বের হল অন্য কথা। সাইফ নীরবতা দেখে বলল, এই পাগলী কি বলবি?

- সাইফ তুই আমার সব কিছু।





কথা পাল্টে গেল। অধিকার চায় নি বৃষ্টি। অধিকার খাটিয়ে নিয়েছে। সাইফকে সব কিছু হতে বলেনি। সাইফ বৃষ্টির সব কিছু বৃষ্টি জানে। সাইফ একটু হেসে বলল, তুই আসলেই পাগলী।

- আর তুই আমার পাগল।





সাইফ জানে, বৃষ্টির জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়া যায় না। বৃষ্টি জানে, সাইফ সব কষ্ট শেষে ঠিকই পাশে থাকবে। বন্ধু হয়ে কিংবা একটু বেশী কিছু হয়ে। বেশী কিছু মানে সব কিছু হয়ে। এই "সব কিছু" মানুষ গুলো, শুধু বন্ধু নয়, শুধু প্রেমিক নয়, বা অন্য কিছু নয়। এরা "সব কিছু "। জীবনে "সব কিছু" মানুষ গুলোকে খুঁজতে একটু সময় লাগে। ভাগ্যবানরা পায় খুঁজে। আর কেউ খুঁজেই বেড়ায়। "সব কিছু" মানুষ গুলো অভিমানী হয়, রাগ করে, হাসে, বন্ধু হয়, ভালবাসে, তবে তখনও হারিয়ে যায় না। সব অবস্থায় পাশে থাকে। সাইফ যেমন বৃষ্টির "সব কিছু", বৃষ্টি সাইফের। চারপাশে বাতাসে যেমন পাশে মধ্যে লেকের পানিতে ঢেউ উঠছে, কখনও আবেগ গুলো সেভাবে নাড়া দেয়। কখনও চুপ থাকে পানি, ঢেউ থাকে না। তবুও কানে কানে ঠিকই বাতাসের সাথে কথা বলে, থেমে থাকা পানি, একটু ঢেউ এর অপেক্ষায়।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৯:২৬

বদিউজ্জামান মিলন বলেছেন: সুন্দর । এ প্লাস।

০৬ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৯:৩২

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: :) ধন্যবাদ। ভাল লাগা মন্তব্যে ।

২| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৫:৩৮

মামুন রশিদ বলেছেন: গল্পটা ভালো লেগেছে ।

০৮ ই এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ২:৩০

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.